সংবাদদাতা, কাটোয়া: বাইরে থেকে দেখলে যে কোনও পণ্যবাহী ম্যাটাডোর গাড়ির মতোই লাগবে। সামনে কাচ, স্টিয়ারিং হুইল সবই রয়েছে। গাড়ির সামনের অংশ রং করা হয়েছে। কিন্তু আসলে তা অবৈধ মোটরভ্যান! কাটোয়ার রাস্তায় দাপিয়ে মালপত্র বহন করছে এই অবৈধ গাড়ি। এতে সরকারি রাজস্বের তো ক্ষতি হচ্ছেই, যে চালকরা আইন মেনে গাড়ি কিনে পণ্য পরিবহণ করছেন-তাঁরাও ভাড়া না পেয়ে সমস্যায় পড়ছেন। গতবছরই এরকম অবৈধ গাড়ির ধাক্কায় অগ্রদ্বীপে এক শিশুর প্রাণ গিয়েছিল। তারপরও এই গাড়ির দাপট বেড়ে চলেছে।
প্রথমদিকে বাইকের হ্যান্ডেল, ইঞ্জিন ব্যবহার করেই অবৈধ মোটরভ্যান তৈরি হতো। যার জেরে তিনচাকার সাইকেল ভ্যান চালকরা কাজ হারিয়েছিলেন। এখন ধীরে ধীরে বাইকের ইঞ্জিনের বদলে ট্রাক্টর বা বাতিল লরির ইঞ্জিন ব্যবহার করা হচ্ছে। তাতে গিয়ার, ব্রেক, স্টিয়ারিং হুইল সবই থাকছে। এমনকী, পেট্রল-ডিজেলে নয়, এই গাড়ি চলছে কেরোসিনে। যার কালো ধোঁয়ায় পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। পরিবহণ দপ্তরকে কোনও ট্যাক্স দিতে হচ্ছে না। অথচ এই অবৈধ গাড়ি অন্য যে কোনও গাড়ির মতোই পণ্য পরিবহণ করছে। দুর্ঘটনা ঘটলে ক্ষতিপূরণের বালাই নেই। একশ্রেণির দালালদের মধ্যস্থতায় মিটিয়ে ফেলা হয়। চলতি মাসে কাটোয়া ট্রাফিক পুলিস বেশ কয়েকটি এরকম মোটরভ্যান বাজেয়াপ্ত করেছে। প্রত্যেকটায় স্টিয়ারিং হুইল ছিল। কাটোয়ার ওসি(ট্রাফিক) স্নেহাশিস চৌধুরী বলেন, সাড়ে তিন লক্ষ টাকা খরচ করে বিভিন্ন গ্যারেজ থেকে এরকম বেআইনি মোটরভ্যান তৈরি করানো হচ্ছে। আমরা এর বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে যাব। কাটোয়ার অগ্রদ্বীপে গত বছর স্টিয়ারিং হুইল দেওয়া মোটরভ্যানের ধাক্কায় মর্মান্তিকভাবে এক শিশুর প্রাণ যায়। দুর্ঘটনা মাঝেমধ্যেই ঘটছে। তবু মোটরভ্যান চলাচলে লাগাম টানতে পারছে না প্রশাসন। জানা গিয়েছে, পশ্চিম বর্ধমানের পানাগড়ে বহু গ্যারেজ আছে। সেখান থেকে লরি, ট্রাক্টরের যন্ত্রাংশ কেনা হয়। তারপর গ্রিল কারখানায় মোটরভ্যানের ডালা, মডেল বানিয়ে ওই সমস্ত বাতিল যন্ত্রাংশ লাগিয়ে দেওয়া হয়। তারপর এক পোঁচ রং মেরে সেই গাড়ি চালানো হচ্ছে। লরি চালক নুরুল হাসান বলেন, আগে পূর্বস্থলীর পারুলিয়া থেকে লরি বা ছোট ম্যাটাডোরে কাটোয়ায় সব্জি নিয়ে আসা হতো। এখন আমাদের আর ভাড়া জোটে না। দিব্যি মোটরভ্যানেই সেসব নিয়ে আসা হচ্ছে।এআরটিও অরুণাভ শর্মা বলেন, আমরা সাধারণ রেজিস্ট্রেশন করানো গাড়ির কিছু ক্রটি দেখলে আটকাতে পারি। কিন্তু মোটরভ্যানের রেজিস্ট্রেশন নেই। সেগুলির বিরুদ্ধে পুলিস অভিযান চালায়।-নিজস্ব চিত্র