• উত্তরবঙ্গে বাড়ছে ভিড়, পর্যটকদের টানছে আনকোরা স্পট
    এই সময় | ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪
  • এই সময়: বছর শেষের উদযাপনে ডাকছে পাহাড়। ক্রমশ ভিড় বাড়ছে দার্জিলংয়ে। একই ছবি ডুয়ার্সেও। বেশি টানছে অচেনা, আনকোরা লোকেশন। এরই সঙ্গে বাড়ছে হোটেল–রিসর্টের জন্য হাহাকার। গাড়ির চাহিদাও ক্রমশ বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে পোয়াবারো দালালদের।

    চেনা যাচ্ছে না দার্জিলিংয়ের ম্যালকে। বছরের শেষ ও শুরুর দিনগুলিতে ভিড় একটু বেশিই থাকে। এ বারও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। শুধু চেনা জায়গা নয়, কয়েকটি নতুন এলাকা হটস্পট হয়ে উঠেছে। দার্জিলিং লাগোয়া তাকদা চা বাগান, রঙ্গারুন চা বাগান, বাদামতাম, সুখিয়াপোখরি। কালিম্পংয়ের দলগাঁও, চিসাং, ঝালং ফেজ সিক্স, রিকিসুমে পর্যটকরা পৌঁছচ্ছেন। মিরিকের সৌরিনি কিংবা বিজনবাড়ির লামাগাঁও বছর শেষের উৎসবে আপন করে নিচ্ছে আগন্তুকদের।

    পাহাড়ে সব কিছুরই ‘রেট’ বাড়ছে। ২৫০ টাকার শেয়ার জিপের জন্য দিতে হচ্ছে ৩০০। জিপ ভাড়া চার হাজার থেকে বেড়ে পাঁচ হাজার। ১২০০ টাকার হোটেল ভাড়া এখন দু’হাজার। পর্যটকরা পাহাড়ে এসে বাজেট সামলাতে পারছেন না। নেহরু রোডের একটি হোটেলে উঠেছেন পঙ্কজ চট্টরাজ। বাড়ি হুগলিতে। ম্যাল লাগোয়া হোটেলে থাকছেন পর্যটক অভিষেক রায়। বাড়ি বর্ধমানে। অভিষেক বলেন, ‘চকবাজারে জিপ থেকে নামতেই এক দালাল সস্তায় হোটেল খুঁজে দেবে বলে নিয়ে এল ম্যালে। শেষ পর্যন্ত আড়াই হাজার টাকায় রফা হল। দালালকেও টাকা দিতে হল। স্ত্রী, ছেলেমেয়ে নিয়ে এসেছি। কোনও রকমে কয়েকটা দিন কাটিয়ে পালাব।’

    তবে দার্জিলিংয়ের একটি হোটেলের ম্যানেজার স্বপন বিশ্বাসের দাবি আলাদা। বলেন, ‘দার্জিলিংয়ে এখন প্রবল ঠান্ডা। হোটেল চালানোর জন্য কর্মচারী পাওয়া যাচ্ছে না। বেশি টাকা দিয়ে কর্মী রাখতে হচ্ছে। ফলে ভাড়া একটু বাড়বেই। আমার হোটেলে জায়গা নেই।’ এই পরিস্থিতির জন্য কেউ কেউ আবার দুষছেন পর্যটকদেরই। হিমালয়ান হসপিটালিটি অ্যান্ড ট্যুরিজম ডেভলপমেন্ট নেটওয়ার্কের সাধারণ সম্পাদক সম্রাট সান্যাল বলেন, ‘কিছু লোক থাকেই যাঁরা সুযোগ নিতে চায়। একজন পর্যটকের পক্ষে ঠগ বাছা সম্ভব হয় না। সেই জন্যই আমরা বলি রাজ্য সরকারের নথিভুক্ত ট্যুর অপারেটরদের মাধ্যমে হোটেল ও গাড়ি বুকিং করতে। তাহলে এই সমস্যা হয় না।’ হোমস্টে–র ভাড়াও কম কিছু নয়। মাথাপিছু ১৪০০-১৬০০ টাকায় থাকা যাচ্ছে এখানে।

