এক ক্লিকে পঞ্চায়েতের সব শংসাপত্র, লাল ফিতের ফাঁস আর নয়, রাজ্যজুড়ে শুরু কাল থেকেই
বর্তমান | ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ইংরেজি নতুন বছরের প্রাক্কালে গ্রামবাংলার মানুষের জন্য সুখবর এনে দিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। ইনকাম সার্টিফিকেট হোক বা ক্যারেক্টার সার্টিফিকেট—এরকম মোট ছ’টি জরুরি নথির জন্য গ্রামের মানুষকে আর পঞ্চায়েত সদস্যের দুয়ারে বা সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ে ছুটে ছুটে হয়রান হতে হবে না। কাল, শুক্রবার থেকে অনলাইনে মিলবে এই পরিষেবাগুলি। নির্দিষ্ট পোর্টালে কয়েকটি ক্লিকের মাধ্যমে হাতে চলে আসবে কাঙ্খিত শংসাপত্র। রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার বলেন, ‘অনেক সময় দেখা যায়, সাধারণ একটি শংসাপত্রের জন্য চূড়ান্ত দুর্ভোগ পেতে হচ্ছে মানুষকে। পঞ্চায়েত কার্যালয়ে হত্যে দিয়ে পড়ে থাকতে হয় কখনও কখনও। মানুষের এই ভোগান্তি নবান্নের কাছে একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। এই ধরনের দুর্ভোগ থেকে মানুষকে রেহাই দেওয়ার কথা মুখ্যমন্ত্রী বরাবর বলে এসেছেন। তাই এই অনলাইন পরিষেবা চালু করে পরিষেবাগুলি লাল ফিতের ফাঁস থেকে মুক্ত করল রাজ্য পঞ্চায়েত দপ্তর।’
কোন কোন শংসাপত্র মিলবে অনলাইনে? এর জন্য আবেদনই বা কীভাবে করতে হবে? সাইবার ক্রাইমের থাবা থেকে সুরক্ষিত থাকবে তো সার্বিক পরিষেবা? রাজ্য প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, জাতিগত শংসাপত্রের আবেদনের জন্য পঞ্চায়েত প্রধানের শংসাপত্র, ক্যারেক্টার সার্টিফিকেট, ব্যক্তি পরিচয়পত্র, রেসিডেন্সিয়াল সার্টিফিকেট, ইনকাম সার্টিফিকেট মিলবে অনলাইনে। চাকরির ক্ষেত্রে বা উচ্চশিক্ষা সহ নানা প্রয়োজনে এসব শংসাপত্রের দরকার পড়ে। এর পাশাপাশি তালিকায় যুক্ত করা হয়েছে ডিসট্যান্স সার্টিফিকেটকেও। বিশেষ করে কলেজ-ইউনিভার্সিটির পড়ুয়াদের কাজে লাগে এই শংসাপত্র। উদাহরণ দিয়ে এক আধিকারিক বলেন, ‘ধরুন, পুরুলিয়ার কোনও ছাত্র কলকাতার কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেয়েছেন। ওই ছাত্র যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলে থাকার জন্য আবেদন করতে চান, সেক্ষেত্রে ডিসট্যান্স সার্টিফিকেট দরকার পড়বে। তাই এই সার্টিফিকেটটিও অনলাইনে প্রদানের সিদ্ধান্ত হয়েছে।’
পঞ্চায়েত দপ্তরের পোর্টালে ঢুকে ‘সিটিজেনস কর্নার’-এ গিয়ে সংশ্লিষ্ট লিঙ্কে ক্লিক করে শংসাপত্রের জন্য আবেদন করা যাবে। নির্দিষ্ট কয়েকটি নথি ও তথ্য আপলোড করলেই মিলবে সার্টিফিকেট। তবে তা দেওয়ার আগে আবেদনকারীর দেওয়া সমস্ত তথ্য ও নথি যাচাই করে নেওয়া হবে। একজনের সার্টিফিকেট যাতে অন্য কেউ ডাউনলোড না করতে পারে, তা নিশ্চিত করতে বাড়তি সতর্কতা নেওয়া হচ্ছে। আবেদনকারীকে প্রথমেই দিতে হবে নিজের মোবাইল নম্বর। তাঁর মোবাইলে পাঠানো ওটিপি দিলে তবেই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হবে। অর্থাৎ, এই ব্যবস্থায় একজনের শংসাপত্র অন্য কারও হাতে যাওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই, যদি না সংশ্লিষ্ট আবেদনকারী নিজেই তাঁর মোবাইলে পাঠানো ওটিপি অন্য কাউকে জানিয়ে দেন।
প্রসঙ্গত, কয়েক মাস আগেই এই পরিষেবা চালুর বিষয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল রাজ্য সরকার। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করে নতুন বছর শুরুর আগেই গ্রামবাংলার মানুষকে ‘উপহার’ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।