এই সময়, ডায়মন্ড হারবার: কখনও ভালো সময় কাটিয়েছেন তাঁরা। আবার কখনও ভয়ঙ্কর সময় গিয়েছে। পথে দু’বার উল্টে গিয়েছিল বোটও। কিন্তু তবু হার মানেননি বিএসএফের মহিলা জওয়ানরা। বোট সোজা করে ফের পাড়ি দিয়েছেন গন্তব্যে। জলপথে জলজ প্রাণীর মুখোমুখিও হতে হয়েছে তাঁদের। তবে ভয় নয়, তাঁদের বেশ ভালোই লেগেছে সেই দৃশ্য। এমন নানা অভিজ্ঞতার কথা জানালেন বিএসএফের মহিলা জওয়ানরা।
নারী সশক্তিকরণ ও গঙ্গা নদীকে দূষণমুক্ত করার জন্য গত ২ নভেম্বর গঙ্গোত্রী থেকে র্যাফ্টিং শুরু করেছিলেন বিএসএফ-এর মহিলা জওয়ানরা। দীর্ঘ ২৫০০ কিমি পাড়ি দিয়ে গত ২২ ডিসেম্বর মহিলা জওয়ানদের টিম পৌঁছয় গঙ্গাসাগরে। বিএসএফ-এর উদ্যোগে এবং ন্যাশনাল মিশন ফর ক্লিন গঙ্গা-এর সহযোগিতায় আয়োজিত এই র্যাফ্টিংয়ের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘোষণা করা হয় মঙ্গলবার। গঙ্গার উৎস থেকে মোহনা পর্যন্ত এই দীর্ঘ যাত্রার পর এ দিন ডায়মন্ড হারবার কেল্লার মাঠে আয়োজিত সমাপ্তি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
এ দিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিএসএফের ডিজি দলজিৎ সিং চৌধুরী–সহ অন্যান্য আধিকারিকরা। বিএসএফের কনস্টেবল সুস্মিতা চৌধুরী বলেন, ‘এই অভিযান বিএসএফ এবং নমমি গঙ্গে ন্যাশনাল মিশন ফর ক্লিন গঙ্গার একটা যৌথ মিলিত প্রয়াস। ৫৩ দিনে গঙ্গাসাগরে এসে আমরা যাত্রা শেষ করি। কুড়ি জন মহিলা র্যাফ্টিং করেছি। দু’জন সাব ইন্সপেক্টর এবং ১৮ জন কনস্টেবল এই অভিযানে অংশ নিয়েছিলাম।’
জলপথের অভিজ্ঞতা বলতে গিয়ে সুস্মিতা বলেন, ‘আমাদের অনেক দুর্গম পথ অতিক্রম করে আসতে হয়েছে। এই যাত্রা পথে অনেক খারাপ জিনিস দেখেছি, আবার অনেক ভালো জিনিসও দেখেছি। আমরা খুব খুশি। বিএসএফের কাছে কৃতজ্ঞ।’ তাঁদের আরও অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে মহিলা জওয়ানরা জানান, দেবপ্রয়াগ থেকে ঋষিকেশ পর্যন্ত কয়েকবার বোট উল্টে যায়। সোজা করে ফের যাত্রা শুরু হয়। যাত্রাপথে কুমির, ডলফিন, কচ্ছপ, অনেক ধরনের মাছ দেখেছেন সাহসী এই মহিলারা।
গঙ্গা কিছু জায়গায় অনেক চ্যানেলে ভাগ হয়ে গিয়েছে। এক মহিলা জওয়ান বলেন, ‘সেখানে বুঝতে আমাদের অসুবিধা হয়েছে। কোন চ্যানেলে জল বেশি রয়েছে। ফলে চরে আমাদের রাত ৮টা–৯টা পর্যন্ত আটকে থাকতে হয়েছে। সাপোর্টিং টিম গিয়ে আমাদের উদ্ধার করে নিয়ে এসেছে।’ ডিজি দলজিৎ সিং চৌধুরী বলেন, ‘নারী সশক্তিকরণ ও গঙ্গা নদীকে দূষণমুক্ত করার লক্ষ্যেই এই নৌ যাত্রার আয়োজন করা হয়। মহিলা জওয়ানদের সাহসকে সত্যিই কুর্নিশ। আগামী দিনেও বিএসএফের উদ্যোগে এই ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হবে।’
তবে বাংলায় একের পর এক জঙ্গি সন্দেহে গ্রেপ্তার হওয়ায় চিন্তিত দলজিৎ। ঝটিকা সফরের মধ্যেই তিনি দক্ষিণবঙ্গ বিএসএফ কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক সারেন। বিষয়টি যে চিন্তার, তা বিএসএফের অভ্যন্তরীণ বৈঠকে উঠে আসে। মনিপুরের পরিস্থিতি সামলানোর জন্য দক্ষিণবঙ্গ থেকে প্রায় ২২ থেকে ২৪ কোম্পানি বিএসএফ জওয়ান গিয়েছিলেন। সূত্রের খবর, বাংলার বর্তমান অবস্থা দেখে সেই সম্পূর্ণ কোম্পানিকে দক্ষিণবঙ্গে ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দিয়েছেন ডিজি।
বিশেষ করে নদিয়া, মুর্শিদাবাদ এবং মালদহ–সহ সীমান্তবর্তী জেলার পরিস্থিতি পাখির চোখ করে বাড়তি ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন ডিজি। সীমান্ত লাগোয়া গ্রামগুলিতে নিজেদের গোয়েন্দা শাখাকে আরও শক্তিশালী করার নির্দেশও দেন তিনি। বিশেষ করে গুপ্তচর এবং গোয়েন্দা শাখাকে আরও সক্রিয় কী ভাবে করা যায়, তার জন্য দক্ষিণবঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সুন্দরবন এবং সীমান্ত লাগোয়া অংশগুলোতে বিএসএফের কাজকর্ম বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন ডিজি। সীমান্ত লাগোয়া গ্রাম এবং এলাকাগুলোতে গিয়ে এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে সম্পর্ক তৈরি করে তথ্য নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। দলজিৎ বলেন, ‘ভারত এবং বাংলাদেশে সর্বদাই কড়া নজর থাকে। এ পাড়ে বিএসএফ এবং ও পাড়ে বিজিবি সীমান্ত পাহারার দায়িত্বে থাকে। পাচার রুখতে ব্যবস্থাও নেওয়া হয়।
রাজ্য সরকার, বিএসএফ-এর আধিকারিক এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থা একত্রে বিষয়টি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে সমাধান করা হবে যাতে সবসময়ের জন্য আমাদের সীমান্ত নিরাপদ থাকে।’ এ দিন দলজিৎ আরও জানান, ভারত–বাংলাদেশ সীমান্তের কয়েকটি জায়গায় ফেন্সিং নেই। তার মধ্যে অধিকাংশ আবার জলপথ। তবে সীমান্তের সর্বত্রই প্রতিনিয়ত পেট্রোলিং চালানো হচ্ছে। যেখানে ফেন্সিং নেই সেই এলাকাগুলিতে দ্রুত ফেন্সিং বসানোর কাজ শেষ করা হবে।