• উপার্জনে নয়া দিশার লক্ষ্যে চাষিরা, একই জমিতে দুই ভিন্ন সব্জির চাষ হচ্ছে ঝাড়গ্রামে
    বর্তমান | ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, ঝাড়গ্ৰাম: ঝাড়গ্রামের সাতপাটি গ্ৰামের চাষিরা আলু চাষে নতুন দিশা দেখাচ্ছেন। জেলায় আলু চাষের জমির অভাব, তাই কুদরি চাষের জমিতেই আলু চাষ হচ্ছে। মিশ্র চাষের মাধ্যমে জেলার চাষিরা সব্জি চাষের সঙ্গেই আলুর উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করছেন।


    ঝাড়গ্রামে সুবর্ণরেখা, কংসাবতী ও ডুলুং নদীর দুই তীরের বেলে মাটিতে  আলু চাষ হয়। ঝাড়গ্রাম ব্লকের বাঁদগোড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের সাতপাটিকে   ঝাড়গ্রামের সব্জির আঁতুড় ঘর বলা হয়। বছরভর সেখানে করলা, বেগুন, ঝিঙ্গে, কুদরি, বরবটি সহ বিভিন্ন প্রকারের সব্জি চাষ হয়ে থাকে। সব্জি চাষের পর গাছগুলি জমি থেকে উপড়ে ফেলা হয়। তারপর নতুন সব্জির চারা রোপণ করা হয়। কিন্তু কুদরি চাষের ক্ষেত্রে ওই গাছকে কখনও গোড়া থেকে উপড়ে ফেলা হয় না। জমিতে টোপ তৈরি করে সারি সারি ভাবে লাগানও হয় কুদরির গাছ। মাচার সাহায্যে সেগুলিকে বাঁচিয়ে রাখা হয়। শীতে কুদরির তেমন একটা ফলন হয় না। কুদরি গাছের গোড়াগুলি বাদ দিয়ে জমির ফাঁকা স্থানে আলুর বীজ বপন করা হয়।  কুদরি চাষের জমিতেই আলু চাষ হচ্ছে‌। আলুর জন্য যে পরিমাণ সার দেওয়া হচ্ছে, তা কুদরি গাছেরও কাজে লাগছে। ফলে অল্প খরচেই ভালো উপার্জনের পথ দেখছেন সাতপাটি এলাকার আলু চাষিরা। কুদরি চাষের জমিতে আলু চাষ করলে এক বিঘা জমির মধ্যে প্রায় ১৬ কাঠা জমিতে আলু লাগানো সম্ভব হয়। বাকি চার কাঠা জমিতে থেকে যায় কুদরি গাছগুলি। স্বাভাবিক আলু চাষের জমিতে যেমন আলুর ফলন হয়, প্রায় সমানই আলুর ফলন হয় কুদরি চাষের জমিতেও। জমিতে কাঠা পিছু প্রায় দেড় কুইন্টাল পর্যন্ত আলু উৎপাদন হয়ে থাকে। 


    সাতপাটি এলাকার চাষি নন্দ ধল বলেন, বাজারে আলুর চাহিদা রয়েছে। এই এলাকায় চাষের জমি তুলনামূলক কম। কুদরি চাষের সঙ্গেই জমিতে আলু চাষ করা হচ্ছে। বাঁশের মাচা করে তুলে হচ্ছে কুদরি চাষ, নীচে হচ্ছে আলু চাষ। ফলে একই জমিতে দু’টি ফসল হচ্ছে। এই পদ্ধতিতে চাষ করে বাড়তি উপার্জন হচ্ছে।  জামবনি ব্লকের ডুমুরিয়া এলাকার চাষী রবীন্দ্র দলাই বলেন, এই বছর প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে সব্জি চাষের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আলু চাষও দেরিতে শুরু হয়েছে। চাষিরা এখানে কুদরি চাষের সঙ্গে আলু চাষও শুরু করেছেন। আলুর উৎপাদন বাড়ার সঙ্গে বাড়তি উপার্জনও হচ্ছে। ঝাড়গ্রামের উপ কৃষি অধিকর্তা অজয় শর্মা বলেন, ঝাড়গ্রামের নদী তীরবর্তী এলাকার উর্বর জমিতে ভালো আলু চাষ হয়। প্রাকৃতিক বিপর্যয়, হাতির তাণ্ডব সহ নানা কারণে ফসল নষ্ট হয়। এছাড়াও উর্বর জমির পরিমাণও সীমিত। জেলার চাষিরা চাষবাসের লোকসান ঠেকাতে নানা পথের সন্ধান করছেন। কোনও একটা চাষে ক্ষতি হলে অন্য চাষে খরচ উঠে যাবে। কুদরি চাষের জমিতে আলু চাষ করে চাষিরা এখানে লাভবান হচ্ছেন। -নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)