    বাগডোগরা কিংবা নিউ জলপাইগুড়ি হয়ে যাঁরা পাহাড়ে আসছেন, তাঁদের পকেট হচ্ছে গড়ের মাঠ। খাবার খরচ আকাশছোঁয়া। পাতলা ডাল, রেডিমেড ভাজা, মুরগির ঝোলের লাঞ্চ ২০০ টাকা মাথাপিছু। লামাহাটা থেকে কম চেনা লালিগুড়াস, সর্বত্র একই ছবি। ২০ টাকার পাঁউরুটি ৪০ টাকা, ২০ টাকার চিপসের প্যাকেট ৩০ টাকা, ১০ টাকার ডিম সেদ্ধ ২০ টাকা আর ১০ টাকার চা হয়েছে ২০ টাকা। গাড়িতে উঠলে আরও ধাক্কা। ৪০০ টাকা দিয়ে এক কিমি পৌঁছতে পারেন। সুনতালে থেকে রামধুরা, নতুন স্পটেও ভিড়ই পাচ্ছেন পর্যটকরা। হোমস্টে, রিসর্টের ভাড়া ৩০ ডিসেম্বর থেকে ২ জানুয়ারি খুবই বেশি। বেশিরভাগ ঘর ১৫ শতাংশ অগ্রিম দিয়ে বুকিং করে রেখেছিল দালালচক্র। সেগুলিই আড়াই থেকে তিন হাজার টাকায় ভাড়া দেওয়া হচ্ছে। লাটাগুড়ি রিসোর্ট মালিক সংগঠনের সভাপতি অরিন্দম চৌধুরী বলেন, ‘একটা চক্র আছে, সেটা ঠিক। অনলাইনে সরাসরি যোগাযোগ করলে এটা এড়ানো যায়।’

    গোরুমারা ও লাটাগুড়িতে বন্যপ্রাণীর টানে আসেন পর্যটকরা। পাশাপাশি মূর্তি নদী, রামশাইয়ের জলঢাকা নদী ও জঙ্গলেরও আকর্ষণ কম নয়। বড়দিন থেকে চুকচুকি, রামশাই মেদলা, চাপড়ামাড়ির পাশাপাশি লাটাগুড়ি জঙ্গল সাফারিতে বিপুল ভিড়। টিকিট নিঃশেষিত। এ সব এলাকায় কমবেশি ১২০টি রিসোর্ট রয়েছে। লাটাগুড়ি রিসোর্ট ওনারস অ্যাসোসিয়েশন–এর সম্পাদক দিব্যেন্দু দেব বলেন, ‘৩১ ডিসেম্বর ও ১ জানুয়ারিতে ঘর ফাঁকা নেই। তবে তার আশপাশে, অন্যান্য দিনে কিছু ফাঁকা আছে।’ জলপাইগুড়ি শহর থেকে গোরুমারার দূরত্ব ৩০–৩৫ কিমি। তাই এখানকার হোটেলের উপর তেমন চাপ নেই। ঘর মিলছে সহজেই।

    ভ্রমণপিপাসুদের পরিবহণের ক্ষেত্রে সুখবর রয়েছে। উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগম জলদাপাড়া, লাটাগুড়ি, গোরুমারায় পৌঁছতে ট্যাক্সি সার্ভিস চালু হচ্ছে নতুন বছরের গোড়ায়। চলতি বছর দার্জিলিং ও মিরিকের পাহাড়ি পথে এই পরিষেবা চালু হয়েছিল। তার সাফল্যে এ বার ৩০ ও ৪০ আসনের বাস ছুটবে ডুয়ার্স অভিমুখে। এর পোশাকি নাম ট্যাক্সি সার্ভিস। নিউ জলপাইগুড়ি ও তেনজিং নোরগে বাস টার্মিনাস থেকে মিলবে পরিষেবা। এ সংক্রান্ত প্রস্তুতি চূড়ান্ত বলে জানিয়েছেন নিগমের এমডি দীপঙ্কর পিপলাই। ছোট গাড়ি নিয়ে পাহাড় ও ডুয়ার্সে যেতে যা খরচ, তার অনেক কমে সফর করা যাবে ট্যাক্সি সার্ভিসে।

  • Link to this news (এই সময়)