• মাছেদের অভয়ারণ্য! নিশ্চিন্তে বেড়ে উঠছে বোরোলি, ন্যাদস, রায়খর
    এই সময় | ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪
  • সঞ্জয় চক্রবর্তী, শিলিগুড়ি

    নাম ‘অভয় পুকুর’! মাছেদের অভয়ারণ্যও বলা যেতে পারে। যেখানে মাছেরা নির্ভয়ে বংশবিস্তার করবে। ইলেকট্রিক শক, কিংবা জেলেদের ফাঁস জালে ধরা পড়ার সম্ভাবনা নেই। সম্ভাবনা তো দূর অস্ত ‘অভয় পুকুরে’ জেলেদের ঢোকাই নিষেধ। রাজ্য জুড়ে হারিয়ে যাওয়া মাছেদের ফের বাংলার নদী, খাল, বিলে ফেরাতে রাজ্য মৎস্য দপ্তরের এ এক অভিনব প্রয়াস। গত বছর রাজ্যের ছয় জেলায় দু’টি করে এমন বারোটি ‘অভয় পুকুর’ গড়ে তোলা হয়েছে মৎস্য দপ্তরের তৎপরতায়।

    প্রতিটি পুকুরে হারিয়ে যেতে বসা বোরোলি, ন্যাদস, রায়খর, পিয়ালি, দেশি ট্যাংরা, হুতুম, খলসে, বান, পয়া, মৌরলা, পুঁটি, দাঁড়কিনা মাছের চারা ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। অভয় পুকুরে হারিয়ে যেতে বসা ওই সমস্ত মাছ কেবল নিরাপদেই নেই, বংশবিস্তারও করছে নিশ্চিন্তে। রাজ্য মৎস্য দপ্তরের অতিরিক্ত অধিকর্তা শমিক দাস বলেন, ‘হারিয়ে যাওয়া বাংলার মাছেদের ফের খাল, বিলে ফেরাতে পাইলট প্রজেক্ট হিসাবেই নেওয়া হয় অভয় পুকুর প্রকল্প। আমাদের উদ্দেশ্য সফলই বলতে হবে। প্রতিটি পুকুরে মাছেদের বংশবিস্তার হচ্ছে। এ বার রাজ্যের সর্বত্র অভয় পুকুর গড়ে তোলার পরিকল্পনা চলছে।’

    নদী থেকে মাছ হারিয়ে যাওয়া যে নিছক গালগল্প নয় সেটা শিলিগুড়ির মাছ বাজারগুলিতে গেলেই টের পাওয়া যাবে। কলকাতার পরেই শিলিগুড়ির মাছ বাজারের আয়তন বিশাল। প্রতিদিন দেশের নানা প্রান্ত থেকে টন টন মাছ আসে শিলিগুড়িতে। কিন্তু মাছের ওই তালিকায় বাংলার ছোট মাছের দেখা নেই বললেই চলে। বিহার থেকে আসা বোরোলি, উত্তর দিনাজপুর থেকে আসা হাইব্রিড ট্যাংরা, অসম থেকে আসা শোল মাছ কিছু দেখতে পাওয়া যায়।

    কিন্তু বাজারে সেই মাছ আসতে না আসতেই উধাও হয়ে যায়। তিস্তা কিংবা তোর্সার বোরোলি শিলিগুড়ির বাজারে ঢোকার সুযোগই পায় না। তার আগেই উধাও। পুঁটি মাছের ক্ষেত্রেও গল্পটা একই রকম। কেন এই পরিস্থিতি? মৎস্য দপ্তরের ব্যাখ্যা, দার্জিলিং ও কালিম্পং জেলা মাছ চাষের জন্য অনুকূল নয়। কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি, দুই দিনাজপুর এবং মালদায় মাছ চাষ হলেও চাষিদের লক্ষ্য দ্রুত লাভের টাকা ঘরে তোলা।

    ফলে যে সমস্ত মাছ দ্রুত বাড়ে সেগুলির চাষেই মন সকলের। অন্যদিকে, জবরদখলের জেরে উত্তরবঙ্গ কেন, দক্ষিণবঙ্গেই নদীর বাস্তুতন্ত্র নষ্ট হতে বসেছে। ফলে হারিয়ে যাচ্ছে বাংলার ছোট মাছ। সেই কারণেই মৎস্য দপ্তরের উদ্যোগে গত বছর দুর্গাপুজোর সময়ে একের পর এক অভয় পুকুর গড়ে তোলা হয়।

    উত্তরবঙ্গের আলিপুরদুয়ারের বীরপাড়া লাগোয়া ছ্যাকাবাড়ি পার্কে, মালদহের বড় সাগরদিঘিতে, পূর্ব বর্ধমান, দীঘার কাছে জুনপুটে, দক্ষিণ ২৪ পরগনার বকখালি এবং বাঁকুড়ার একটি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর দু’টি পুকুরকে ‘অভয় পুকুর’ হিসেবে তৈরি করা হয়েছে। সেখানে ছোট মাছ সংরক্ষণের ব্যাপারে স্থানীয় চাষিদের প্রশিক্ষণও দেওয়া হচ্ছে।

  • Link to this news (এই সময়)