• ধানতলা ও হাঁসখালি এলাকা  থেকে ধৃত ১০ অনুপ্রবেশকারী
    বর্তমান | ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, রানাঘাট: ‘স্যর, আমাদের এখানেই গুলি করে মেরে ফেলুন। কিন্তু ওই দেশে আর পাঠাবেন না।’ থানা থেকে আদালতে নিয়ে যাওয়ার গাড়িতে তোলার সময় ছিটকে বেরিয়ে এসে পুলিসের কাছে এই কাতর আর্তি এক মধ্যবয়স্কা মহিলার। যাকে বলে  একপ্রকার অসহায় আত্মসমর্পণ। মহিলা বেশ বিধ্বস্ত। চোখ বসে গিয়েছে। মুখ ম্লান। ঝলকে দেখলেই বোঝা যায়, গত ক’দিন নাগাড়ে কেঁদেছেন তিনি। খানিক দূরে দাঁড়িয়ে তাঁর নাবালিকা মেয়ে। ভয়ে থরথর করে কাঁপছে সে। ওই মহিলার পরিচয় ইতিমধ্যে থানার আশপাশের মানুষজন জেনে গিয়েছেন। তিনি বাংলাদেশের নাগরিক। নাম রত্নারানী দেবনাথ। সে দেশের নির্যাতিত, অত্যাচারিত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি। ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে বছর পনেরোর মেয়েকে নিয়ে একটু আশ্রয়ের খোঁজে সীমান্ত পেরিয়েছিলেন। শেষরক্ষা হয়নি। ধরা পড়ে গিয়েছেন পুলিসের জালে। 


    তবে, রত্নাদেবী একা নন। বাংলাদেশে অস্থির পরিস্থিতির জেরে অনুপ্রবেশের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। ঠেকাতে তৎপর বিএসএফ ও পুলিস। অভিযান চলছে নিরবচ্ছিন্নভাবে। তাতেই ধরা পড়েছে একের পর এক বাংলাদেশি নাগরিক। বুধবারও বুধবার বিশেষ সূত্রে খবর পেয়ে সীমান্তের একাধিক এলাকায় অভিযান চালায় ধানতলা এবং হাঁসখালি থানা পুলিসের একটি বিশেষ দল। গ্রেপ্তার করা হয় এক নাবালিকা সহ ১০ জন বাংলাদেশিকে।  তাঁদের মধ্যে পাঁচজন পুরুষ এবং চারজন মহিলা। বরণবেরিয়া, কানিবাউনি, পাঁচবেড়িয়া সহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযানে চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। পাশাপাশি  আন্তর্জাতিক মানব পাচার চক্রের পাঁচজন দালালও ধরা পড়ে। ধৃত অনুপ্রবেশকারীদের মধ্যে রত্নারানী দেবনাথ ছাড়াও রয়েছেন মনচুর মণ্ডল, অর্চনা দেবনাথ, কালাম মণ্ডল, ফারুক শেখ, শাপলা গাজী, সায়ন শিকদার, জয় বিশ্বাস এবং মনি বিশ্বাস। বৃহস্পতিবার তাঁদের ধানতলা থানা থেকে নিয়ে যাওয়া হয় আদালতে। সঙ্গে পাঁচজন দালালও। বাংলাদেশি নাগরিকদের ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেয় আদালত। 


    এদিকে, অনুপ্রবেশের পথ এবং আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি জানতে তদন্ত শুরু করেছে রানাঘাট জেলা পুলিস। ডেপুটি সুপারিনটেনডেন্ট অফ পুলিস (সীমান্ত) সোমনাথ ঝা বলেন, ‘আমরা ধৃতদের বিরুদ্ধে অনুপ্রবেশের আইন অনুযায়ী মামলা রুজু করেছি। কেন তাঁরা সীমান্ত টপকে বেআইনি পথে এদেশে এলেন তার কারণ অনুসন্ধান করা হবে। তবে আন্তর্জাতিক মানব পাচার চক্রের দালালদের আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করে বেশ কিছু তথ্য তালাশ করব। সর্বতোভাবে এই চক্রকে নিষ্ক্রিয় করাই আমাদের প্রথম এবং প্রধান লক্ষ্য।’ -নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)