জ়িনাত মনে করিয়ে দিচ্ছে ‘ডন’-এর কথা। থুড়ি, ‘ডন’-এর সংলাপ: ডন কো পকড় না মুশকিল হি নহি, নামুমকিন হ্যায়’। রেডিয়ো কলার, টোপ (লাইভ বেইট)… কিছুতেই নাগাল পাওয়া যাচ্ছে না জ়িনাতের। গত প্রায় ২৪ ঘণ্টায় (বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর থেকে বুধবার, ২৬ ডিসেম্বর এই প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়া পর্যন্ত) একটি টোপেরও ধারে কাছে যায়নি জ়িনাত। অপেক্ষাই সার হলো বন দপ্তরের কর্তাদের। এ দিকে, রাইকা পাহাড় সংলগ্ন গ্রাম থেকে নিখোঁজ হওয়া প্রায় ২০টি ছাগলের দেহাবশেষ উদ্ধার হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রাথমিকভাবে এমনই খবর পেয়েছেন বন দপ্তরের কর্মীরা। যা তাঁদের চিন্তা আরও বাড়িয়েছে। ভরা পেটে থাকা জ়িনাত যে ফাঁদে থাকা জন্তু শিকার করবে না, তা পরিষ্কার। তবে এই দেহাবশেষ জ়িনাতের কোন সময়ের ‘মিল’ (লাঞ্চ না ডিনার), তা বোঝার চেষ্টা চলছে।
বন দপ্তরের কর্তাদের একাংশের বক্তব্য, ‘ছাগলের মাংস মনে ধরেছে জ়িনাতের। নিখোঁজ থাকা অনেক ছাগলেরই দেহাবশেষ পাওয়া গিয়েছে। আগেও জ়িনাত যে ছাগল শিকার করে খেয়েছে, তা আমরা দেখেছি। পেট ভরা থাকলে টোপের জন্তু খাবে না—এটাই আমাদের চিন্তার। ফলে আমাদের চাপ আরও বাড়ল।’ পুরুলিয়ার কংসাবতী দক্ষিণ ডিভিশনের ডিএফও পূরবী মাহাতো এই সময় অনলাইনকে বলেছেন, ‘ছাগলের কিছু দেহাবশেষ পাওয়া গিয়েছে—এটা ঠিক। সব চেষ্টাই করা হচ্ছে।’
পাশাপাশি ওই এলাকায় বন্য শুয়োর এবং হরিণেরও অভাব নেই। ফলে সেগুলিই খেয়ে চলেছে সে। বুধবারের পর বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্তও পুরুলিয়ার বান্দোয়ানে রাইকার জঙ্গলে বনকর্মীদের সঙ্গে লুকোচুরি খেলা জারি রেখেছে সিমলিপাল থেকে চলে আসা বাঘিনি। ছাগল মেরেই পেট ভরিয়ে চলেছে সে। বনকর্তারা বলছেন, ‘আদিবাসী গ্রামে যথেচ্ছ পরিমাণ ছাগল প্রতিপালন করা হয়। গত কয়েক দিনে ছাগল চরাতে পাঠানো হয়েছিল জঙ্গলে। সেগুলিরই কয়েকটি মারা গিয়েছে জ়িনাতের হাতে। বুধবার নতুন করে আর গবাদি পশু জঙ্গলে চরতে পাঠাননি কেউই।’ বনাধিকারিকদের আশা, ওই ‘সাপ্লাই লাইন’ বন্ধ হওয়ায় টোপের কাছাকাছি আসতে পারে জ়িনাত। তখন তাকে ধরা সম্ভব হবে। এই দেহাবশেষ নিয়েও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।
ময়না তদন্তের চূড়ান্ত রিপোর্ট না–এলেও মঙ্গলবার, ২৫ ডিসেম্বর মৃত ছাগলগুলি দেখে পশু চিকিৎসকরা প্রাথমিক ভাবে মনে করছেন, বাঘের হামলাতেই ঘাড়ে গভীর ক্ষত তৈরি হয়েছিল তাদের। এক বনকর্তা জানিয়েছেন, যে জায়গায় ওই বাঘিনি ছাগলগুলিকে মেরেছিল, সে দিকেও বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে। রাখা হয়েছে টোপও। কারণ খিদে মেটার পর ‘মড়ি’কে (অর্ধভুক্ত শিকার) রেখে চলে যায় বাঘ। আবার খিদে পেলে সে ওই জায়গায় ফিরে আসে। বাঘের এই অভ্যাস মাথায় রেখেই তৈরি থাকছে নজরদার দল। বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর সারাদিন জ়িনাতের গতিবিধি খুব সীমিত ছিল। ওই কর্তা বলছেন, ‘পাহাড় থেকে নেমে খাবার খেয়ে আবার গুহার মতো জায়গায় ফিরে যাচ্ছে জ়িনাত।’