• গঙ্গাসাগরে উপকূলের ভাঙন ঠেকাবে ম্যানগ্রোভ বন, শুরু বৃক্ষরোপণ
    এই সময় | ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪
  • এই সময়, গঙ্গাসাগর: ত্রাতা সেই গাছই। বাতাসে বিষ হোক, ঘূর্ণিঝড় হোক কিংবা নদী ও সমুদ্র পাড়ের ভাঙন— এ সব থেকে বাঁচতে গাছই ভরসা। সে জন্য এ বার গঙ্গাসাগরের অর্থাৎ সাগরদ্বীপের উপকূলকে রক্ষা করতে সেখানে নতুন করে মাটি ফেলে বৃক্ষরোপণ শুরু হয়েছে। দিন তিনেক আগেই শুরু হয়েছে ওই কাজ।

    একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখে পড়ে লাগাতার ভাঙনের জেরে এক রকম তছনছ হয়ে গিয়েছে গঙ্গাসাগরের উপকূল। তাই, প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে গঙ্গাসাগরের উপকূলকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যে, সাগর পাড়ের ভাঙন রুখতে বিশেষ এই পদক্ষেপ করল দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন।

    দিন কয়েক আগেই নবান্নে গঙ্গাসাগর মেলার প্রস্তুতি নিয়ে বৈঠক শেষে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘সমুদ্র চলে আসছে মন্দিরের সামনে। সে জন্য আমি ওখানে পাঁচ কিলোমিটার বেহাল সমুদ্রবাঁধে ভেটিভার গাছ লাগাতে বলছি।’

    যদিও এর আগে জেলা প্রশাসন ও সেচ দপ্তরের উদ্যোগে সাগরদ্বীপের পাশেই ঘোড়ামারা দ্বীপে সাগর পাড়ের ভাঙন আটকাতে পরীক্ষামূলক ভাবে ওই ভেটিভার গাছ (যা কি না একটি বিশেষ ধরনের ঘাস) বসানো হলেও শেষমেশ সেখানে ভাঙন প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়নি। পাড় ভেঙেচুরে দিয়েছে বঙ্গোপসাগরের উত্তাল ঢেউ। তাই, দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন খরচ কমিয়ে সাগরদ্বীপে উপকূলের ভাঙন রুখতে ম্যানগ্রোভ প্রজাতির বাণী, গরান, হেঁতাল, কেওড়া, গেঁওয়া, গোলপাতা, সুন্দরীর মতো গাছ বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আগামী দিনে গঙ্গাসাগরের উপকূলকে ভাঙনের হাত থেকে বাঁচাতে সমুদ্র তট জুড়ে রীতিমতো ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছে জেলা প্রশাসন।

    সুন্দরবন উন্নয়ন দপ্তরের মন্ত্রী বঙ্কিম হাজরা বলছেন, ‘একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগের জেরে গঙ্গাসাগরের উপকূল যে ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তাতে গঙ্গাসাগর বা সাগরদ্বীপকে বাঁচানোর জন্য ম্যানগ্রোভ প্ল্যানটেশন খুবই জরুরি ছিল। সেই কাজ দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন ও বন দপ্তরের তরফে শুরু করা হয়েছে।’

    মন্ত্রীর বক্তব্য, ‘কেবল গঙ্গাসাগর নয়, সুন্দরবনের বিভিন্ন ভাঙন কবলিত এলাকায় এই ম্যানগ্রোভ দিয়ে বন সৃজনের কাজ হবে। সে জন্য অতিরিক্ত যে জমি লাগবে, তার চিহ্নিতকরণ হয়ে গিয়েছে। এই বন সৃজনের কাজ বন দপ্তর করবে, তাদের যাবতীয় সহযোগিতা করবে জেলা প্রশাসন।’

    গত মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন ও জেলা বন দপ্তরের তরফে সাগরদ্বীপের পাড়ে অনুষ্ঠিত হয় বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি। গঙ্গাসাগর ব্লকের বেশ কয়েকটি স্কুলের ছাত্রছাত্রী এবং স্থানীয় মহিলাদের মিছিল বেরোয়। মিছিলের প্ল্যাকার্ডগুলোয় ছিল সুন্দরবন রক্ষার জন্য বিভিন্ন সচেতনতামূলক বার্তা। ওই মিছিলে পা মেলান দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক সুমিত গুপ্তা, জেলা বন দপ্তরের আধিকারিক, সুন্দরবন উন্নয়নমন্ত্রী বঙ্কিম হাজরা, সাগরদ্বীপের বিডিও কানাইয়াকুমার রায় এবং প্রশাসনের অন্য আধিকারিকরা। সুন্দরী গাছকে বরণ করে ও প্রদীপ জ্বালিয়ে সূচনা হয় মূল অনুষ্ঠানের।

    অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে স্কুলপড়ুয়াদের হাতে তুলে দেওয়া হয় ম্যানগ্রোভ প্রজাতির বিভিন্ন গাছের বেশ কিছু চারা। অনুষ্ঠান শেষে গঙ্গাসাগরের–১ নম্বর স্নানঘাট লাগোয়া সমুদ্র পাড়ে বেশ কিছু চারাগাছ পোঁতা করা হয়। নিজের হাতে গাছ লাগান জেলাশাসক সুমিত গুপ্তা, মন্ত্রী বঙ্কিম হাজরা, জেলা বন দপ্তর আধিকারিক এবং সাগরদ্বীপের বিডিও।

    জেলাশাসক সুমিত গুপ্তা বলেন, ‘সুন্দরবনকে বাঁচানোর দায়িত্ব আমাদের সবাইকে নিতে হবে। সে ক্ষেত্রে ম্যানগ্রোভ প্ল্যান্টেশন খুবই কার্যকর একটি পদক্ষেপ। ম্যানগ্রোভের চারা বসিয়েই আমরা সেই কাজ করব। আগামী দিনে এই ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল রক্ষণাবেক্ষণের জন্য স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদেরকে কাজে লাগানো হবে। এই কাজের দায়িত্বে থাকবে জেলা প্রশাসন।’

  • Link to this news (এই সময়)