• ঘন জঙ্গলে সময়মতো মিলছে শিকার ভাঁড়ারিয়াতেই মন মজেছে জিনাতের
    বর্তমান | ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪
  • পিনাকী ধোলে, বান্দোয়ান: প্রায় ২০০ কিলোমিটার ‘লং মার্চ’ করে বান্দোয়ানের রাইকার জঙ্গলে এসেছে বাঘিনি জিনাত। গত চারদিন ধরে তার অবস্থান একই জায়গায়। ভাঁড়ারিয়ার জঙ্গল যেন ভারী পছন্দ হয়েছে জিনাতের! ঘোরাফেরা করছে রাইকা পাহাড়ের তিন কিলোমিটারের মধ্যেই। বনদপ্তরের আধিকারিকদের দাবি, জঙ্গলে রয়েছে গুহা, জলাশয়। অভাব হচ্ছে না শিকারেরও। সেই কারণেই রাইকা ছেড়ে যাওয়ার যেন নামই নিচ্ছে না জিনাত।

    তবে জিনাতের উপস্থিতি ঘুম কেড়ে নিয়েছে জঙ্গল লাগোয়া এলাকার বাসিন্দাদের। গত বুধবারই রাহামদা গ্রাম লাগোয়া ভাঁড়ারিয়া পাহাড়ের জঙ্গল থেকে উদ্ধার হয় একটি আধ খাওয়া ছাগল। ওই জঙ্গল থেকেই প্রায় পাঁচটি মৃত ছাগল উদ্ধার করেন গ্রামবাসীরা। রক্তাক্ত অবস্থায় আতঙ্কে জঙ্গল থেকে পালিয়ে বাঁচে আরও অন্তত পাঁচটি ছাগল। তাদের ঘাড়ে, শরীরের নানা অংশে দাঁত নখের আঁচড়। তবে বাসিন্দাদের দাবি, এখনও প্রায় ২০টি ছাগল নিখোঁজ রয়েছে। একএকটি ছাগলের ওজন প্রায় ২৫ থেকে ৩০ কেজি। দাম ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। বাঘের আতঙ্কের থেকেও যেন ছাগল নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার ঘটনায় আরও বেশি করে মুষড়ে পড়েছেন বাসিন্দারা। 

    বনদপ্তরের তরফে অবশ্য ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। তবে, বাসিন্দাদের দাবি, নিখোঁজ ছাগলে নয়, মৃত ছাগল পিছুই ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এদিন গ্রামের কাছে ভাঁড়ারিয়া পাহাড়ের নীচে সমতলে ছাগল চরাতে চরাতে মঙ্গলি টুডু বলছিলেন, বনদপ্তরের লোকজন পাহাড়ী জঙ্গলে উঠতে দিচ্ছে না। এদিকে বলছে, ক্ষতিপূরণ পেতে গেলে মরা ছাগল দরকার। আমার দু’টো ছাগল বাঘে মেরেছে। ওই দু’টি মরা ছাগল পাওয়া গেলেও এখনও একটি পাচ্ছি না। তাই ছাগল চরানোর ফাঁকে মাঝে মাঝে জঙ্গলে গিয়েই মরা ছাগল খুঁজছি। এদিন ছাগল খুঁজতে পাহাড়ে উঠেছিলেন আল্পনা টুডুও। তাঁর দাবি, মঙ্গলবার থেকে তিনিও দু’টি ছাগল পাচ্ছেন না। 

    বাঘিনি যেভাবে চোরাগোপ্তা হামলা চালাচ্ছে, তাতে গ্রামবাসীদের মধ্যে ক্ষোভ ক্রমশ বাড়ছে। বাসিন্দাদের নিরাপত্তার স্বার্থে মঙ্গলবার রাত থেকেই সুন্দরবনের ব্যাঘ্র প্রকল্পের স্টাইলে রাহামদার একাধিক এলাকা জাল দিয়ে ঘেরা হয়েছে। কংসাবতী দক্ষিণের ডিএফও পূরবী মাহাত বলেন, বাঘিনির হামলায় গবাদি পশু মারা গেলে অবশ্যই ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। যাঁরা গবাদি পশু নিখোঁজ রয়েছে বলে দাবি করেছেন, সেইসব অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে। গ্রামসভা করা হবে। পঞ্চায়েত প্রধান থেকে শুরু করে জনপ্রতিনিধিরা বিষয়টি নিশ্চিত করবেন। তারপরেই ক্ষতিপূরণ মিলবে। 

    বনদপ্তরের দাবি, এধরনের ক্ষেত্রে দেখা যায়, অনেকেই সুযোগ নিতে চান। যাঁদের ক্ষতি হয়নি, তাঁরাও ছাগল নিখোঁজ রয়েছে বলে দাবি করেন। তাই এলাকাবাসীর দাবি ঠিকঠাক যাচাই করা হবে। 

    বাঘিনির খোঁজে হন্যে হয়ে ঘুরছেন বনাধিকারিকরা। গতিবিধি জানতে নিয়ে আসা হয়েছে উচ্চ ক্ষমতার ড্রোন ক্যামেরা। রেডিয়ো কলারের সঙ্কেত জানতে দিনরাত এক করছেন সিমলিপালের বনকর্তারা। বাঘ ধরতে বুধবারও পাঁচটা খাঁচা পাতা হয়েছে। রয়েছে ট্র্যাঙ্কুলাইজ এক্সপার্টও। বাঘিনির টোপের জন্য নিয়ে আসা হয়েছে ব্ল্যাক বেঙ্গল গোট। কিন্তু, সবই বৃথা হয়ে যাচ্ছে! 

    ‘বাঘবন্দির খেলা’য় এদিনও জিত জিনাতেরই। তাবড় তাবড় আধিকারিকদের কার্যত নাকে দড়ি দিয়ে ঘোরাচ্ছে ‘রায়বাঘিনি’!
  • Link to this news (বর্তমান)