চাঁদকুমার বড়াল, কোচবিহার
মামা–ভাগ্নের দেহ মর্গ থেকে এনে দাহ খরচের টাকা জোগাবে কে? এই প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে ডাউয়াগুড়িতে। শব বহনের খরচ, মর্গের খরচ, দাহকার্যের খরচ। সবমিলিয়ে প্রায় ৪০ হাজার টাকা খরচ রয়েছে। এই টাকা কোথা থেকে আসবে, কে দেবেন সেটা নিয়েই চলছে জোর আলোচনা। গ্রামবাসীরা এত টাকা খরচ করতে রাজি নন। ফলে খুনের পর এই বিষয়টি ভাবাচ্ছে প্রশাসনকে। যে ব্যক্তির কোটি টাকার সম্পত্তি রয়েছে, তাঁর দেহ সৎকারে টাকা বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
সোমবার কোচবিহারের ডাউয়াগুড়িতে বিজয়কুমার বৈশ্য এবং তাঁর ভাগ্নে গোপাল রায়ের দেহ উদ্ধার হয়। এই ঘটনায় পলাতক নিহত বিজয়ের ছেলে প্রণব। ঘটনায় মূল অভিযুক্ত সে। জেলা পুলিশ সুপার দ্যুতিমান ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, প্রণবের খোঁজ চলছে। ঘটনা সামনে আসার ২৪ ঘণ্টা পরও থমথমে গোটা গ্রাম। এখানে ওখানে জটলা। গতকালই গ্রামের রাস্তায় অতিরিক্ত আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকালেও সেই আলো নেভেনি। মামা–ভাগ্নের খুনের অভিঘাত সামলে গ্রামবাসীরা এখন দেহ সৎকার নিয়েই বেশি আলোচনা করছেন।
স্থানীয় যুবক ভাস্কর বৈশ্য বলেন, ‘দেহ দু’টি সৎকার করতে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা খরচ রয়েছে। দু’টো অ্যাম্বুল্যান্স করে দেহ মর্গে গিয়েছে। তার জন্য ১২ হাজার টাকা ভাড়া বাকি রয়েছে। এরপর ময়নাতদন্তের জন্য ডোমকে টাকা দিতে হবে। দেহ নিয়ে আসতে একটা খরচ রয়েছে। তারপর সৎকারের খরচা তো আছেই। এত টাকা কোথা থেকে আসবে সেটা নিয়ে সকলেই আলোচনা করেছেন।’
এর পাশাপাশি এই দুই দেহ কার হাতে তুলে দেওয়া হবে, তা নিয়েও প্রশ্নচিহ্ন থাকছে। প্রশাসন সূত্রে খবর, বিজয়–গোপালের দেহ ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। দু’টি দেহই মর্গে রয়েছে। এখনও পর্যন্ত মৃতদের কোনও আত্মীয়র খোঁজ পাওয়া যায়নি। সরকারি নিয়মে দাবিদারহীন মৃতদেহ এক সপ্তাহ মর্গে রেখে দাহ করে দেওয়া হয়।
এদিকে গ্রামবাসীরা গোপালের মৃত্যুতেই আফসোস করছেন। প্রণবের এই পিসতোতো দাদা খুবই সাদাসিধে ছিল বলে জানান স্থানীয়রা। সবার সঙ্গেই খুব ভালো ভাবে মিশতেন। উল্টোদিকে বিজয়ের ব্যবহার রুক্ষ ছিল বলে অভিযোগ। তাই তাঁর খুন হওয়ায় খুব একটা হাহুতাশ নেই গ্রামে। প্রণবদের বাড়ি এখন খাঁ খাঁ করছে। তাদের বাড়ির চারটি গোরু গ্রামেরই এক বাসিন্দাকে দেখাশোনার জন্য দেওয়া হয়েছে। বাড়িতে গোলা ভর্তি ধান পড়ে রয়েছে। রয়েছে বিশাল কলাবাগানও। একঝলক দেখলেই বোঝা যায়, স্বচ্ছল পরিবার। অথচ, সেই পরিবারের খুন হওয়া সদস্যদের সৎকারে টাকার বিষয়টিই মুখ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।