এই সময়, দুর্গাপুর: সামান্য একটা সালোঁ ভোলবদলে এখন শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত জেন্টস্ পার্লার। তার মালিক থাকে প্রায় ২৫ লাখ টাকার বাড়িতে। বিলাসবহুল জীবনযাপন। মাত্র তিন বছরে উজ্জ্বল প্রামাণিকের এই উত্থান দেখে প্রতিবেশীদের অনেকেই অবাক হয়েছিলেন। কোন মন্ত্রবলে উজ্জ্বলের এই সাফল্য বুঝে উঠতে পারছিলেন না কেউ। মঙ্গলবার রাতে হঠাৎ বাড়িতে হানা দেয় পুলিশ। গ্রেপ্তার করে উজ্জ্বলকে।
তার পরেই ঝুলি থেকে বেরিয়ে পড়ে বিড়াল। এসি জেন্টস্ পার্লারের আড়ালে বন্ধকি কারবারের পাশাপাশি চোরাই মোবাইল, মোটরবাইক, স্কুটি কেনা–বেচার ব্যবসা ফেঁদে বসেছিল উজ্জ্বল। রমরমিয়ে চলছিল সেই কারবার। কিন্তু শেষরক্ষা হলো না। দুর্গাপুরের কোক-ওভেন থানার পুলিশের হাতে ধরা পড়ে উজ্জ্বলের ঠাঁই হয়েছে এখন গারদে।
কোক-ওভেন থানা এলাকায় সিনেমা হল রোডের পুরুলিয়া বস্তিতে উজ্জ্বলের বাবার একটি সালোঁ ছিল। বাবার মৃত্যুর পর উজ্জ্বল সালোঁ চালাচ্ছিল। বাড়িতে রয়েছেন মা ও তিন বোন। সালোঁর রোজগারে কোনওরকমে দিন গুজরান হতো। হঠাৎ তিন বছর আগে খোলনলচে বদলে সেই সালোঁ এসি জেন্টস্ পার্লারে পরিণত হয়। এর পর স্থানীয় ক্ষুদিরামপল্লিতে প্রায় ২৫ লাখ টাকা খরচ করে বাড়ি তৈরি করে উজ্জ্বল।
ক্রমশ বিলাসবহুল জীবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে সে। প্রতিবেশীদের কেউ বুঝতে পারেননি যে উজ্জ্বল জেন্টস্ পার্লারের আড়ালে চোরাই গাড়ি ও মোবাইল কেনা–বেচার ব্যবসা শুরু করেছে। সঙ্গে বিভিন্ন জিনিস বন্ধক রেখে চড়া সুদে টাকাও দিত সে। মঙ্গলবার রাতে বাড়িতে পুলিশ এসে উজ্জ্বলকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়ার পর তার অবৈধ কারবারের ঘটনা প্রকাশ্যে আসে। উজ্জ্বলের বাড়ি থেকে ৬০টি মোবাইল ফোন ও ১৬টি মোটরবাইক বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ।
ডিসি (পূর্ব) অভিষেক গুপ্তা বলেন, ‘ধৃতের বাড়ি থেকে মোবাইল ও বাইক উদ্ধার হয়েছে। তাকে হেফাজতে নিয়ে জেরা করা হবে। এই চক্রের সঙ্গে আর কারা জড়িত রয়েছে তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। উজ্জ্বল মূলত রিসিভার ছিল। সূত্র মারফত খবর পেয়ে তার বাড়িতে অভিযান চালায় কোক-ওভেন থানার পুলিশ।’ বৃহস্পতিবার সকালে উজ্জ্বলকে দুর্গাপুর মহকুমা আদালতে পেশ করে পুলিশ। বিচারক তাকে ছ’দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।
উজ্জ্বলের বাড়ি থেকে এত মোবাইল ও মোটরবাইক উদ্ধারের ঘটনায় অবাক প্রতিবেশীরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘তিন বছরের মধ্যে উজ্জ্বলের এই উত্থান। নেশার টাকা জোগাড়ের জন্য অনেক যুবক বাইক, মোবাইল, টোটো, সোনার গয়না বন্ধক রাখত ওর কাছে। কেউ কেউ বিক্রিও করত। এ ছাড়া চোরাই মোবাইল ও গাড়ি কিনে নিজের কাছে রাখত। পরে সুযোগ বুঝে বিক্রি করে দিত। পরবর্তী সময়ে উজ্জ্বল নিজে বন্ধকি কারবার শুরু করে।’