• ‘শুধু তোমাকেই ভালোবেসে…’, পুরসভার ‘LOVE’ চুরি করে স্ত্রীকে উপহার, থানাতেই মধুরেণ সমাপয়েৎ
    এই সময় | ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪
  • কে বলেছে বিয়ের পর আলু-পেঁয়াজের দাম, জামাকাপড় কেনার সাবান, ফ্যান গালা ঝরঝরে ভাতের দাবিতে ভালোবাসা মরে যায়? সবটা হয়তো সত্যি নয়! অন্তত সে প্রমাণ দিলেন বীরভূমের সিউড়ির বাপন বাদ্যকর। বুকে একরাশ সাহস সঞ্চয় করে পুরসভার ‘লাভ’ সাইন চুরি করলেন তিনি—বউকে ভালোবেসে! এই ‘লাভ চোর’ পেশায় দিনমজুর। তাঁর কাণ্ড এখন ‘টক অফ দ্য টাউন’। আর হেসে কুটিপাটি খাচ্ছেন পুরসভা থেকে পুলিশ কর্মীরা। তবে সব শেষে মধুরেণ সমাপয়েৎ।  

    শহর সৌন্দর্যায়নের জন্য সিউড়ি পুরসভার তরফে ‘আই লাভ সিউড়ি’ লেখা একটি বোর্ড লাগানো হয়েছিল। কিন্তু বড়দিনের আগের রাতে সেই বোর্ড থেকে গায়েব হয়ে যায় ‘লাভ’ চিহ্নের ডিজিটাল গ্লোয়িং সাইনটি। দৃশ্যটি নজরে আসার পর তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠেন পুরসভার আধিকারিকরা। অভিযোগ জানানো হয় সিউড়ি থানায়। ভালোবাসার চিহ্ন চুরি করে কার কী লাভ? সাত পাঁচ ভেবে তদন্তে নামে সিউড়ি থানার পুলিশ। খতিয়ে দেখা হয় সিসিটিভি ফুটেজও। আর তা দেখেই  বীরভূমের মহম্মদবাজারের বাসিন্দা বাপন বাদ্যকরকে আটক করে পুলিশ।

    কিন্তু ‘বাপন উবাচ’ শুনে রীতিমতো আক্কেল গুডুম দুঁদে পুলিশ অফিসারদেরও। কান্না জড়ানো গলায় এই যুবক জানান, বড়দিনে স্ত্রীকে বিশেষ কিছু উপহার দিতে চেয়েছিলেন। পকেট সঙ্গ দেয়নি। তাই লাভ চিহ্ন চুরি করেন।  

    সবশুনে ততক্ষণে হাসি রোল ওঠে থানায়। পরে কয়েকজন পুলিশ কর্মী এবং সিউড়ি পুরসভার চেয়ারম্যান উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় একগুচ্ছ লাল গোলাপ কিনে দেন বাপনকে। এ দিকে স্বামীকে পুলিশে ধরার খবর শুনে ততক্ষণে থানায় ছুটে এসেছেন স্ত্রীও। থানার সামনে হাঁটুমুড়ে বসে স্ত্রীকে লাল গোলাপ দেন বাপন। সঙ্গে স্ত্রীর পায়ে হাত দিয়ে প্রতিজ্ঞা করেন, আর কোনওদিন চুরি করবেন না। 

    এই মর্মে বাপনকে দিয়ে মুচলেকাতেও সই করানো হয় । সিউড়ি পুরসভার চেয়ারম্যান উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়ের সহাস্য মন্তব্য ,‘আমার জীবনে এই ধরনের ঘটনা কখনও দেখিনি। প্রথমে খুব রাগ হয়েছিল। সৌন্দর্যায়নের জন্য পুরসভা ওই বোর্ড লাগিয়েছিল। বাপনের মুখ থেকে সবটা শুনে আমি হাসব না কাঁদব, প্রথমে বেশ কিছুক্ষণ বুঝতে পারিনি। ও প্রতিজ্ঞা করেছে আর কোনওদিন চুরি করবে না।’ 

    যাকে ভালোবেসে ‘লাভ চোর’ হয়েছিলেন বাপন, কী বলছেন তিনি? সংবাদ মাধ্যমে মুখ খুলতে চাননি বাপনের স্ত্রী। অবাক চোখে শুধু জীবনসঙ্গীকে বার কয়েক দেখেছিলেন মাত্র। শুধু মাঝে একবার স্বামীর দিকে ‘লুক’ দিয়ে বিড়বিড় করেছিলেন, ‘ঘরে চলো, তোমার হচ্ছে।’

  • Link to this news (এই সময়)