• অতিথি দেব ভবঃ নয়, দালালরাজই সত্য
    এই সময় | ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪
  • সব্যসাচী ঘোষ, মালবাজার

    বাগডোগরা কিংবা নিউ জলপাইগুড়ি, উত্তরের দুই গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশদ্বারে দালালদের উৎপাত চরমে উঠেছে। স্টেশন বা এয়ারপোর্টের বাইরে কয়েক কদম হেঁটে তিতিবিরক্ত হয়ে পড়ছেন পর্যটকরা। প্রতিযোগিতা এতটাই যে পর্যটকদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাঁদের ব্যাগ ধরে দালালরা টানাটানি করছেন বলে অভিযোগ।

    বেশিরভাগ দালালের নিজস্ব গাড়ি, হোটেল বা রেস্তোরাঁ নেই। শুধু স্টেশনের বাইরে থাকা অন্য দালালের হাতে পর্যটকদের গছিয়ে দিতে পারলেই কমিশন মিলছে অনায়াসেই। বাগডোগরা বিমানবন্দরে থাকা ন্যায্য মূল্যের ট্যাক্সির কাউন্টার থেকেও কোনও সাহায্য মিলছে না বলে অভিযোগ।

    সুনতালে থেকে রামধুরা, পাহাড়ের এক একটি অফবিট গন্তব্যে দালালদের ‘দাদাগিরি’ এখন শিল্পের পর্যায়ে পৌঁছেছে। মাথাপিছু খাওয়া দাওয়ার জন্য ১০০ শতাংশ টাকা আগাম নিয়ে পাতলা ডাল, সঙ্গে রেডিমেড তেলেভাজা, মুরগির ঝোল দিয়ে ২০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। লামাহাটা থেকে লালিগুড়াসেও এক পরিস্থিতি। কুড়ি টাকার পাউরুটি চল্লিশ টাকা, কুড়ি টাকার চিপসের প্যাকেট তিরিশ টাকা, ১০ টাকার ডিম সেদ্ধ কুড়ি টাকা, দশ টাকার চা কুড়ি টাকা।

    ‘অতিথি দেব ভবঃ’ সংস্কৃতিতে সরিয়ে এ ভাবেই পর্যটকদের ‘বধ’ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ। সাদা–নীল প্যান্ডেলে পুলিশ আছে বটে তবে তাঁরা মোবাইলে ব্যস্ত। পাহাড়িগ্রাম তোদে এলাকার এক জিটিএ কর্মী বলেন, ‘বেড়াতে এসে এমন একটু আধটু হবেই।’ লামাহাটার একটি হোম–স্টের এক মালিকের বক্তব্য, ‘জানুয়ারির কয়েক দিন পর থেকে আবার জনশূন্য হয়ে পড়বে সবকিছু। তাই একটু বাড়তি উপার্জনের চেষ্টা তো সবাই করবে।’

    লাটাগুড়ি রিসর্ট মালিক সংগঠনের সভাপতি অরিন্দম চৌধুরী অবশ্য দায় চাপিয়েছেন পর্যটকদের ঘাড়ে। বলেন, ‘দালাল চক্র নেই এ কথা আমরা বলব না। তবে পর্যটকদের সচেতন হতে হবে। চেষ্টা করতে হবে অনলাইনে সরাসরি যোগাযোগ করতে।’

    রিসর্ট মালিক সংগঠন যা–ই বলুক, খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, বড় দিন থেকে পয়লা জানুয়ারি পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় থাকা হোম–স্টে, রিসর্ট দালালরা পনেরো–কুড়ি শতাংশ কম দামে অগ্রিম বুকিং নিয়ে রাখেন। এবং সেটা তিন মাস আগেই। ১৫০০ টাকার ঘর দালালরা পেয়ে যান ১১০০ টাকায়। পরবর্তীতে সেই ঘরগুলোই আড়াই থেকে তিন হাজার টাকায় তাঁরা বিক্রি করে দেন। যে ঘরগুলো ভাড়া হয় না, অবস্থা বুঝে অল্প টাকায় ছাড়া হয়। তাতে লাভ না হলেও আসলটা উঠে যায়। এমনই ব্যবস্থা কায়েম রয়েছে পাহাড় ও ডুয়ার্সে।

  • Link to this news (এই সময়)