ঘুম তাড়াতে চালকদের চা ও গরম জলে আপ্যায়ন বাঁকুড়া সদর ট্রাফিক পুলিসের
বর্তমান | ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, বাঁকুড়া: চালকদের ঘুম ছোটাতে মঙ্গলবার রাত থেকে ময়দানে নেমেছে বাঁকুড়া সদর ট্রাফিক পুলিস। যানবাহন দাঁড় করিয়ে দূরপাল্লার বাস ও ট্রাক চালকদের পুলিস চা ও গরম জল খাওয়াচ্ছে। পর্যটকবাহী ট্যুরিস্ট বাসগুলিকেও দাঁড় করিয়ে পুলিস কর্মীরা ‘আপ্যায়ন’ করছেন। চালকদের পাশাপাশি পর্যটকদেরও পুলিস চা-গরম জল দিচ্ছে। প্রবল ঠান্ডায় ভোরের দিকে যাতে চালকদের ঘুমের কারণে দুর্ঘটনা না ঘটে তারজন্যই এই উদ্যোগ বলে পুলিস আধিকারিকরা জানিয়েছেন। মঙ্গলবার রাত ১০টা থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত পুয়াবাগান এলাকায় বাঁকুড়া-পুরুলিয়া জাতীয় সড়ক ও বাঁকুড়া-খাতড়া রাজ্য সড়কের সংযোগস্থলে পুলিস কর্মীরা ওই কাজ করেন। উপস্থিত ছিলেন, সদর ট্রাফিকের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক গৌতম সেন।
জেলার পুলিস সুপার বৈভব তেওয়ারি বলেন, দুর্ঘটনা রুখতে শীতে বাস, ট্রাক চালকদের চা-গরম জল খাওয়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পিকনিকের মরশুমে জেলাজুড়ে রাতভর ট্রাফিক পুলিস ওই কাজ করবে।
পুরুলিয়ার হুড়া থানার অর্জুনজোড়া গ্রামের বাসিন্দা শ্যামসুন্দর মাহাত বলেন, আমরা দীঘা বেড়াতে যাচ্ছি। বাঁকুড়ার ট্রাফিক পুলিস গাড়ি থেকে নামিয়ে চা-গরম জল খাইয়েছে। পুরুলিয়া-বাঁকুড়া জাতীয় সড়কে শীতকালে রাতে মাঝেমধ্যেই দুর্ঘটনা ঘটে। পুলিসের এই উদ্যোগে দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমবে।
জয়পুরের দৌলতপুর আদিবাসী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকা ও ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে অযোধ্যা পাহাড়ে পিকনিক করতে যাওয়া বাসের চালক দীপক মিশ্র বলেন, টানা ড্রাইভিং সিটে বসে থাকলে শারীরিক ও মানসিক নানা সমস্যা হয়। পুলিস শীতকালে এভাবে রাস্তার মাঝে চা-গরম জলের ব্যবস্থা করলে তা থেকে কিছু সুরাহা পাওয়া যায়।
পুলিসের মতে, অনেক সময় ভোরের দিকে চালকদের চোখ লেগে যায়। তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে তাঁরা দুর্ঘটনার শিকার হন। বর্তমানে বাঁকুড়ায় ভোরের দিকে কুয়াশা থাকছে। তারফলে দৃশ্যমানতাও কমে যাচ্ছে। সেই কারণে যানবাহন দাঁড় করিয়ে চালকদের চা, বিস্কুট, গরম জল খাওয়ানো হচ্ছে। তাতে তাঁরা কিছুটা বিশ্রাম পাচ্ছেন। পাশাপাশি একঘেয়েমিও কেটে যাচ্ছে। তাঁরা অনেকটাই চাঙ্গা হয়ে ফের গাড়ি চালাতে শুরু করছেন।
উল্লেখ্য, বর্তমানে ঠান্ডা কিছুটা কমলেও বাঁকুড়ায় শীতের প্রভাব এখনও রয়েছে। বেশিরভাগ দিন কুয়াশা থাকছে। ভোরের দিকে শহর সংলগ্ন এলাকায় বেশি কুয়াশা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। উত্তুরে হাওয়ারও ভালো দাপট রয়েছে। এজেলার মধ্য দিয়ে একাধিক জাতীয় ও রাজ্য সড়ক চলে গিয়েছে। ওইসব সড়কের বেশিরভাগটাই গ্রামাঞ্চলে রয়েছে। ফলে তা কুয়াশার চাদরে ঢেকে থাকছে। পুলিস জানিয়েছে, বেশিরভাগ দুর্ঘটনা শীতকালে ঘটে। ঠান্ডায় চালকরা তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়ার কারণেই মূলত দুর্ঘটনা ঘটে। সেই কারণে ভোরের দিকে বেশি দুর্ঘটনার খবর পাওয়া যায়।
এক পুলিস আধিকারিক বলেন, বেশিরভাগ ট্রাক চালক দিনের বেলায় বিশ্রাম নিয়ে থাকেন। তাঁরা বিকেল নাগাদ গাড়ি চালাতে শুরু করেন। সারারাত একটানা ট্রাক চালানোর পর ভোরের দিকে তাঁদের চোখ জড়িয়ে আসে। নাইট সার্ভিস ও ট্যুরিস্ট বাসের চালকদেরও একই অবস্থা হয়। ওইসময় আবার স্ট্যান্ড বা ডিপো থেকে দূরপাল্লার বহু যাত্রীবাহী বাসও গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা দেয়। ফলে বাসের সঙ্গে ট্রাকের সংঘর্ষের আশঙ্কাও থাকে। -নিজস্ব চিত্র