নিজস্ব প্রতিনিধি, আসানসোল: শুধু রেলের নথি নকল করাই নয় হাইকোর্টের রায়ের ভুয়ো নথি তৈরি করত সুবেশা প্রীতি ম্যাডাম ও তার গ্যাং। আসানসোলের রেলের চাকরি প্রতারণা কাণ্ডে উঠে আসছে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। ভুয়ো চাকরি দিয়ে সেই চাকরিতে ছাঁটাইও করত প্রীতিরা। ম্যাডাম ফোন করে জানাত, আপনাদের প্যানেল হাইকোর্ট বাতিল করেছে। এরপর প্রস্তাব দেওয়া হতো, হাইকোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে মামলা করা হচ্ছে। আইনজীবীদের ফি দেওয়ার জন্য টাকা দিতে হবে। এভাবেই বিভিন্ন পন্থায় লক্ষ লক্ষ টাকা লুট করেছে আসানসোলের মক্ষীরানি প্রীতি আরোরা। তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে ডিসি ধ্রুব দাস বলেন, ‘আমরা পুরো বিষয়টি আরও গভীরে খতিয়ে দেখছি।’
চলতি মাসেই রেলের চাকরি দেওয়ার নাম করে বড় প্রতারণার হদিশ পায় আসানসোল দুর্গাপুর পুলিস কমিশনারেট। চক্রের জাল ছড়িয়ে সুদূর মুম্বই থেকে লখনউ, ধানবাদ, পাটনা, কলকাতা সর্বত্র। মূল মাথা বিহারের ভাগলপুরের হরেন্দর সিং হলেও কেন্দ্রীয় চরিত্রে ঝকঝকে তরুণী প্রীতি। প্রতারিতদের কাছে তার পরিচয়, রেলের উচ্চ পদস্থ আধিকারিক। প্রীতি ম্যাডাম নামে ডাকে সকলে। রেলের চাকরির প্রতিটি ধাপকে নিখুঁতভাবে নকল করত প্রতারক গ্যাং। প্রথমে ওএমআরশিট দিয়ে চাকরির পরীক্ষা নেওয়া হতো। তারপর মেডিক্যাল টেস্ট। কিছুদিন পর মিলত নকল নিয়োগপত্র। এমনকী, বিভিন্ন বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে তাঁদের ফিল্ড ডিউটিও করানো হতো। জানা গিয়েছে, প্রতারকরা কয়েক মাস চাকরিপ্রার্থীদের স্টাইপেন্ড দিত। তারপরই একদিন জানানো হতো, আপনাদের নিয়োগের প্যানেল বাতিল করে দিয়েছে হাইকোর্ট। নির্দেশনামার নকল করে নিয়োগপ্রার্থীদের কাছে নকল কাগজও পাঠানো হতো। তারপরই প্রীতি ম্যাডাম ভরসা দিয়ে বলতেন, আমরা রায়ের বিরুদ্ধে ডিভিশন বেঞ্চে যাব। এই বলে ফের চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে আরও একদফায় টাকা নেওয়া হতো। এতে দু’টি উদ্দেশ্য সফল হতো। একদিকে, আরও এক দফায় টাকা হাতিয়ে নেওয়া। অন্যদিকে, আদালতে চাকরির বিষয়টি বিচারাধীন। তাই দীর্ঘ সময়ে প্রতারিতরা অপেক্ষা করতেন রায় তাঁদের পক্ষে যাওয়ার আশায়। ফলে বেশিরভাগ প্রতারতি যুবক-যুবতী এখনও পুলিসের দ্বারস্থ হননি। পুলিসের আর্জি, যদি কেউ বা কারা রেলের চাকরি পাওয়ার নামে প্রতারিত হয়েছেন, দ্রুত থানায় অভিযোগ করুন। পুলিসের দাবি, প্রীতি ম্যাডামের কথার জালে ফেঁসে একশোর বেশি চাকরিপ্রার্থী প্রতারিত হয়েছেন। ধৃতদের ফোনের ডেটাবেস ঘেঁটে, বিভিন্ন নথি বাজেয়াপ্ত করে সেই তথ্যই এসেছে পুলিসের কাছে।