• বেহাল গোসাইহাট ইকো পার্ক, মুখ ফিরিয়েছে পাখিরা
    এই সময় | ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪
  • রনি চৌধুরী, জলপাইগুড়ি

    জলপাইগুড়ির গয়েরকাটা শহর থেকে দূরত্ব মাত্র সাত কিলোমিটার। জঙ্গলের পথ ধরে হেঁটে পৌঁছনো যায় গোসাইহাট ইকো পার্ক ও পক্ষী পরিচিতি কেন্দ্রে। ধূপগুড়ি থানা হলেও বানারহাট ব্লক। ডিসেম্বরে পর্যটক ভরা মরশুমেও জনশূন্য এই ইকো পার্ক। বিরাট ঝিল। কচুরিপানায় ভর্তি। জৌলুস হারানো গোসাইহাট ইকো পার্ক থেকে মুখ ফিরিয়েছে স্নেক বার্ড, লেসার হুইসলিং ডাক, চখাচখি ডাহুক, জল মুরগিরা। ঝিল সংস্কার না হওয়ায় এই বিপত্তি।

    অভিযোগের তির বন দপ্তরের দিকে। কয়েক বছর আগেও এখানকার মনোরম ঝিলের আকর্ষণে দেশি–বিদেশি পাখি আসত এখানে। বছরের অন্য ঋতুতেও তাদের দেখা মিলত হামেশাই। পাখির ডাকে ঘুমিয়ে, পাখির ডাকে জেগে উঠতেন পার্ক সংলগ্ন খুকলুং রাভা বস্তি বাসিন্দারা। ইকো পার্কের বেহাল দশা হওয়ার পর থেকে পাখি দেখতে আর ছুটে আসেন না পর্যটক, পাখিপ্রেমীরা।

    ইকো পার্ক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সকলের জন্য। বনকর্মী বা পাহারাদার না থাকায় কটেজের আসবাবপত্র চুরি হয়ে গিয়েছে। জানলা–দরজাও খুলে নিয়ে গিয়েছে দুষ্কৃতীরা। গোটা এলাকায় পড়ে রয়েছে প্লাস্টিকের গ্লাস, থালা ও মদের বোতল। এলাকার বাসিন্দা তথা বনসুরক্ষা কমিটির সদস্য রবি রাভা বলেন, ‘উদ্বোধনের পর দেশবিদেশ থেকে পর্যটকরা আসতে শুরু করেন। বন দপ্তরের নজরদারি ও পরিচর্যা না থাকায় পাখিরালয়ের জলাশয়ে আগের মতো আর পাখি আসে না। দু’একটা পাখি যাও বা আসে, শিকার করে নিয়ে যাচ্ছে দুষ্কৃতীরা।’

    সবুজ–শান্ত এলাকা। জীববৈচিত্রে ভরপুর গোসাইহাটে পক্ষী পরিচিতি কেন্দ্র গড়ে তুলেছিলেন প্রাক্তন প্রয়াত বনমন্ত্রী যোগেশচন্দ্র বর্মন। নিজের উদ্যোগে ২০০৬ সালে ঝিল সংরক্ষণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। হাতেনাতে ফলও মেলে। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই আদর্শ পরিবেশ পেয়ে পরিযায়ী পাখিরা আসতে শুরু করে এই জলাশয়ে। কার্যত পাখিদের আখড়ায় পরিণত হয় গোসাইহাট। স্থানীয় খুকলুং, রাভা বস্তির বাসিন্দাদের স্বনির্ভর করতে ঝিলের সংস্কার, ওয়াচ টাওয়ার ও দু’টি সুদৃশ্য কটেজ তৈরি করে বনদপ্তর। পর্যটকরা এখানে ঘুরতে এসে যাতে রাত কাটাতে পারেন, সে জন্য এই সিদ্ধান্ত। জন্য।

    বর্তমানে সেগুলো জরাজীর্ণ অবস্থা। রাভা বস্তির বাসিন্দা সিতেন রাভা বলেন, ‘ইকো পার্কটি আবার সরকার চালু করে পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করুক। তাহলে এলাকার উন্নতি হবে। বেকার যুবকযুবতিরা কাজ পাবে।’ ধূপগুড়ি পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য অরবিন্দ সরকার বলেন, ‘বহু দিন থেকে গোসাইহাট পার্কটি বন্ধ রয়েছে। আগের মতো পরিযায়ী পাখি আর আসে না। বনকর্মীদের নজরদারির অভাবে ঝিলটি নষ্ট হয়ে গিয়েছে। বৃহস্পতিবার আলিপুরদুয়ার থেকে বেড়াতে আসা সুমন টেমানি বলেন, ‘আমাকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। ঝিলটি দ্রুত সংস্কার করে পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হোক।’

  • Link to this news (এই সময়)