পিনাকী চক্রবর্তী, আলিপুরদুয়ার
চায়ের নিলাম যে ভাবে হচ্ছে তাতে লোকসানের আশঙ্কা করছেন ডুয়ার্সের বাগান মালিকরা। তাঁদের অভিযোগ, গভীর সঙ্কট আসতে চলেছে চা–ব্যবসায়। ইতিমধ্যে, ধুঁকতে থাকা অনেক চা বাগানই এ বার ‘লিন পিরিয়ড’–এর সময়ে বাগান শ্রমিকদের বেতন দিতে পারবে না বলে ঘোষণা করে দিয়েছে।
আলিপুরদুয়ার জেলায় রুগ্ন ও দুর্বল বেশ কিছু চা বাগানে ইতিমধ্যে নোটিস দিয়ে সতর্ক করেছেন বাগান কর্তৃপক্ষ। ঘটনায় উদ্বিগ্ন শ্রমিকরা। টি অ্যাসোসিয়েসন অফ ইন্ডিয়ার উত্তরবঙ্গের চেয়ারম্যান চিন্ময় ধর বলেন, ‘নিলামে যে ভাবে দাম পড়ছে, আমরা আশা করিনি। এ ভাবে চলতে থাকলে আগামীতে কী হবে আমরা জানি না। দুর্বল চা বাগানগুলিকে নিয়ে আমরা চিন্তিত। কারণ এই মুহূর্তে প্রায় ২৪টি চা বাগান বন্ধ। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।’
কেন্দ্রীয় সরকারের টি অ্যাক্ট মেনে টি–বোর্ডের নিয়ন্ত্রণে চা নিলাম হয়ে থাকে। শিলিগুড়িতে এ বার ৪২ নম্বর নিলাম থেকেই চায়ের দামে পতন শুরু হয়েছে। ৪৮ নম্বর নিলামে রীতিমতো উদ্বেগ ছড়িয়েছে বাগান মালিকদের মধ্যে। নিলামে ভালো চায়ের দামেও কার্যত রেকর্ড পতন হয়েছে।
২৮০ টাকা উপরে থাকা (প্রতি কেজি) প্রিমিয়াম গোত্রের চা মাত্র ৪ শতাংশ বিক্রি হয়েছে। যা একই নিলামে গত বছর ৬ শতাংশ বিক্রি হয়েছিল। ২০০ টাকার কম গুণমানের চা বিক্রি হয়েছে ৬০ শতাংশ। ইন্ডিয়ান টি প্ল্যান্টার্স অ্যাসোশিয়েসনের (আইটিপিএ) ডুয়ার্স শাখার সচিব রাম অবতার শর্মা বলেন, ‘এক কেজি চা পাতা তৈরি করতে যে খরচ হয়, তার তুলনায় কম দামে চা বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি আমরা।’
অক্টোবর মাসেই জানা গিয়েছিল, এ বছর প্রায় ১ কোটি কেজি চায়ের উৎপাদন কম হয়েছে উত্তরবঙ্গে। দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার তিন জেলার সিংহভাগ চা বাগানই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল আবহাওয়ার খামখেয়ালিতে। চা মহলের দেওয়া তথ্য, ২০২৩ সালে যেখানে শিলিগুড়ি চা নিলামে প্রায় ৭ কোটি ৯৬ লক্ষ কেজি চা পাতা বিক্রি হয়েছিল, এ বছর তা নেমে এসেছে প্রায় ৬ কোটি ৯৫ লক্ষে। এ বছর শেষ চারটি নিলামে কিলো প্রতি ৪০-৫০ টাকা চায়ের দাম কমেছে।
চা মালিক সংগঠনের তরাই ইন্ডিয়ান প্ল্যান্টার্স অ্যাসোশিয়েসনের সভাপতি মহেন্দ্র বনসল বলেন, ‘যারা নিলামে চা কিনছেন, এটা তাদের কৌশলও হতে পারে। তবে ক্ষতি হচ্ছে আমাদের। যাঁদের বিপুল পরিমাণ চা কেনার ক্ষমতা রয়েছে নিলামে, তাঁরাই দাম নিয়ন্ত্রণ করে।’
চা মালিক সংগঠন ও উত্তরবঙ্গের চা–বাগানগুলির অভিজ্ঞ ম্যানেজারেরা চায়ের নিলামের পদ্ধতি নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁদের একাংশের বক্তব্য, নিলামের গোড়ায় গলদ রয়েছে। কারণ, নিলামে একচেটিয়া ভাবে চায়ের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখে কমপক্ষে কুড়িটি কর্পোরেট হাউস ও ব্রোকার সংস্থাগুলি।
যে মৌরসিপাট্টা ভাঙার জন্য দীর্ঘদিন ধরে চা–বাগানগুলি কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আবেদন জানিয়ে এসেছে, সেই প্রস্তাব কেউ কানেই তুলছে না। এই কারণে দিনের পর দিন লোকসানের মুখ দেখতে হচ্ছে চা বাগান গুলিকে।’ টি অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়ার সেক্রেটারি জেনারেল প্রবীর ভট্টাচার্য্য বলেন, ‘প্রতিটি নিলামে চায়ের দাম কমে যাওয়ার প্রবণতা খুবই উদ্বেগের।’