• নেদারল্যান্ডস থেকে দার্জিলিং চিড়িয়াখানায় দুই পুরুষ পান্ডা,  রেড পান্ডার বংশবৃদ্ধির উদ্যোগ
    বর্তমান | ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪
  • স্বার্ণিক দাস, কলকাতা: ২০১৪ সালে শেষবার দার্জিলিং চিড়িয়াখানায় জন্ম নিয়েছিল রেড পান্ডা। তারপর কেটে গিয়েছে ১০ বছরেরও বেশি সময়। খুদে পান্ডার চিৎকার, খুনসুটি, অলসতা থেকে ব্রাত্যই থেকে দিয়েছে রাজ্য। তাই এবার রেড পান্ডার বংশবৃদ্ধিতে অভিনব উদ্যোগ নিল রাজ্য সরকার। নেদারল্যান্ডস থেকে দার্জিলিংয়ে এল দু’টি পুরুষ রেড পান্ডা। সেখানে কার্যত জামাই আদরেই রাখা হয়েছে এই বিদেশিদের। পরিবেশের সঙ্গে মানানসই হওয়ার পর তাদের সঙ্গমের জন্য প্রস্তুত করবে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ।

    স্টেট জু অথরিটি সূত্রে খবর, রাজ্যে একমাত্র দার্জিলিং চিড়িয়াখানাতেই রেড পান্ডা রয়েছে। এই প্রাণী শীতপ্রধান দেশের। দার্জিলিং ছাড়া রাজ্যের আর কোথাও রেড পান্ডার বসবাসের উপযোগী আবহাওয়া নেই। এই মুহূর্তে উত্তরবঙ্গের চিড়িয়াখানায় ২১টি রেড পান্ডা রয়েছে। তার মধ্যে ৭টি পুরুষ, ১২টি মহিলা ও দু’টি শাবক। দার্জিলিং চিড়িয়াখানা সূত্রের খবর, সাতটি পুরুষ রেড পান্ডার অধিকাংশই বৃদ্ধ হয়ে গিয়েছে। তারা আর বংশবৃদ্ধিতে সক্ষম নয়। অন্যদিকে, ভিন রাজ্য থেকে গত বছর দার্জিলিংয়ে বেশ কয়েকটি স্ত্রী রেড পান্ডা নিয়ে আসা হয়েছে। তাদের বয়স তুলনায় অনেকটাই কম। এই স্ত্রী পান্ডারা সকলেই সন্তান উৎপাদনে সক্ষম। তাই আর রেড পান্ডা আমদানি না করে এ রাজ্যেই বংশবৃদ্ধির পরিকল্পনা করা হয়। সেই মতো বছরখানেক ধরে দু’-তিন বছর বয়সি পুরুষ রেড পান্ডার খোঁজ করছিল স্টেট জু অথরিটি। ইউরোপ ও অস্ট্রেলিয়ার একাধিক চিড়িয়াখানায় তিনটি তরুণ রেড পান্ডার জন্য ‘কনজারভেশন ব্রিডিং’-এর আবেদন জানায় রাজ্য সরকার। 

    শেষমেশ গত অক্টোবরে মেলে সুখবর। নেদারল্যান্ডস সরকার চুক্তিতে দু’টি রেড পান্ডা দেওয়ার ব্যাপারে সম্মতি দিয়েছে। সেই মতো সরকারি নথিপত্র তৈরি করে স্টেট জু অথরিটি। নেদারল্যান্ডসের রোটারডাম চিড়িয়াখানা থেকে দার্জিলিংয়ের দূরত্ব প্রায় ৭ হাজার ৩০০ কিলোমিটার। দুই ডাচ রেড পান্ডার জন্য বিশেষ বিমানের টিকিট কাটা হয়। কাতারের দোহা হয়ে বাগডোগরা বিমানবন্দর প্রায় ২৭ ঘণ্টার যাত্রা। সেই যাত্রা শেষে বড়দিনের দুপুরে রাজ্যে এসে পৌঁছেছে দুই রেড পান্ডা। সন্ধ্যার আগেই তাদের জন্য গ্রিন করিডর করে সড়কপথে বিমানবন্দর থেকে উত্তরবঙ্গের চিড়িয়াখানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আগে থেকেই দুই পান্ডার জন্য দু’টি পৃথক ঘর প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ থেকে শুরু করে পশুর উপযোগী যাবতীয় ব্যবস্থা সেখানে মজুত রয়েছে।

    স্টেট জু অথরিটির মেম্বার সেক্রেটারি সৌরভ চৌধুরী জানিয়েছেন, নেদারল্যান্ডস থেকে আসা এই দুই রেড পান্ডার বয়স আড়াই বছর। আগামী এক মাস তাদের দু’জনকেই আলাদা ঘরে একাকী রাখা হবে। সঙ্গমের জন্য প্রস্তুত করে তোলা হবে তাদের। চিকিৎসকরা নিয়মিত দুই জোয়ান পান্ডার শারীরিক অবস্থার খেয়াল রাখবেন। এরাজ্যের পরিবেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিলেই স্ত্রী পান্ডাদের সংস্পর্শে আনা হবে দুই ডাচ পান্ডাকে। তারপরই অপেক্ষা নতুন অতিথির।
  • Link to this news (বর্তমান)