সৌগত রায়, তৃণমূল সাংসদ
মনমোহন সিং আর নেই! খবরটা শোনার পর থেকেই মনটা ভারাক্রান্ত। তাঁর চলে যাওয়াটা ব্যক্তিগত তো বটেই, সামগ্রিক ভাবে দেশ ও দুনিয়ারও ক্ষতি। আমাকে অত্যন্ত স্নেহ করতেন। সে কথায় পরে আসছি। আমি ১৯৯১ সাল থেকে মনমোহনের অর্থনীতির সমর্থক। তবে ১৯৯৩ সালে একটা ঘটনা ঘটেছিল। সে বার কংগ্রেসের তিরুপতি অধিবেশনে তাঁর অর্থনীতি সংক্রান্ত কিছু বিষয়ের খুব সমালোচনা করেছিলাম।
তিনি আমাকে ডেকে বলেছিলেন, ‘আজ হয়তো তুমি অন্যমত পোষণ করছ। কিন্তু একদিন আমার মতটাই মেনে নেবে।’ বাস্তবে হয়েওছিল ঠিক তাই। সে কথা পরে আমি তাঁকে বলেছিলাম। শুনে তিনি মৃদু হেসেছিলেন। নানা বিষয় নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা হতো।
আমরা প্রায় পাঁচ বছর একসঙ্গে ফিনান্স কমিটিতে ছিলাম। ১৯৯১ সালে তিনি ভিক্টর হুগোকে উদ্ধৃতি করে এক ঐতিহাসিক বাজেট পেশ করেছিলেন। সেই বাজেটের কথা আমার সারাটা জীবন মনে থাকবে।
যেদিন পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছিলাম, সেদিন মনমোহন সিং বলেছিলেন, ‘এটা আমার জীবনে অন্যতম একটি দুঃখের দিন।’ একটা ঘটনার কথা আমার স্পষ্ট মনে আছে। মনমোহন সিং এমনিতেই খুব কম কথা বলতেন। নানা সময়ে দেখা হলে তিনি সৌজন্য দেখিয়ে শুধু মৃদু হাসতেন। সে বার আমার চোখে অস্ত্রোপচার হয়েছিল। ব্যান্ডেজ বাঁধা।
তিনি ওই অবস্থায় আমাকে দেখে এগিয়ে এসে জানতে চাইলেন, ‘কী হয়েছে?’ আমি বললাম। তারপরে তিনি জানতে চাইলেন, ‘কোন চিকিৎসক অস্ত্রোপচার করেছেন?’ শুনে তিনি বললেন, ‘একদম চিন্তা করবে না। ওই চিকিৎসক আমার চোখেও অস্ত্রোপচার করেছিলেন। হি ইজ় আ নাইস ডক্টর!’ এমন ভদ্রলোক, মৃদুভাষী, অসম্ভব পণ্ডিত একজন মানুষের কোনও বিকল্প হয় না। অর্থনীতির জগতেও একটা অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল।