• পশ্চিমবঙ্গে জেল থেকে মুক্ত ১২ বাংলাদেশি মৎস্যজীবী
    এই সময় | ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪
  • এই সময়, কাকদ্বীপ: বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার নিয়ে উদ্বিগ্ন ভারত সরকার, এ ব্যাপারে নয়াদিল্লির তরফে উদ্বেগ জানিয়ে ঢাকাকে বার্তাও দেওয়া হয়েছে। ভারতের সাধারণ মানুষও সরব বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপরে নিপীড়নের বিভিন্ন ঘটনায়। উল্টো দিকে, বাংলাদেশের কোনও কোনও জায়গায় ভারত–বিরোধী স্বরও এখন বেশ চড়া।

    দু’দেশের সম্পর্কে যখন এমন টানাপড়েন চলছে, সেই সময়েই ডায়মন্ড হারবার সাব–জেল থেকে মঙ্গলবার মুক্তি দেওয়া হলো বাংলাদেশের ১২ জন মৎস্যজীবীকে। ট্রলার উল্টে যাওয়ায় বাংলাদেশের জলসীমান্ত পেরিয়ে ভারতে ঢুকে পড়া ও পারের ওই মৎস্যজীবীরা ১৪ সেপ্টেম্বর দক্ষিণ ২৪ পরগনার পাথরপ্রতিমায় এসে পৌঁছন।

    এ দিন তাঁদের জেলা মৎস্য দপ্তরের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। তাঁরা যাতে নিজেদের দেশে ফিরে যেতে পারেন, সেই প্রক্রিয়াও এ দিন শুরু হয়ে গেল। অস্থির পরিস্থিতির মধ্যে ভারতের তরফে এ ভাবে বাংলাদেশকে মৈত্রীর ও সদর্থক বার্তা দেওয়া হলো বলে কূটনৈতিক মহলের অনেকেই মনে করছেন।

    কিছু দিন আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশের যে মৎস্যজীবীরা এ দেশের জেলগুলোয় আটকে রয়েছেন, তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হবে। আর যে ভারতীয় মৎস্যজীবীরা ও পারে আটকে, বাংলাদেশ তাঁদের ছেড়ে দেবে। ডায়মন্ড হারবার সাব–জেলে এতদিন বন্দি বাংলাদেশের ১২ জন মৎস্যজীবীর বিরুদ্ধে ফরেনার্স অ্যাক্ট–এ মামলা হয়েছিল।

    তবে জেল থেকে মুক্তির অর্থ, তাঁদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সরকার প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। প্রশাসন সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় সরকার ও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আলোচনার পরিণামে এ দিন ওই ১২ জনকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।

    মঙ্গলবার সুন্দরবন পুলিশ জেলার পুলিশ সুপার কোটেশ্বর রাও নলাভাট বলেন, ‘আপাতত ওই মৎস্যজীবীদের সবাইকে কাকদ্বীপে রাখা হয়েছে। সেখানেই তাঁদের থাকা–খাওয়া ও নিরাপত্তার সব রকম বন্দোবস্ত করেছে প্রশাসন।’ এসপি–র সংযোজন, ‘রাজ্য সরকারের পরবর্তী নির্দেশ পেলে ওঁদের সীমান্তে নিয়ে গিয়ে বাংলাদেশ প্রশাসনের হাতে তুলে দেওয়া হবে।’

    প্রশাসন সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশ আসার পরে রাজ্য স্বরাষ্ট্র দপ্তর দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার পুলিশ–প্রশাসনকে এ ব্যাপারে নির্দেশ দেবে। সেই মতো জেলা পুলিশ–প্রশাসন ওই বাংলাদেশি মৎস্যজীবীদের তুলে দেবে ভারতীয় উপকূলরক্ষী বাহিনীর হাতে। তার পর ভারতীয় উপকূলরক্ষী বাহিনী এ ধরনের বিষয়ে দু’দেশের মধ্যে যে চুক্তি ও আইন আছে, তা মেনে ওই মৎস্যজীবীদের তুলে দেবে বাংলাদেশ প্রশাসনের হাতে।

    বাংলাদেশের ওই ১২ জন মৎস্যজীবীর ক্ষেত্রে ঠিক কী হয়েছিল?

    প্রশাসন সূত্রে জানা দিয়েছে, বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে এসে উত্তাল সমুদ্রের ঢেউয়ে উল্টে যায় বাংলাদেশি মৎস্যজীবীদের ট্রলারটি। ওই ট্রলারের ১২ জন মৎস্যজীবীকে ভারতীয় জল সীমান্তের ভিতরে, সুন্দরবনের কেঁদুয়া দ্বীপের কাছে উত্তাল সমুদ্রে ভাসতে দেখে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন এ পারের ট্রলারে থাকা মৎস্যজীবীরা।

    বিপন্ন বাংলাদেশি মৎস্যজীবীদের প্রত্যেককে উদ্ধার করে ভারতীয় মৎস্যজীবীরা নিজেদের ট্রলারে তাঁদের তুলে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পাশাপাশি খাবারের ব্যবস্থা করেন। ১৪ সেপ্টেম্বর বিকেলে তাঁদের নিয়ে আসা হয় পাথরপ্রতিমায়। পাথরপ্রতিমা থানার পুলিশ বাংলাদেশের ওই মৎস্যজীবীদের নিজেদের হেফাজতে নিয়ে কাকদ্বীপ মহকুমা আদালতে হাজির করায়। তার পর আদালতের নির্দেশে ডায়মন্ড হারবার উপ–সংশোধনাগারে বন্দি ছিলেন তাঁরা।

    সুন্দরবন সামুদ্রিক মৎস্যজীবী শ্রমিক ইউনিয়নের সম্পাদক সতীনাথ পাত্র এ দিন বলেন, ‘বাংলাদেশে বন্দি পশ্চিমবঙ্গের ৯৫ জন মৎস্যজীবী। মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে বাংলাদেশের জেল থেকে ভারতীয় মৎস্যজীবীদের মুক্তি দেওয়া এবং তাঁদের এ দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।’

  • Link to this news (এই সময়)