• বর্ষশেষের হুল্লোড়ে সতর্কতা পুলিশের, মেপে মদ খান, হোন সাবধান!
    এই সময় | ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪
  • রাহুল মজুমদার, শিলিগুড়ি

    কারও সময় নেওয়া রয়েছে রাত ১২টা পর্যন্ত, আবার কারও রাত দু’টো। কিন্তু নিয়ম ভেঙে ভোর পর্যন্ত শহরে চলছে অধিকাংশ বার এবং পাব। বিশেষ করে বাগডোগরা এবং ভক্তিনগর এলাকায় থাকা বারগুলিতে নির্দিষ্ট সময়ের পরেও চলছে হইচই, নাচাগানা। এর জেরে রাতের শহরে বাড়ছে অপরাধ। ইতিমধ্যেই বারগুলি সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশি রাত পর্যন্ত খোলা রাখার বিজ্ঞাপন দিতে শুরু করেছে।

    কাস্টমার টানার জন্য লোভনীয় নানা অফারও দিচ্ছেন কর্তৃপক্ষ। সেই ট্রেন্ডে নিজেদের অভ্যস্ত করতে যুব সম্প্রদায়ের যে অংশ ইচ্ছুক, তাঁদের জন্য সতর্কতা জারি করেছে শিলিগুড়ি পুলিশ। ডিসিপি বিশ্বচাঁদ ঠাকুরের বক্তব্য, ‘আনন্দ করুন তবে নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রেখে। না হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে, সাধারণত দেড় পেগের বেশি মদ খেয়ে সমস্যা তৈরি করলে আইনি ঝঞ্ঝাটে জড়াতে পারেন।

    শিলিগুড়ি শহরে বার এবং পাবগুলি সম্পর্কে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। অভিযোগ, লেট ফি নিয়ে বাড়তি সময় খোলা রাখার অনুমতি দিলেও আদতে বারগুলির উপর কোনও নজরদারি করে না আবগারি দপ্তর। এর ফলে আইনশৃঙ্খলাজনিত যে কোনও সমস্যা হলে তার দায় গিয়ে পড়ে পুলিশের ওপর।

    সূত্রের খবর, শিলিগুড়িতে সব চেয়ে বেশি আইন ভাঙছে মাটিগাড়ার সিটি সেন্টার এবং সেবক রোডের প্ল্যানেট মলে থাকা বার এবং পাবগুলি। কিন্তু এতকিছুর পরেও আবগারি দপ্তর ব্যবস্থা নেয় না বলে পুলিশের একাংশের অভিযোগ। সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন শিলিগুড়ির বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ। তাঁর বক্তব্য,‘আমি দপ্তরের মন্ত্রীকে সরাসরি বিষয়টি জানাচ্ছি৷ আদালতেরও দ্বারস্থ হব।’

    শিলিগুড়িতে এক্সাইজ কমিশনার(নর্থ)–এর দপ্তর রয়েছে। এরপরেও কেন আবগারি দপ্তর ব্যবস্থা নিচ্ছে না, প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়েও। এই অভিযোগের বিষয়ে এক্সাইজ কমিশনার সুজিত দাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। জবাব দেননি এসএমএসের। তবে দপ্তরের এক কর্তার বক্তব্য, ‘গত ১২ তারিখ সিটি সেন্টারে আবগারি দপ্তরের অভিযান হয়েছে। একটি পাবের বিরুদ্ধে ৫ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। নজরদারি নেই বলে যে অভিযোগ, তা ঠিক নয়।’

    দার্জিলিং এবং জলপাইগুড়ি জেলা মিলিয়ে বার এবং পাবের সংখ্যা ১০০-রও বেশি। আবগারি দপ্তরের নিয়ম অনুযায়ী রাত ১২টার মধ্যে বার কিংবা পাবের শাটার বন্ধ করার কথা। শহরের কিছু বার মালিক নিয়ম মেনে নির্দিষ্ট সময়ে ব্যবসা বন্ধ করলেও একাংশ অসাধু ব্যবসায়ী নিয়মের তোয়াক্কা না করে ভোর পর্যন্ত খোলা রাখছেন বলে অভিযোগ।

    নিয়ম অনুযায়ী, রাত ১২টার পরে বার এবং পাব খোলা রাখার জন্য আবগারি দপ্তরকে ঘণ্টা প্রতি ১০ হাজার টাকা করে ফি দিতে হয়। বাড়তি হিসেবে সর্বোচ্চ দু’ঘণ্টা অনুমতি দিতে পারে আবগারি দপ্তর। অভিযোগ, মাটিগাড়ার সিটি সেন্টারের লেভেল টু–তে থাকা পাব, ভক্তিনগরের সেবক রোডের প্ল্যানেট মলের বার এবং পাবগুলি বাড়তি সময় পার হয়ে যাওয়ার পরেও খোলা রাখা হচ্ছে।

    রাত পর্যন্ত মদ্যপান করে পাবে–ই হাতাহাতিতে জড়াচ্ছে একাংশ৷ গত কয়েকমাসে এ রকম একাধিক ঘটনা ঘটেছে। সেবক রোডের প্ল্যানেট মলের পাবে মাস তিনেক আগে এক তরুণীকে মারধরের অভিযোগ ওঠে বাউন্সারদের বিরুদ্ধে। দু’মাস আগে সিটি সেন্টারের পাবের বাইরে ভোরবেলায় এক তরুণীর শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটে।

    তারও আগে মধ্য রাতে সিটি সেন্টারে তিনতলা থেকে পড়ে গিয়ে মৃত্যু হয় এক যুবকের। পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে, বেশ কিছুদিন আগে শিলিগুড়ির সেবক রোডের একটি বারে গিয়েছিলেন শিলিগুড়ি পুরনিগমের মেয়র পারিষদ কমল আগরওয়াল। সেখানে এক যুবক মদ্যপ অবস্থায় বোতল দিয়ে তাঁর মাথা ফাটিয়ে দেয়।

  • Link to this news (এই সময়)