স্বামীর হাত ধরে বোলপুরে পৌষমেলায় বেড়াচ্ছিল মেয়েটি। মাস তিনেক আগে বিয়ে হয়েছে। বিয়ের পর প্রথম শীতে, প্রথম বড় মেলায় ঘোরা। হাত মেহেন্দি, শাঁখা-পলা, চুড়ি, কানে ঝুমকো। নীল হাইনেক সোয়েটারের উপর ব্লু গাউন। পৌষমেলার বিভিন্ন স্টলে ঘুরছিল তারা। এ স্টল, ও স্টল করে পৌষ মেলার শিশু বান্ধব কর্নারে গিয়ে ঢোকে তারা। ব্যস! স্টলে পা দিতেই ভরপেট্টা কেস। প্রথমে নানা প্রশ্নের মুখে পড়া। তার পরই স্ত্রী-স্বামী আলাদা। স্বামীকে তুলে নিয়ে গেলো শ্রীঘরে, স্ত্রী গেল হোমে! কারণ, স্ত্রী নাবালিকা, মাত্র ১৪ বছর বয়স।
জানা গিয়েছে, ওই দম্পতির বাড়ি হুগলির আরামবাগে। ২৫ ডিসেম্বর দু’জনে বীরভূমের বোলপুরে পৌষমেলায় বেড়াতে গিয়েছিল। সেখানে ছিল পশ্চিমবঙ্গ শিশু অধিকার সুরক্ষা আয়োগের স্টলও। সেই স্টলে ঢুকতেই জেলা শিশু সুরক্ষা কমিশনের আধিকারিকদের নজরে আসে ওই দম্পতি।
আধিকারিকদের মনে হয়েছিল, মেয়েটি নাবালিকা। বয়স অনেকটাই কম। এর পরই দম্পতিকে বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন আধিকারিকরা। হকচকিয়ে যায় দু’জনই। মেয়েটি জানায়, ১৪ বছর বয়স তার।
শুনেই শিশু সুরক্ষা দপ্তরের আধিকারিকরা শান্তিনিকেতন থানায় বাল্য বিবাহের অভিযোগ জানায়। এফআইআর হয় কিশোরীর স্বামীর নামে। মেলা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় তাঁকে। বউ তো কেঁদে কেটে একসা। অন্যদিকে শিশু সুরক্ষা দপ্তর ওই কিশোরীকে হোমে পাঠায়। পৌষমেলায় বেড়াতে এসে এমন ঘটনায় ওই দম্পতি দিশাহারা।
জেলা শিশু সুরক্ষা আধিকারিক নিরূপম সিনহা এইসময় অনলাইনকে জানান, ‘বাল্যবিবাহ রুখতে আমরা তৎপর। এফআইআর-এর ভিত্তিতেই ওই যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যদিকে নাবালিকার বয়স ১৪ হওয়ায় তাকে হোমে পাঠানো হয়েছে। বাল্য বিবাহ রুখতে সকলেরই এগিয়ে আসা উচিত।’ ২৫ ডিসেম্বরের এই ঘটনায় ২৬ ডিসেম্বর ওই যুবককে বোলপুর আদালতে তোলা হলে ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে।