• বড়দিনে জমজমাট মহানগর,  পাঁচ বছরে উষ্ণতম ক্রিসমাস 
    বর্তমান | ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: বড়দিনের আকাশে মেঘ। তা সরে গিয়ে মাঝেমধ্যে রোদ উঁকি দিয়েছে। গরমও পড়েছে একটু। তখন পার্ক স্ট্রিট মেট্রো স্টেশনে ট্রেন এসে থামছে। আর রাস্তায় আছড়ে পড়ছে জনজোয়ার। ছোট্ট সৌমিক ভিড়ে ধাক্কা খাচ্ছে। কিন্তু এসবে তার মন নেই। দাদুর হাত ধরে পার্ক স্ট্রিটের ওয়াচ টাওয়ারের নীচে ঠায় দাঁড়িয়ে, কখন আলো জ্বলবে তার অপেক্ষা। বলতে বলতে ঘড়িতে বাজল চারটে। জ্বলে উঠল সব আলো। সৌমিকের মোটা চশমার কাচের উপর লাল আলোর প্রতিবিম্ব। বিহ্বল হয়ে তাকিয়ে বাচ্চাটি। পাঁচ বছরের মধ্যে বুধবার গেল উষ্ণতম বড়দিন। পূর্বাভাস সত্যি করে ছিটেফোঁটা বৃষ্টিও হল। জামা একটু ভিজল সৌমিকের। এরই মধ্যে আবহাওয়া দপ্তর জানাল, এদিন কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৮.২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড।


    সৌমিকের দাদু দেবকুমার সাহা পেশায় অ্যাম্বুলেন্স চালক। নাতির হাত ধরে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘বৃষ্টি পড়তে পারে ভেবে আগেভাগে বাড়ি থেকে বেরিয়েছি। ক্যাথিড্রাল চার্চ ঘুরে ভাবলাম, ওকে পার্ক স্ট্রিটও ঘুরিয়ে আনি।’ এবার বাড়ি ফিরবেন ওঁরা। সৌমিকের বাড়ি যাওয়ার তাড়া থাকলেও তনয়া, সম্রাট, সমর্পিতা, উপলদের তা মোটেও নেই। কলেজে তৃতীয় বর্ষে পড়ে তিনজন। বড়দিন উদযাপনের জন্য সারারাত থাকার প্ল্যান। ‘শুধু পার্ক স্ট্রিটেই হাঁটব। ক্লান্ত হলে ঢুকব কোনও রেস্তরাঁয়।’-বললেন তনয়া। এদিকে ভিড় যত বেড়েছে গরম আর ঘাম যেন মাত্রা দিয়ে গড়িয়েছে। হাওয়া অফিসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৩, ২০২২, ২০২০ ও ২০১৯ সালে বড়দিনে শহরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল যথাক্রমে ১৬.৯, ১৭.২, ১৪.৪, ১৩.৭ ও ১৩.৯ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। এ বছর বড়দিনের গরম ভেঙে দিল সব রেকর্ড। তবে তা বলে মানুষকে আনন্দ উদযাপনে আটকানো যায়নি। চিড়িয়াখানার তথ্য বলছে, প্রায় ৭০ হাজার দর্শক এদিন এসেছিলেন। কলকাতায় দেখার জায়গায় অভাব নেই। উল্টোডাঙা থেকে ভিক্টোরিয়ায় এসে তনুশ্রী মণ্ডল বললেন, ‘দু’দিন ধরে ঘুরতে হবে। এখন বড়দিন অনেকটা দুর্গাপুজোর মতো। দু’দিন ধরে চিড়িয়াখানা, পার্ক স্ট্রিট, ইকো পার্ক, জাদুঘর, আলিপুর জেল মিউজিয়াম, বো বারাক যেতে হবে।’ 


    অ্যালেন পার্ক থেকে পার্ক স্ট্রিট মোড়ে আসার রাস্তা বন্ধ। পুলিস বলছে, ঘুরে যেতে হবে। বিকেল পাঁচটা ১৫ নাগাদ পুলিস পার্ক স্ট্রিটে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। তারপর শুধুই হেঁটে ঘোরার জন্য মানুষের জন্য খুলে দেওয়া হয় রাস্তা। তারপর রাস্তাজুড়ে শুধুই লাল টুপির মাথা। আলো জ্বলতে থাকা হেয়ার ব্যান্ড, লাল টুপি পরে চলল বড়দিন উদযাপন। আবার যানবাহনের জন্য রাস্তা খুলে দেওয়া হল রাত সোয়া ন’টায়। এদিকে চিড়িয়াখানার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ভিড় ইকো পার্ক, ভিক্টোরিয়াও। বিকেলের পর পার্ক স্ট্রিট, ময়দান বা রবীন্দ্র সদন থেকে মেট্রোতে উঠতে বেগ পেতে হয়েছে মানুষকে। 


    এসবের মাঝেই উষ্ণ বড়দিন কপালে ভাঁজ ফেলেছে সবার। চিড়িয়াখানায় একজন বললেন, ‘পুজোয় বৃষ্টি হলে মন খারাপ হতো। এখন তো বড়দিনেও মন ভালো থাকছে না। তার উপর এরকম গরম! সবমিলিয়ে মন ভরল না।’ 
  • Link to this news (বর্তমান)