২০১১ সালে বাংলায় ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগে দশকের পর দশক কোনও একজন নেতা সিপিএমের জেলা সম্পাদক পদে দীর্ঘদিন থাকতেন। ২০১৮–তে সিপিএমের হায়দরাবাদ পার্টি কংগ্রেসে সিদ্ধান্ত হয়, কোনও পদে কোনও নেতা তিনটি টার্মের বেশি থাকতে পারবেন না। এই নিয়মের সঙ্গে কান্নুর পার্টি কংগ্রেসে বয়সের মাপকাঠি তৈরি করা হয়।
নির্দিষ্ট বয়স পেরিয়ে গেলে ব্রাঞ্চ কমিটি থেকে কেন্দ্রীয় কমিটি— যে কোনও স্তর থেকে সংশ্লিষ্ট সদস্যকে বিদায় নিতে হবে। বয়স সত্তর হয়ে গেলে জেলা সম্পাদক অথবা জেলা কমিটি থেকে সরে যেতে হবে। এই নিয়মগুলি চালু হওয়ার পর বঙ্গ সিপিএমের জেলা সংগঠনে মুখ–বদলের হাওয়া বইতে শুরু করে। কিন্তু একলপ্তে এতগুলি জেলায় সম্পাদক পদে বদলের নজির প্রায় নেই বলে মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের।
২৫ ডিসেম্বরের আগে চারটি জেলায় সিপিএমের সম্মেলন শেষ হয়েছে। চারটির মধ্যে দু’টি জেলাতে সম্পাদক বদল হয়েছে। নদিয়া জেলাতে সুমিত দে–কে সরিয়ে নতুন সম্পাদক হয়েছেন মেঘলাল শেখ, সলিল আচার্যের জায়গায় জলপাইগুড়ি জেলায় সম্পাদক হয়েছেন পীযূষ মিশ্র। কলকাতা, উত্তর ২৪ পরগনা, পূর্ব–পশ্চিম বর্ধমানের মতো গুরুত্বপূর্ণ জেলায় এখনও সম্মেলন বাকি রয়েছে।
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, ‘উত্তর ২৪ পরগনা, পশ্চিম মেদিনীপুর, মালদা, পুরুলিয়াতে নতুন মুখ সম্পাদক পদে আসতে পারেন। আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে কল্লোল মজুমদারকে একাধিক দায়িত্ব সামলাতে হচ্ছে। ফলে কলকাতাতেও সম্পাদক পদে বদল হতেই পারে।’
উত্তর ২৪ পরগনায় মৃণাল চক্রবর্তীর জায়গায় কে সম্পাদক হবেন, এই নিয়ে সম্মেলনে প্রবল টানাপড়েনের সম্ভবনা রয়েছে। পলাশ দাস, গার্গী চট্টোপাধ্যায়–সহ একাধিক নাম নিয়ে দলের অন্দরে চর্চা চলছে। এ ছাড়া তন্ময় ভট্টাচার্য বিতর্ক নিয়েও উত্তর ২৪ পরগনার সম্মেলনে জলঘোলা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এক মহিলার অভিযোগের জেরে সুশান্ত ঘোষ পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা সম্পাদকের দায়িত্বে নেই। বিজয় পাল ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের কাজ চালালেও তিনি জেলা সম্মেলনে সম্পাদক পদে নির্বাচিত হবেন, এমন নিশ্চয়তা নেই। সুশান্ত–বিতর্কে সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্মেলন উত্তপ্ত হতে পারে বলে মনে করছেন দলের একাধিক নেতা।
সিপিএমের রাজ্য কমিটির এক নেতার পর্যবেক্ষণ, ‘দুই প্রাক্তন যুব নেতা তাপস সিনহা পশ্চিম মেদিনীপুরে এবং অভয় মুখোপাধ্যায় বাঁকুড়ায় সম্পাদক পদে নির্বাচিত হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন।’ রাজ্যের সংখ্যালঘু প্রধান জেলাগুলিতে দীর্ঘদিন সিপিএমের সম্পাদক পদে অ–সংখ্যালঘু মুখ ছিলেন।
সিপিএমের গত সম্মেলনে মুর্শিদাবাদে সম্পাদক হন জামির মোল্লা, উত্তর দিনাজপুরে সম্পাদক হয়েছিলেন আনারুল হক। এ বার মালদা জেলাতেও নতুন সম্পাদক পদে কোনও সংখ্যালঘু মুখ আসতে পারেন। কলকাতায় কল্লোল মজুমদার সম্পাদকের পদ থেকে সরলে সম্পাদক হওয়ার দৌড়ে রয়েছেন তরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়, সুদীপ সেনগুপ্তের মতো নেতারা।