• দুই বাংলার সীমান্তে থমকে পিলারের রক্ষণাবেক্ষণের কাজ
    এই সময় | ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪
  • ছোট ছোট পিলার দিয়ে চিহ্নিত রয়েছে ২২৫০ কিলোমিটার বিস্তৃত পশ্চিমবঙ্গ–বাংলাদেশ সীমান্ত। ১৯৫০ থেকে প্রতি বছর ভারত ও বাংলাদেশের যৌথ দল জ়িরো পয়েন্টে থাকা সেই সব পিলার রক্ষণাবেক্ষণ করতে চষে বেড়ায় সীমান্ত–এলাকা। পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তে এই রক্ষণাবেক্ষণের কাজ শুরু হয় নভেম্বরে।

    চলে জুন পর্যন্ত। যার পরিভাষা — ‘জয়েন্ট বাউন্ডারি মেনটেন্যান্স ওয়ার্ক’। মাঝে একবার কোভিডের সময়ে একবছর তা বন্ধ ছিল। তার কারণ ছিল ভিন্ন। তবে বাকি ৭৪ বছরের মধ্যে এ বার এখনও সেই ইনস্পেকশন শুরুই করা যায়নি বলে সূত্রের খবর। জানা গিয়েছে, বাংলাদেশ সরকার নাকি ইচ্ছুুক। কিন্তু, কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের তরফে এখনও সে ভাবে সাড়া মেলেনি।

    সূত্রের খবর, কিছু মেন পিলার আর কিছু সাবসিডিয়ারি পিলার বসানো রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের সীমান্তে। সব মিলিয়ে সীমান্ত জুড়ে ১১ হাজারেরও বেশি পিলার রয়েছে। পিলারগুলি পিরামিড–এর মতো দেখতে। মেন পিলার মাটি থেকে চার ফুট উঁচু। সাবসিডিয়ারি পিলারের উচ্চতা প্রায় দু’ফুট। রোদে–জলে দাঁড়িয়ে থেকে কখনও–সখনও সেই পিলার ভেঙে যায়।

    আন্তর্জাতিক সীমান্তে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৭২টি নদী আছে। তারা পাড় ভেঙে বা গতিপথ পরিবর্তন করে পিলার নষ্ট করে ফেলে। আবার কখনও সেই পিলার তার জায়গা থেকে সরে যায় বলেও অভিযোগ রয়েছে। সীমান্তের চাষজমিতে থাকা সেই পিলার সরিয়ে কিছু দূরে বসিয়ে, নিজের জমির পরিধি বাড়িয়ে নেওয়ার অভিযোগ আসে প্রায়শই।

    এই যৌথ ইনস্পেকশনে তা ধরা পড়ে যায়। তা ধরার জন্য দুই সরকারের আধিকারিকদের কাছে মেকানিজ়ম রয়েছে। নির্দিষ্ট স্থানাঙ্ক অনুযায়ী পিলার পুনঃস্থাপন করতে হয়। সরকারি সূত্রের দাবি, পিলার সরিয়ে নিজের জমি বাড়িয়ে নেওয়ার চাষিদের এই কারসাজি কখনও নজরে আসে এ পারের বিএসএফ (বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স) বা ও পারের বিজিবি (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ)–র। কখনও স্থানীয় প্রশাসনের কানে যায় সে কথা। তবে প্রশাসন বা দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী নিজেরা পিলার আগের জায়গায় ফিরিয়ে আনার কাজ করে না। সেই কাজ বর্তায় এই জয়েন্ট ইনস্পেকশন টিমের উপরে।

    ভারতের হয়ে এই কাজ করে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ডিরেক্টরেট অফ ল্যান্ড রেকর্ডস অ্যান্ড সার্ভে’। আর বাংলাদেশের পক্ষে থাকে সে দেশের ‘ডিরেক্টর জেনারেল অফ ল্যান্ড রেকর্ডস অ্যান্ড সার্ভে’। দুই পক্ষ বৈঠক করে প্রতি বছর নভেম্বরের একটি দিন ঠিক করে। সেই দিন থেকে শুরু হয় ইনস্পেকশন। এক আধিকারিকের কথায়, ‘প্রতি বছর পুরো সীমান্ত ঘুরে দেখা সম্ভব হয় না। তাই বাই রোটেশন চার–পাঁচটি জেলা ধরে এই কাজ চলে। পরের বছর হাত দেওয়া হয় অন্য জেলায়। এর জন্য কখনও দুই, কখনও তিন, কখনও চারটি দলও গঠন করা হয়।’

    তারা সশরীরে গিয়ে যখন দেখে পিলার সরানো হয়েছে, তখন তারা সেই পিলার আগের জায়গায় বসিয়ে আসে। কোথাও পিলারের ভগ্নদশা দেখতে পেলে তা সারানোর ব্যবস্থা তারাই করে।

    সূত্রের খবর, বাংলাদেশে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে সে দেশের ‘ডিরেক্টর জেনারেল অফ ল্যান্ড রেকর্ডস অ্যান্ড সার্ভে’–কে। তাঁর জায়গায় নতুন যিনি এসেছেন, তিনি নাকি এই জয়েন্ট বাউন্ডারি মেনটেন্যান্স ওয়ার্ক শুরু করতে উদগ্রীব। তবে কেন্দ্র ও রাজ্যের তরফে সে ভাবে সাড়া মেলেনি। কেন?

    রাজ্য সরকার সূত্রের দাবি, সারা বছরই এই পিলারগুলোর উপর নজর রাখা হয়। তবে মেনটেন্যান্সের কাজ এখনও শুরু করা যায়নি, কারণ, কেন্দ্রীয় পূর্ত বিভাগ (সিপিডব্লিউডি)–এর তরফে টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু করতে দেরি হয়েছে। এর সঙ্গে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির কোনও যোগ নেই বলে দাবি রাজ্যের এক আধিকারিকের। তাঁর আশা, খুব শিগগিরই কাজ শুরু হবে।

    এই জয়েন্ট বাউন্ডারি মেনটেন্যান্স ওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত থাকে বিএসএফ-ও। বাহিনী সূত্রের খবর, ‘উপরমহল’ থেকে এখনও নির্দেশ না–আসায় কাজ শুরু করা যায়নি।

  • Link to this news (এই সময়)