• কোলিয়ারির জলে নষ্ট কয়েকশো বিঘা ধানজমি
    বর্তমান | ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, আসানসোল: কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্থ সংস্থা ইসিএলের বিরুদ্ধে আন্দোলনে উত্তাল হল শিল্পাঞ্চলের দুই প্রান্ত। রানিগঞ্জ থানার বাঁশড়ায় ৮০ একর ধান জমি অধিগ্রহণ না করেই সেখানে কয়েক বছর ধরে নির্বিচারে কোলিয়ারির জল ফেলা হচ্ছে। বছরের পর বছর জমি অধিগ্রহণ করার আশ্বাস দেওয়া হলেও সেই কাজ হয়নি। বাধ্য হয়ে বৃহস্পতিবার বাঁশড়া কোলিয়ারির সামনে প্রবল বিক্ষোভ দেখান বাসিন্দারা। কোলিয়ারির ভিতর ঢুকে কাজ বন্ধ করে দেন। স্তব্ধ হয়ে যায় উৎপাদন। বাসিন্দারা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, এক মাস অপেক্ষা করব। তাতে কাজ না হলে লাগাতার কোলিয়ারির কাজ বন্ধ করে বিক্ষোভ শুরু হবে। একই দিনে কুলটি থানার চিনাকুড়িতেও উত্তেজনা ছড়ায়। এদিন চিনাকুড়ি কোলিয়ারির গেট আটকে তুমুল বিক্ষোভ দেখান বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, স্থানীয়দের কাজ দেওয়া হচ্ছে না। চাকরির জন্য আন্দোলন করলে মিথ্যা অভিযোগ রুজু করা হচ্ছে পুলিসের কাছে। 


    আমরাসোতা গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান সঞ্জয় হেমব্রম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বাঁশড়া গ্রামের মানুষের জমিতে ইসিএল জল ফেলে চলেছে। ধানজমি নষ্ট হয়ে গিয়েছে। পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকেও বিষয়টি ইসিএলের নজরে আনা হয়েছিল। তাতেও তারা কোনও কর্ণপাত করেনি। 


    স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বাঁশড়া গ্রামকে কেন্দ্র করেই রয়েছে আমরাসোতা গ্রাম পঞ্চায়েত। বাঁশড়ায় একাধিক ওসিপি ও ভূগর্ভস্থ কয়লাখনি রয়েছে। কিন্তু তার আগে এই এলাকা সুজলা সুফলা ছিল। গ্রামের ভৈরবস্থান এলাকায় মন্দিরের পাশাপাশি তিন ফসলি ধানজমি ছিল। বেশ কয়েক বছর আগে নতুন ওসিপি হয়। ভূগর্ভস্থ খনির জলও সেই এলাকায় জমা হতে থাকে। ধীরে ধীরে ধানজমি ডুবতে থাকে। বাসিন্দারা ইসিএলের এই তুঘলকি সিদ্ধান্তে আপত্তি জানিয়ে আন্দোলন করে। অভিযোগ, জমি অধিগ্রহণ করার টোপ দিয়ে আন্দোলন দমিয়ে দেওয়া হয়। এভাবেই বছরের পর বছর ধরে কোলিয়ারির জল জমে এলাকাটি ঝিলের রূপ নিয়েছে। চাষিরা হা হুতাশ করে দিন কাটাচ্ছে। এদিন সেই সব এলাকার বাসিন্দারাই তুমুল বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে। আন্দোলনকারীদের চাপে কারখানার কাজ বন্ধ হয়ে যায়। বাঁশড়া গ্রামের বাসিন্দা ব্রজেশ্বর মণ্ডল বলেন, আমার গ্রামের ৪৫ জনের পাশাপাশি মোট ৬০ থেকে ৬৫ জন মানুষের জমি রয়েছে এখানে। প্রায় ৮০ একর জমি অধিগ্রহণ না করেই জলাভূমিতে পরিণত করেছে ইসিএল। এখানে তিনবার ধান চাষ হতো। আমরা ক্ষতিপূরণ না পেলে বৃহত্তর আন্দোলন হবে। 


    বিশ্বজিৎ মণ্ডল বলেন, আমরা কোলিয়ারির বিরোধী নই। তাই কোলিয়ারি যাতে নষ্ট না হয় তার জন্য পাম্প অপারেটরদের খাদান থেকে জল তোলার কাজ করতে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু উৎপাদন বন্ধ করিয়েছি। এদিন ইসিএলের বাঁশড়া গ্রুপ অব মা‌঩‌঩ইনসের এজেন্ট সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়কে ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। কুনুস্তোড়িয়া এরিয়ার জেনারেল ম্যানেজার এসসি মিত্রও ফোন ধরেননি, ভয়েস মেসেজের উত্তর দেননি। 


    চিনাকুড়ি-১ নম্বর কোলিয়ারি গেট আটকে বিক্ষোভ দেখান সেই এলাকার মানুষ। অভিযোগ, স্থানীয়দের কাজ দেওয়া হচ্ছে না। দীর্ঘক্ষণ এলাকাবাসী বিক্ষোভ দেখায় ও মিছিল করে। একইভাবে জামুড়িয়া থানার নিউ কেন্দায় ইসিএলের কোলিয়ারি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামল আদিবাসীরা। তাঁদের অভিযোগ, নিউকেন্দা ওসিপিতে বিকট বিস্ফোরণের জেরে শালডাঙা এলাকার বাড়ি ভেঙে পড়ছে। পুনর্বাসনের দাবিতে শালডাঙায় প্রতিবাদ সভা করে স্থানীয় এজেন্ট অফিসে ডেপুটেশন দেয় আদিবাসীরা।-নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)