কৌশিক দে, মালদা
পুরির পেট চিড়লেই লেপ্টে থাকে ডাল। পনিরের তরকারির সঙ্গে মিশে সুঘ্রাণ সম্মোহিত করে রাখে রাস্তার আশপাশ। রোজকার এই দৃশ্য দেখে অভ্যস্ত ইংরেজবাজারের মানুষ। পুরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের উইমেন্স কলেজের লাগোয়া রাস্তায় খাদ্যরসিকরা সকাল সকাল ভিড় জমান ডালপুরি খেতে। নিতাইয়ের ডালপুরি। বৃহস্পতিবার সকালে এই ক্রেতাদের জন্য অপেক্ষা করছিল বিস্ময়।
ইংরেজবাজার ব্লকের যদুপুর ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দা নিতাই। রোজ এক প্লেট ডালপুরি বিক্রি করেন ২০ টাকায়। তিনটে ডালপুরি, পনিরের তরকারি থাকে প্লেটে। ডালের দাম প্রতি কেজি একশোর আশপাশে। পনিরের দাম তার দ্বিগুণ। তা সত্ত্বেও ক্রেতাকে খাইয়ে আনন্দ পেতে চান তিনি।
এ দিন একধাপ এগিয়ে বিনামূল্যে সকলকে এক প্লেট করে ডালপুরি খাওয়ালেন নিতাই। কেউ দাম দিতে চাইলে হাত গুটিয়ে নিয়েছেন। বলেছেন, ‘আজ আপনাদের দাম দিতে হবে। আজ আমার ছেলের জন্মদিন। তাই আমিই আপনাদের খাওয়াচ্ছি।’
নিতাইয়ের ডালপুরি খাওয়ানোর খবর নিমেষে ছড়িয়ে পড়ে। ভিড় লেগে যায় রাস্তার ধারে। কলেজের ছাত্রীরাও সামিল হন সেই ভিড়ে। হাজারখানেক মানুষ যখন খাওয়ার পর তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলছেন, তখন খুশিতে ঝলমল করছিল নিতাইয়ের মুখ। বলেন, ‘আমার এই তেলেভাজার দোকানটা সম্পূর্ণ নিরামিষ। প্রতিদিন তো অল্প কিছু হলেও রোজগার করি। একদিন না হয় বিনেপয়সায় মানুষকে খাওয়ালাম। এ দিন আমার সঙ্গে আরও দু’জন কারিগর কাজ করেছেন।’
রোজ তেলেভাজার দোকান চালাতে প্রচুর খাটনি। কাঁচামালের দাম অনেক বেড়ে যাওয়ায় লাভ কমে গিয়েছে। তবু ছেলের জন্মদিনে কিছুই মনে রাখেননি নিতাই। স্ত্রীয়ের সঙ্গে আগেও পরিকল্পনা সেরে রেখেছিলেন। নিতাই বলেন, ‘কারও কাছ থেকে দাম নিইনি। শুধু বলেছি, আপনারা আমার ছেলেকে আশীর্বাদ করুন, ও যাতে বড় হয়ে ডাক্তার অথবা ইঞ্জিনিয়ার হতে পারে। আমার মতো তেলেভাজা যেন বিক্রি করতে না হয়।’
মেয়ে মিমি এখন ক্লাস ওয়ানে পড়ে। তাঁকেও পড়াশোনা করিয়ে জীবনে প্রতিষ্ঠিত করতে চান নিতাই। বলেন, ‘ওদের বড় করে তোলাই আমার লক্ষ্য। তাই এত কষ্ট করে ছেলেমেয়ের পড়াশোনার খরচ জোগাড় করছি।’ নিতাইয়ের এমন ইচ্ছে ও উদ্যোগে বিস্মিত পথচলতি মানুষজন। সুস্মিতা দাস, রাহুল মণ্ডল ডালপুরি খেয়ে বলেন, ‘অত্যন্ত ভালো মানুষ। কষ্ট করে সংসার টানেন, সেটা ঠিকই। টাকা তো সকলেরই আছে, মনটা কতজনের আছে বলুন। ওঁর ছেলেমেয়ে যেন বড় হয়, এই আশীর্বাদ করেছি।’
যদুপুর ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল দলের সদস্য অরিন্দম দাস বলেন, ‘নিতাইকে আমি চিনি। সৎ ও স্বচ্ছ স্বভাবের ছেলে। গরিব পরিবার হলেও কখনও কারও কাছে মাথা নোয়াননি। ওঁর আজকের উদ্যোগের কথা শুনেছি। আব্দার করে বলেছি আমাকেও খাওয়াতে। আমিও চাই ওর সন্তানেরা যেন অনেক বড় হয়।’