• জ়িনাতের সন্ধান নেই, জঙ্গলে এ বার হুলা পার্টি
    এই সময় | ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪
  • এই সময়, পুরুলিয়া: পেরিয়ে গেল আরও একটা দিন। কোথায় জ়িনাত! বৃহস্পতিবারও মিলল না বাঘিনির হদিশ। কয়েক দিন আগে পাঁচ, তার পর তিন, আর এখন দুই বর্গ কিলোমিটার — পুরুলিয়ার বান্দোয়ানে রাইকার জঙ্গলে ক্রমশ কমছে জ়িনাতের ‘এলাকা’। তবু তার এক ঝলকও দেখতে পাননি কেউ। ফাঁকা পড়ে রয়েছে পাতা ফাঁদ। টোপের ধারপাশ দিয়েও যাচ্ছে না বাঘিনি। এই অবস্থায় এ বার হুলা পার্টিকেও কাজে নামিয়ে দেওয়া হলো বান্দোয়ানে। হইহল্লা করে হাতি তাড়ানোয় দক্ষ হুলা পার্টির মূল কাজই হবে বাঘিনিকে জঙ্গল লাগোয়া গ্রাম থেকে দূরে রাখা।

    বিচরণক্ষেত্র যত ছোট হয়ে আসছে, ততই গ্রামের দিকে যাওয়ার প্রবণতা বাড়তে পারে জ়িনাতের, এমন আশঙ্কা থেকেই হুলা পার্টির সাহায্য নেওয়ার সিদ্ধান্ত। শুধু তা–ই নয়, জ়িনাতকে নিয়ে আরও বড় একটি দুশ্চিন্তা দানা বাঁধতে শুরু করেছে। রাইকার জঙ্গলে নতুন করে আরও দু’জায়গায় খাঁচা পাতা হলেও লাভ কিছু হয়নি। ভিতরের টোপ অক্ষত, খাঁচার চৌহদ্দিতেও কোথাও নেই বাঘিনির পায়ের ছাপ। ট্র্যাপ ক্যামেরার ফুটেজেও ধরা পড়েনি জ়িনাতের ছবি।

    ঘটনা হলো, গ্রামের ছাগল খাওয়ার পরে ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গিয়েছে। এ বার জ়িনাতের খিদে পাওয়া স্বাভাবিক। সেই হিসেব কষেই বুধবার নতুন করে দু’টি টোপ দেওয়া হয়। কিন্তু বন দপ্তরের দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে নিজের ঘোরাফেরার পরিধি কমিয়েও জ়িনাত সেই সব টোপের কাছে আসেনি। ফলে মনে করা হচ্ছে, ওই এলাকার মধ্যেই সে পেট ভরানোর উপাদান পেয়ে থাকতে পারে। ওই এলাকায় বুনো শুয়োর বা হরিণের অভাব নেই। একদিকে নিজের পরিধি ছোট করে ফেলা আর অন্যদিকে টোপের দিকে না যাওয়া — দুইয়ে দুইয়ে চার করেই আশঙ্কা, এই এলাকাটাই হয়তো পছন্দ হয়ে গিয়েছে জ়িনাতের। আর তা–ই যদি হয়, তা হলে সে হয়তো আর টোপের দিকে এগোবেই না।

    গত কয়েক দিনের মতো বৃহস্পতিবার মূলত ‘শ্যাডো জ়োন’–এর আড়ালেই ছিল জ়িনাত। অর্থাৎ গভীর জঙ্গলে যে ঘোরাফেরা করছে। সামান্য সিগন্যাল পেলেই বনকর্মীরা সেখানে যাচ্ছেন। কিন্তু ততক্ষণে এলাকায় আর নেই বাঘিনি। এই পরিস্থিতিতে জঙ্গল লাগোয়া লোকালয়গুলির নিরাপত্তায় আরও বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন বনকর্তারা। জাল দিয়ে জঙ্গলের সীমানা ঘেরা আগেই শুরু হয়েছিল। এ বার বাঁকুড়া থেকে নিয়ে আসা হয়েছে হুলা পার্টি। এ দিনই লোকালয় লাগোয়া জঙ্গলে টহল শুরু করে দিয়েছে তারা।

    হুলা পার্টির সদস্য নয়ান মান্ডি বলেন, ‘বাঘিনিকে ধরার চেষ্টা করছি। যে এলাকায় জাল দেওয়া রয়েছে, সে দিকেই আমাদের থাকতে বলা হয়েছে। দরকারে বাঘিনিকে খেদিয়ে দিতে হবে।’ কংসাবতী দক্ষিণের ডিএফও পূরবী মাহাতো বলেন, ‘জঙ্গল লাগোয়া মানুষের নিরাপত্তার জন্যই হুলা পার্টিকে রাখা হয়েছে। বাঘিনি যাতে কোনও ভাবেই লোকালয়ে না যায়, সেটাই নিশ্চিত করা মূল লক্ষ্য।’

    তবে এতেও খুব একটা ভরসা পাচ্ছেন না জঙ্গল লাগোয়া গ্রামগুলির মানুষ। রাহামদা শবর টোলায় এ দিনও বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাননি অভিভাবকেরা। তাঁদের বক্তব্য, স্কুলে যাওয়ার পথের পাশ থেকেই জঙ্গল শুরু। ঝুঁকি নেওয়ার প্রশ্নই নেই। শিক্ষক–শিক্ষিকাদের অনেকে আবার চাইছেন, স্কুলে আসুক পড়ুয়ারা। এ ভাবে বাঘিনির ভয়ে দিনের পর দিন ঘরে বসে থাকলে তো পড়াশোনার ক্ষতি। কেশরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সাধন পান্ডা বলেন, ‘বাঘ নিয়ে অযথা আতঙ্কের কিছু নেই। বাঘ এমনিতে মানুষকে আক্রমণ করে না। ওরাও তো প্রকৃতির অভিন্ন অঙ্গ। জঙ্গলে থাকার অধিকার ওদের রয়েছে।’

  • Link to this news (এই সময়)