তাঁদের বক্তব্য, ভুল করে নিজেদের নাম প্রকাশ করে নথিপত্র মামলার অন্য সব পক্ষকে দেওয়া হয়েছিল। সেই ভুল শুধরে নেওয়া হয়েছে। আরজি করের ওই নির্যাতিতার নাম–ছবি ভাইরাল হওয়ায় বারে বারে হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। পদক্ষেপও করতে হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারকে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, মহিলাদের নির্যাতনের ঘটনায় বা নাবালক–নাবালিকাদের ক্ষেত্রে শুধু ভুক্তভোগীর নাম–পরিচয়ই নয়, আত্মীয়স্বজনের নাম, এমনকী তাঁদের বসবাসের এলাকার তথ্যও প্রকাশ করা যায় না।
হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ সুবিচারের দাবিতে নিহতের বাবা–মায়ের নতুন করে দায়ের মামলা শুনবে কিনা, তা এখনও নিশ্চিত নয়। তবে সিবিআই তদন্তের ত্রুটি নিয়ে গুচ্ছ অভিযোগ হাইকোর্টে জানিয়েছেন সন্তানহারা দম্পতি। তাঁদের অভিযোগ, সিবিআই ১২৮ জনকে সাক্ষী হিসেবে চিহ্নিত করেছিল। অথচ বিচার–পর্বে তাঁদের মধ্যে মাত্র ৫০ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। ২০ ডিসেম্বর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষও হয়ে গিয়েছে! নিহতের পরিবারের বক্তব্য, কলকাতার পুলিশ কমিশনার ও দুই ডিসি–র বিরুদ্ধে গোটা ঘটনাপ্রবাহে প্রভাব খাটানো, তথ্যপ্রমাণ লোপাটের অভিযোগ করা হয়েছিল।
অথচ সিবিআই তাঁদের কাউকেই জিজ্ঞাসাবাদ করেনি। বাবা–মায়ের আরও অভিযোগ, তাঁরা বিভিন্ন সময়ে বহু ডাক্তারের ভূমিকা নিয়েও সিবিআইকে লিখিত ভাবে জানিয়েছিলেন। কিন্তু সিবিআই তাঁদেরও না ডাকায় তদন্তের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। হাইকোর্টে দায়ের মামলায় সন্দীপ ঘোষকে নিয়েও গুচ্ছ অভিযোগ করেছে নিহতের পরিবার। তাদের বক্তব্য, তথ্যপ্রমাণ নষ্ট করার ক্ষেত্রে সন্দীপের হাত থাকতে পারে, এই আশঙ্কা বরাবরই রয়েছে।
কিন্তু সিবিআই তাঁর বয়ান এখনও অবধি রেকর্ড করেনি। এমনকী ৮, ৯ ও ১০ অগস্ট সন্দীপ ঘোষ কোথায় ছিলেন, তা জানতে তাঁর মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন এখনও ভেরিফাই করা হয়নি। মোবাইল কল রেকর্ড, হোয়াটসঅ্যাপ কলও খতিয়ে দেখা হয়নি। সন্দীপের গাড়ির চালক এবং দেহরক্ষীর বয়ানও সিবিআই রেকর্ড করেনি বলে অভিযোগ পরিবারের।
নতুন করে দায়ের মামলায় নিহতের বাবা–মা বিতর্কিত চিকিৎসক অভীক দে, বিরূপাক্ষ বিশ্বাস ছাড়াও আরও ন’জন ডাক্তারের নাম উল্লেখ করেছেন। অভিযোগ, সিবিআই তাঁদের কাউকেই জিজ্ঞাসাবাদ করেনি। পরিবারের বক্তব্য, কেন তাড়াহুড়ো করে দেহ দাহ করা হলো বা কেন জনৈক সঞ্জীব মুখোপাধ্যায়ের সইয়ের ভিত্তিতে দাহের অনুমতি দেওয়া হলো—সে–সব নিয়েও সিবিআই তদন্ত করেনি।
মূল অভিযুক্ত সঞ্জয় রায় সেমিনার হল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর কোথায় কোথায় গিয়েছে, সে বিষয়েও কোনও রিপোর্ট নেই। যে সেমিনার হলে ওই তরুণী চিকিৎসকের দেহ পাওয়া যায়, সেখানে যত হাতের ছাপের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল, তার সঙ্গে সে দিন সেখানে হাজির থাকা চিকিৎসক–কর্মীদের হাতের ছাপ মিলিয়ে দেখার কাজও সিবিআই করেনি বলে হাইকোর্টে অভিযোগ করেছে পরিবার। মা–বাবার তোলা এই সব প্রশ্নের ভবিষ্যৎ কী হবে, তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে অন্তত ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত, সিঙ্গল বেঞ্চে এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে সে দিন।