আয়কর নজরে জমি-বাড়ি বেচাকেনা, লক্ষ্য ৩ বছরের হিসেব, শুরুতেই ২৬০০ কোটির অনিয়মের হদিশ
বর্তমান | ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪
বাপ্পাদিত্য রায়চৌধুরী, কলকাতা: রাজ্যের কোথায় কোথায় গত তিনবছরে জমি ও বাড়ি কেনাবেচা হয়েছে, এবার তার সমীক্ষায় নামল আয়কর দপ্তর। সেই কাজে নেমেই চক্ষু চড়কগাছ তাদের। মাত্র দুটি জেলার রেজিস্ট্রেশন অফিসে হানা দিয়েই তারা প্রায় ২,৬০০ কোটি টাকার লেনদেনের খোঁজ পেল, যার হদিশ তাদের কাছে ছিল না। অথচ আয়কর আইন অনুযায়ী ইনকাম ট্যাক্সের কাছে সেই তথ্য পাঠানোর কথা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। দপ্তরের কর্তারা মনে করছেন, মাত্র একদিনের সমীক্ষা করতে গিয়ে যেখানে এই বিপুল টাকার অনিয়ম ধরা পড়েছে, সেখানে সমগ্র রাজ্যে পরিস্থিতি আরও সঙ্কটপূর্ণ। তাঁদের আশা, এর থেকে বড় অঙ্কের আয়কর ও পেনাল্টি আদায় সম্ভব হবে। চারশোর বেশি এমন লেনদেন সামনে এসেছে, যেখানে মোটা টাকা করফাঁকি হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
বড় অঙ্কের লেনদেন করলে তা আয়কর দপ্তরের স্ক্যানারের আওতায় আসে। সেই তালিকায় যেমন আছে ক্রেডিট কার্ড পেমেন্ট, শেয়ার বা মিউচুয়াল ফান্ড বা গাড়ি কেনা, তেমনই আছে জমি-বাড়ি কেনাও। সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্ক বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের তরফে নির্দিষ্ট সময় অন্তর সেইসব লেনদেন সংক্রান্ত তথ্য আয়কর দপ্তরে জমা দেওয়ার কথা। জমি বা বাড়ির ক্ষেত্রে লেনদেনের অঙ্ক যদি ৩০ লক্ষ টাকা বা তার বেশি হয়, তাহলে রেজিস্ট্রেশন অফিসের তরফে সেই তথ্য আয়কর দপ্তরকে জানানো বাধ্যতামূলক।
এদিকে, রাজ্যজুড়ে নানা জায়গায় কয়েকবছর ধরে ইডি ও সিবিআই তল্লাশি চলেছে। সেখানে বিপুল সম্পত্তির পাশাপাশি জমি ও বাড়ি সংক্রান্ত লেনদেনও তাদের স্ক্যানারের আওতায় আসে। অথচ আয়কর দপ্তরের নজরে আসে, সেইসব তথ্য তাদের কাছে নেই। কীভাবে তা সম্ভব হচ্ছে, তা জানতে আসরে নামার পরিকল্পনা করেন দপ্তরের কর্তারা।
গত ২৩ ডিসেম্বর প্রথম পর্যায়ের সমীক্ষার কাজ শুরু হয়। একদিনের জন্য সার্ভে হয় কলকাতা ও বর্ধমান শহরের রেজিস্ট্রেশন অফিসে। সেখানে অনুসন্ধান করতে গিয়ে আয়কর কর্তারা দেখেন, মোট ২,৫৮০ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে। অথচ সেসব তথ্য দপ্তরে জমাই পড়েনি। করদাতারাও তাঁদের আয়কর রিটার্নেও সেসবের উল্লেখ করেননি। দপ্তরের কর্তারা বলছেন, জমি, ফ্ল্যাট বা বাড়ি বিক্রয় বাবদ আয় মূলধনী লাভের আওতায় পড়ে। তার উপর মোটা টাকা কর দিতে হয় করদাতাকে। এক্ষেত্রে সেসব হয়নি। ২০২১-২২ থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষের মধ্যে যেসব লেনদেন হয়েছে সেগুলিকেই আতসকাচের নীচে এনেছে আয়কর দপ্তর।
একদিনের সমীক্ষায় আরও তথ্য আয়কর দপ্তরের সামনে এসেছে। তারা দেখেছে, চারশোর বেশি কেসে জয়েন্ট ডেভেলপমেন্ট এগ্রিমেন্ট হলেও তার তথ্য দপ্তরকে জানানো হয়নি। এখানে বহু ক্ষেত্রেই কোনও ব্যক্তি বা পরিবার তাদের জমি বা বাড়ি আবাসন তৈরির জন্য প্রোমোটারকে দিয়েছে। সেখানে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা পরিবারের সদস্যরা সম্পত্তি বিক্রি বা ফ্ল্যাট বা নগদ প্রাপ্তির মাধ্যমে মূলধনী লাভ করেছেন, কিন্তু তার জন্য প্রদেয় কর তাঁরা দেননি। এক্ষেত্রেও মোটা টাকা কর আদায়ের সম্ভাবনা দেখছে আয়কর দপ্তর। সূত্রের খবর, লেনদেন সংক্রান্ত তথ্যাদি যেভাবে দপ্তরের কাছে গোপন করা হয়েছে তার গভীরে যেতেই রাজ্যজুড়ে এই অভিযান চালাবেন আয়কর কর্তারা। সেক্ষেত্রে বেনিয়মের অঙ্ক কোথায় পৌঁছতে পারে, তার অনুমানের কুলকিনারা পাচ্ছেন না তাঁরা।