• ‘সোলো ট্রিপ’-এ মগ্ন জ়িনাত পর্যটকদের আতঙ্কের কারণ, মুকুটমণিপুর থেকে দূরত্ব মাত্র ১৪ কিলোমিটার
    এই সময় | ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪
  • শীতের দিনে ‘সুহানা সফর’। কাঁচামিঠে রোদ গায়ে মেখে দিব্যি জঙ্গলে ঘুরে বেড়াচ্ছে বাঘিনি জ়িনাত। ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়ার পর এ বার তার ‘ডেস্টিনেশন’ বাঁকুড়া। মুকুটমণিপুরের পিকনিক স্পট থেকে বাঘিনি জ়িনাতের দূরত্ব মাত্র ১২ থেকে ১৪ কিলোমিটার, সূত্রের খবর এমনটাই (এই প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার সময় পর্যন্ত)। এ দিকে, জ়িনাতের এই ‘সোলো ট্রিপ’-এর জেরে পর্যটকদের আত্মারাম খাঁচাছাড়া। শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর মুকুটমণিপুরে অন্যান্য শীতের উইকএন্ডের মতোই ট্য়ুরিস্টদের জমাটি ভিড়। কিন্তু কোলাহলের মধ্যেই বইছে আতঙ্কের চোরা স্রোত: ‘এ বার কী হবে কত্তা…’!

    মহারাষ্ট্রের আন্ধেরি–তাডোবার জঙ্গল থেকে জ়িনাতকে আনা হয়েছিল ওডিশার সিমলিপালে। গত ২৪ নভেম্বর সিমলিপাল টাইগার রিজ়ার্ভের মুক্ত জঙ্গলে তাকে ছাড়া হয়েছিল। কিন্তু ঘর বদল করে নতুন ঠিকানায় মন বসাতে পারেনি জ়িনাত। মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর সে এসে পৌঁছয় ঝাড়খণ্ডের চাকুলিয়ার জঙ্গল এলাকায়। এরপর ঝাড়খণ্ড হয়ে পুরুলিয়া এবং তারপর বর্তমান ঠিকানা বাঁকুড়া।

    এরই মধ্যে জ়িনাতকে ধরার জন্য ঘুম কার্যত উড়ে গিয়েছে বন কর্মীদের। মাঝে একাধিক টোপ (‘লাইভ বেট’ রূপে ছাগল, শুয়োর ও মোষ) দেওয়া হয়েছে জ়িনাতকে। কিন্তু কোনও লোভেই বাঁধা পড়েনি ৩ বছরের বাঘিনি। শনিবার সকালে সে এসে পৌঁছয় বাঁকুড়ার রানিবাঁধের গোপালপুর জঙ্গলে। অন্তত তার গলায় থাকা রেডিয়ো কলারের সিগন্যাল তেমনই বলছে। শুক্রবার রাতে পুরুলিয়ার ডাঙরডির জঙ্গল থেকে বাঁকুড়ার রানিবাঁধে এসে পৌঁছয় জ়িনাত। এরপর শনিবার জানা যায়, রানিবাঁধ সংলগ্ন গোঁসাইডিহি গ্রাম থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে এই জঙ্গলে বাঘিনি আত্মগোপন করেছে বলে মনে করছেন বন দপ্তরের আধিকারিকরা।

    স্থানীয় সূত্রে খবর, এ দিন ভোরে গোঁসাইডিহি গ্রামের মূল রাস্তা ধরে জঙ্গলে ঢুকে পড়ে জ়িনাত। গ্রামের রাস্তায় বাঘিনির পায়ের ছাপের সন্ধান মিলেছে বলেও অনেকে দাবি করেন। খবর পেয়েই ওই গ্রামে পৌঁছেছেন বন দপ্তরের আধিকারিকরা। গ্রামের অদূরে পাতা হয়েছে খাঁচাও। গ্রামের সীমানা বরাবর নাইলনের জাল দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাতেও আতঙ্কে এলাকাবাসী।

    অন্যদিকে, মুকুটমণিপুর পিকনিক স্পট থেকে ১২ থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে বাঘিনি অবস্থান করায় পর্যটন ক্ষেত্রেও ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। কংসাবতী নদীর প্রান্তে গড়ে ওঠা ডিয়ার পার্কে বছরভর পর্যটকদের ভিড় থাকে। সেই পার্ক থেকে আট থেকে দশ কিলোমিটারের মধ্যেই বাঘিনি অবস্থান করছে। আর সেই খবর পর্যটকরা জানতে পারার পরই তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

    ওই এলাকার বিখ্য়াত ট্য়ুরিস্ট স্পট ঝিলিমিলি। মুকুটমণিপুর থেকে যার দূরত্ব মাত্র ২৭ কিলোমিটার। শনিবার সকালে বাঁকুড়ার রানিবাঁধের যে গোপালপুর জঙ্গলে এসে পৌঁছেছে জ়িনাত, সেই গোপালপুর জঙ্গলের অদূরেই কুমারী নদী। এই নদী পার হলে সহজেই পৌঁছে যাওয়া যায় রানিবাঁধ এবং ঝিলিমিলির জঙ্গলে। এই অবস্থায় সাঁতারে পটু জ়িনাত কুমারী নদী পেরিয়ে যে কোনও সময়ে রানিবাঁধ ঝিলিমিলির জঙ্গলে ঢুকে যেতে পারে, এমনও আশঙ্কা করছেন অনেকেই। ঠিক সেই কারণেই রেডিয়ো কলারের মাধ্যমে জ়িনাতের উপর নিয়মিত নজর রাখছেন বন দপ্তরের কর্মীরা। যেহেতু তুলনায় কম ঘন জঙ্গল এলাকায় ‘সোলো ট্রিপ’-এ মগ্ন রয়েছে জ়িনাত, তাই আপাতত তাকে রেডিয়ো কলারের মাধ্য়মে ট্র্য়াক করা যাচ্ছে বলেই খবর।

    রাজ্যের মুখ্য বনপাল এস কুলান্ডাইভাল এ দিন বলেন, ‘আমি নিজে রানিবাঁধের গোপালপুর জঙ্গলে রয়েছি। বাঘিনি যে এখানেই রয়েছে, সেই প্রমাণও পাওয়া গিয়েছে। তাকে দ্রুত খাঁচাবন্দি করার চেষ্টা করা হচ্ছে।’ আর মুখ্য বনপাল বিদ্যুৎ সরকারের বক্তব্য়, ‘লোকালয়ের আশেপাশেই বাঘিনি রয়েছে। আগে স্থানীয় বাসিন্দাদের সুরক্ষা সুনিশ্চিত করা হচ্ছে।’

  • Link to this news (এই সময়)