চিত্তরঞ্জন দাস | পার্থ চৌধুরী: পূর্ব বর্ধমান জেলার বুদবুদ থানা এলাকার দেবশালা এলাকায় গোবিন্দপুর গ্রামে হেরোলের আক্রমণে পনেরো জনের উপর আহত, পরে হেরোলকে পিটিয়ে মেরে হত্যা করে উত্তেজিত এলাকাবাসী । মৃত হেরোলটিকে ময়নাতদন্তের জন্য বর্ধমান রমনা বাগানে চিড়িয়াখানাতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এই ঘটনায় প্রাণীসম্পদ রক্ষায় পরিকল্পনার অভাব এবং সহাবস্থানের সমস্যাকে তুলে ধরেছে।
হেরোল কী?
হেরোল হল আসলে বুনো দেশি নেকড়ে। বাঘ বলা হলেও আসলে এরা ক্যানাইন প্রজাতির। এই গোত্রে বুনো কুকুর, শিয়াল, পারিয়া ডগ থেকে গৃহপালিত সবাই পড়ে। এরা চিরকালের বন্যপ্রাণী।
বিস্তারিত :
এরা আসলে পরিভাষায় ইন্ডিয়ান গ্রে উলফ। ভারতীয় উপমহাদেশে এদের দেখা মেলে। এদের গত কয়েক বছর ধরে সংখ্যা বেড়েছে। তুলনায় অপরিচিত কাঁকসা ও আউশগ্রামের জঙ্গলমহলে শিয়াল যেমন আছে। হায়নাও আছে। হায়নাকে আধবাঘা আর নেকড়েকে হেরোল বলা হয়। একটি রিসার্চ বলছে এদের সংখ্যা কম করে পঞ্চাশ থেকে দেড়শোর কাছাকাছি হতে পারে। একসময় জঙ্গল অনেকটা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। বাম আমলে যে নিবিড় বনসৃজন প্রকল্প হয়, সেসময় আবার গাছপালা বাড়ে। সেই থেকে অনুকুল পরিবেশ পেয়ে ফিরে এসেছে হেরোলরা।
কিন্তু খাবারের অভাব রয়েছে। তাই হেরোল হানা দেয় লোকালয়ে। ভেড়া বা ছাগলের সহজ শিকার ধরে। এদের এই প্রবণতার কারণে স্বভাবগত মাংশাসী হেরোলের সাথে মানুষের সংঘাত বাড়ছে। হেরোলের কামড়ের কথা এর আগেও শোনা গেছে। আজকের ঘটনা একটা চূড়ান্ত রূপ।
বর্ধমান অ্যানিমাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটির সদস্য অর্ণব দাস জানান, হেরোল পরিবেশে এক গুরুত্বপূর্ণ প্রাণী। ওই হেরোলটির র্যাবিসে আক্রান্ত ছিল কী না, তা নিশ্চয়ই দেখা হবে। তবে তার মতে, এই প্রাণীদের নিয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে। সংঘাতের পরিবেশ কমাতে হবে।
এদিকে, বিভাগীয় বনাধিকারিক সঞ্চিতা শর্মা জানান, মৃত হেরোলটিকে বর্ধমানে নিয়ে আসা হচ্ছে। সেখানে তার ময়নাতদন্তের প্রক্রিয়া চলবে। হেরোলটির হিংস্র হয়ে ওঠার পিছনে র্যবিস বা ডিস্টেম্পারের মত রোগ কারণ কী না ময়নাতদন্তের পর জানা যাবে। তিনি জানান, মানুষের সঙ্গে সংঘাত কমাতে বনাঞ্চলে পেট্রলিং করা হবে। সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা হবে।