• কোচবিহারের শুক্লার হাত ধরে স্বনির্ভরতার পাঠ
    এই সময় | ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪
  • এই সময়, কোচবিহার: সৌভাগ্য একবার দরজা ধাক্কা দেয়। দুর্ভাগ্য বারবার। তবে সৌভাগ্যের দরজা ধাক্কা নাকি সবাই শুনতে পান না। কেউ কেউ পান। কোচবিহারের বুড়িরপাটের শুক্লা সেন সেই ‘কেউ কেউ’-এর দলেই পড়েন। সুযোগটা এসেছিল ২০১৪ সালে। সরকারি উদ্যোগে সেলাইয়ের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে শুনে শুক্লাও সেই শিবিরে যোগ দেন। গেরস্তালি সামলে নিয়মিত তিনি প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন।

    তারপরেই শুক্লার জীবন বইতে শুরু করে অন্য খাতে। তাঁর মনে হয়, ‘সংসার সামলে যদি প্রশিক্ষণ নেওয়ার সময় বের করতে পারি, তা হলে সেই সময়ে তো ব্যবসাও করা যায়।’ ব্যবসা তো করবেন কিন্তু মূলধন কোথায়? মুশকিল আসান করে দেয় ব্যাঙ্ক। সেখান থেকে তিনি তিন লক্ষ টাকার ঋণ নিয়ে শুরু করেন পথচলা।

    তারপরে শুক্লাকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি। নিজে স্বনির্ভর হওয়ার পাশাপাশি তিনি আরও প্রায় ৪০ জনকে স্বনির্ভর করে  তুলেছেন। দুই সন্তানকে বড় করে তুলছেন। সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার বরাত নিয়ে কাজ করার সঙ্গে সঙ্গে ভিন রাজ্যের কাজেরও ‘অর্ডার’ নিচ্ছেন।

    শুক্লা বলেন, ‘প্রথমে ছোট্ট একটি সেলাই মেশিন নিয়ে কাজ শুরু করি। শুরুতে মহিলাদের বিভিন্ন পোশাক তৈরি করতাম। ধীরে ধীরে বিভিন্ন সরকারি স্কুলের পোশাক তৈরির কাজও আসতে শুরু করল। তখন ঋণ নিয়ে ১১টি সেলাই মেশিন কিনি। বেশ কয়েকজন মহিলাকে সেলাইও শেখাই। তাঁরাও এখন আমার কারখানায় কাজ করেন।’

    শুক্লা এখন প্রতি মাসে ভালো টাকা রোজগার করেন। সরকারি কাজ না-থাকলে তিনি তখন নাইটি, কুর্তি-সহ মেয়েদের নানা রকমের পোশাক তৈরি করেন।

    কোচবিহার জুড়ে শুক্লার পরিচিতি তৈরি হয়ে গিয়েছিল আগেই। এখন অসমের বেশ কিছু জেলা থেকেও তিনি নিয়মিত পোশাক তৈরির বরাত পাচ্ছেন। সেখানে ট্র্যাক স্যুট, প্যান্ট, জ্যাকেট তৈরি করে পাঠাচ্ছেন। তবে শুরু থেকেই শুক্লার এই যাত্রাটা যে খুব মসৃণ ছিল, এমন নয়।

    প্রথমে ঋণ নিয়ে ব্যবসা শুরু করার কিছুদিন পরেই তাঁর স্বামী মারা যান। শুক্লার কথায়, ‘ভাগ্যিস সেলাইয়ের কাজটা শিখেছিলাম। নইলে দুই সন্তান নিয়ে বেশ বিপদে পড়তে হতো।’

    শুক্লার কাছে যাঁরা সেলাই শিখেছেন সেই অনিমা বর্মণ, নীলিমা সরকাররা বলছেন, ‘শুক্লাদির কাজে কাজটা শিখেছিলাম বলেই আজ নিজে স্বাবলম্বী হতে পেরেছি। সম্মানের সঙ্গে বাঁচতে পারছি।’

  • Link to this news (এই সময়)