‘স্মৃতিশক্তি’। নাইনটিজ়-এর বাঙালিকে এই শব্দটা বললেই কোন ছবি ভেসে আসবে চোখের সামনে, বলতে পারবেন? নো পয়েন্ট ফর গেসিং। জনপ্রিয় টনিক ব্রেনোলিয়ার বিজ্ঞাপন। আর তার সঙ্গে বিখ্যাত সেই ক্য়াচলাইন: ‘আসল ব্রাহ্মীশাকের রস থেকে তৈরি ব্রেনোলিয়া।' ছেলেমেয়ে পরীক্ষায় ভালো ফল করুক, এই প্রার্থনা করতেন যে সব মা-বাবা, তাঁদের জন্য ব্রাহ্মীশাকের ‘বিকল্প’ হয়ে উঠেছিল ব্রেনোলিয়া। নাইনটিজ় থেকে ২০২৪… এ বার ছেলেমেয়ের পরীক্ষা নয়, পরীক্ষায় বসেছে খোদ ব্রাহ্মীশাকই। রসগোল্লা, চাল, শাড়ির পর এ বার বাংলার নানা প্রান্তে অবহেলায় ‘বেড়ে ওঠা’ ব্রাহ্মী শাককে জিআই স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি উঠল। আরও নির্দিষ্ট করে বললে মূলত সুন্দরবনের ব্রাহ্মী শাকের জন্য জিআই ট্যাগের আবেদন করা হয়েছে।
জানা গিয়েছে, সন্দেশখালির জয়গোপালপুর ইউথ ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের তরফে বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় এই আবেদন করা হয়েছে। দাবি, বিষয়টি নিয়ে অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছেন তাঁরা। ওই এলাকার অর্থাৎ সুন্দরবনের ব্রাহ্মী শাক যে স্বতন্ত্র এবং তার যে নিজস্ব গুণাবলি রয়েছে, তা প্রমাণ করার জন্য প্রয়োজনীয় নথি জমাও দেওয়া হয়েছে। ব্রাহ্মী শাকের উপকারিতা বাঙালির মুখে-মুখে ফেরে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্রাহ্মী শাকে থাকা ব্যাকোসাইড স্নায়ুকোষের উপরে রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করে সেগুলিকে নষ্ট হয়ে যাওয়া থেকে প্রতিরোধ করতে পারে।
জয়গোপালপুর ইউথ ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের দীনবন্ধু দাস জানান, আইসিএআর (Indian Council of Agricultural Research Krishi Bhavan) মেডিসিন প্ল্যান্টেশন ডিপার্টমেন্টের তরফে বাংলার সুন্দরবন এলাকার ব্রাহ্মী শাক পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। সম্প্রতি বিশেষজ্ঞরা সেই শাক পরিদর্শন করে তার নমুনাও সংগ্রহ করেছেন।
দীনবন্ধুবাবু আরও জানান, দুই ২৪ পরগনা, মেদিনীপুর, নদিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকাগুলিতে ব্রাহ্মী শাক পাওয়া যায়। মূলত লবনাক্ত জায়গায় এই শাক মেলে। আর সুন্দবনের এই শাকের মান আরও ভালো। এ ছাড়াও বিভিন্ন জায়গায় পুকুরের ধারে এ ধরনের শাক পাওয়া যায়। বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে যে কাজ চলছে, তার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছেন প্ল্যানটেশন, স্পাইসেস, মেডিসিনাল অ্যান্ড অ্যারোমটিকে ক্রপ সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক তথা বিজ্ঞানী দীপক ঘোষ। এই সময় অনলাইনকে তিনি বলেন, ‘ডাইরেক্টরেট অফ অ্যারিকানাট অ্যান্ড স্পাইসেস ডেভেলপমেন্টের অন্তর্গত মিশন ফর ইন্টিগ্রেটেড ডেভেলপমেন্ট অফ হর্টিকালচার প্রকল্পে এই আবেদন করা হয়েছে। সুন্দরবনের ব্রাহ্মী শাকের জিআই ট্যাগের আবেদন জানানো হয়েছে, তা স্বীকৃতি পাবে কি না, তা ঠিক সময়েই জানতে পারব।’
মনে করা হচ্ছে, জিআই ট্যাগ পাওয়া গেলে পরবর্তীতে ব্রাহ্মী শাক ব্যবসার ক্ষেত্রে অনেকাংশেই উন্নতি হবে। বর্তমানে প্রায় ৩০ টাকা কেজিতে এই শাক বাজারে বিক্রি হয়। তবে মধ্যস্থতাকারীদের দাপটে ঠিকমতো দাম পান না চাষিরা। সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকার স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা এই শাকের চাষ-পরিচর্যার কাজে যুক্ত।
প্রসঙ্গত, এই শাকের রয়েছে বিবিধ গুণ। তাই নিয়মিত এই শাক খাওয়া উচিত। এক্ষেত্রে ব্রেন ডেভেলপমেন্ট থেকে শুরু করে স্মৃতি বাড়ানো, মনোসংযোগ বৃদ্ধির কাজটি করে এই শাক। আর এ নেহাত কথার কথা নয়। বিজ্ঞান বারবার প্রমাণ করেছে, এই শাক খেলে উপকার মেলে। তাই তো গবেষকরা এই শাক খাওয়ার পরামর্শ দেন। আর সে কারণেই নাইনটিজ়-এর বাঙালির স্মৃতিতে আজও সতেজ জনপ্রিয় টনিকের বিজ্ঞাপনের ক্যাচলাইন: ‘আসল ব্রাহ্মীশাকের রস থেকে তৈরি ব্রেনোলিয়া।’