পিনাকী চক্রবর্তী, আলিপুরদুয়ার
দু’জনেরই একই দিনে জন্ম। একজন দেশের বাণিজ্য জগতের পুরোধা ব্যক্তিত্ব। আর একজন প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক। জন্মদিনের একই তারিখ, ২৮ ডিসেম্বর মিলিয়ে দিল দু’জনকে।
বরেণ্য মানুষদের জন্মদিন সাধারণ মানুষও পালন করেন। কাকতালীয় ভাবে দেশ তথা আন্তর্জাতিক স্তরের বিজনেস টাইকুন সদ্যপ্রয়াত রতন টাটার জন্মদিনের সঙ্গে তাঁর জন্মের তারিখ মিল রয়েছে। তাই ফালাকাটার বাবুপাড়ার বাসিন্দা, পেশায় প্রাথমিক শিক্ষক অরিজিৎ চন্দ ওরফে বাটা দিনটি উদযাপনের অভিনব পথ বেছে নিলেন। নিজের উদ্যোগে চালকদের চোখ পরীক্ষার শিবির বসালেন। সেখানে নিখরচায় চশমাও দেওয়া হল।
অরিজিতের জন্ম ১৯৮৫ সালের ২৮ ডিসেম্বর। শিক্ষকতা করেন ফালাকাটার জটেশ্বর ৩ নম্বর অ্যাডিশনাল প্রাথমিক স্কুলে। এই দিনটিকে নিজের মনের খাতায় স্মরণীয় করে রাখতে পথচলতি গাড়ির চালকদের বিনামূল্যে চোখ পরীক্ষা করিয়ে তাঁদের হাতে তুলে দিলেন নতুন চশমা।
তাঁর এই উদ্যোগের নামকরণ নিজেই করেছেন তরুণ শিক্ষক— ‘অন্ধজনে দেহ আলো’। নিজের জন্মদিনের সঙ্গে রতন টাটার জন্মদিন পালন করার জন্য টাটা মোটরসের কাছে এক্স হ্যান্ডেলে আবেদন জানান অরিজিৎ। আবেদনে আপ্লুত হয়ে টাটা মোটরস কর্তৃপক্ষের আধিকারিকরাও শনিবার উপস্থিত হয়েছিলেন শনিবারের চোখ পরীক্ষা শিবিরে।
এ দিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল তিনটে পর্যন্ত ফালাকাটার মিল রোডে জাতীয় সড়কের ধারে ওই শিবির অনুষ্ঠিত হয়। পরিবহণ কর্মীদের গাড়ি দাঁড় করিয়ে তাঁদের চোখের পরীক্ষা করিয়েছেন অরিজিৎ চন্দ। এ জন্য বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত ছিলেন শিবিরে। স্থানীয় একটি নার্সিংহোম ও একটি আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সহায়তা নিয়েছেন শিক্ষক।
যাঁদের চোখের সমস্যা বেশি, তাঁদের হাতে অরিজিৎ তুলে দিয়েছেন নতুন চশমা। হাতের নাগালে চোখ পরীক্ষা করানোর সুযোগ পেয়ে পথচলতি মানুষও ভিড় জমান ওই শিবিরে। দিনের শেষে মোট ১০০ জনের চোখ পরীক্ষা করা হয়েছে, চোখের সমস্যা থাকায় তুলে দেওয়া হয়েছে ৭৫টি নতুন চশমা।
কেন এমন ভাবনা? অরিজিৎ বলেন, ‘আমার জন্মদিন পালন বড় কথা নয়। তার থেকে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ রতন টাটার জন্মদিন পালন। তাঁর নেতৃত্বেই যে হেতু দেশে অটোমোবাইল শিল্পে জোয়ার এসেছে, তাই এই শুভ দিনে গাড়ি চালকদের চোখ পরীক্ষার বিষয়টি আমার মাথায় আসে। চালকরা বছরের ৩৬৫ দিন দৃষ্টিশক্তির জোরে নিরাপদ যাত্রায় সভ্যতার গতিকে ধরে রেখেছেন। ফলে তাঁদের চোখের মূল্য অনেক। তাই তাঁদের চোখের যত্ন নিতে আমার এই ভাবনা।’
প্রাথমিক শিক্ষকের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে টাটা মোটরস কর্তৃপক্ষ। সংস্থার কোচবিহারের ম্যানেজার দীপঙ্কর রায় বলেন, ‘এই ধররনের অভিনব উদ্যোগে সামিল হতে পেরে খুবই আনন্দিত আমরা। মাস্টারমশাইকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাই। তিনি যে ভাবে আমাদের প্রয়াত কর্ণধারের জন্মদিন পালন করলেন, তা সত্যিই অভিনব।’