বাসিন্দাদের জন্য মুড়ি, চানাচুরের ব্যবস্থা, বাঘের আতঙ্কে হাঁড়ি চড়ল না রানিবাঁধের গোঁসাইডিতে
বর্তমান | ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি ও সংবাদদাতা, গোঁসাইডি: বাঘের আতঙ্কে হাঁড়ি চড়ল না গোটা গ্রামে। সকাল থেকেই পানীয় জল, খাবার না পেয়ে অস্থির হয়ে উঠল গোটা গ্রাম। বাসিন্দারা তুমুল বিক্ষোভ দেখালেন বনদপ্তরের বিরুদ্ধে। পরবর্তীতে অবশ্য বনদপ্তরের তরফে মুড়ি, চানাচুরের বন্দোবস্ত করা হয়। তবে, তা গুটিকয়েক বাসিন্দার জন্যই। সারাদিন কার্যত ভুখা পেটেই রয়ে গেলেন বাসিন্দারা।
শুক্রবার বাঘিনি জিনাত ছিল পুরুলিয়ার বোরো থানার ডাঙ্গারডি এলাকায়। সেখান থেকে শনিবার আশ্রয় নেয় পুরুলিয়া-বাঁকুড়া সীমান্তবর্তী রানিবাঁধ থানার গোঁসাইডি গ্রামের একটি ঝোপে। গ্রামের দু’টি পাড়া। একটি পাড়ায় বসবাস ১২টি পরিবারের। অন্য পাড়ায় পাঁচটি পরিবার বসবাস করে। যে পাড়ায় কম মানুষের বসবাস, সেই পাড়া সংলগ্ন ঝোড়েই আশ্রয় নিয়েছে বাঘিনি জিনাত। তাই সেই পাড়া এদিন সকালেই খালি করে দেয় বনদপ্তর। উনুন জ্বলেনি কোনও বাড়িতেই। অন্যদিকে, যে পাড়ায় অধিকাংশ মানুষের বসবাস, সেই পাড়ার বাসিন্দারাও এদিন সকাল থেকে আতঙ্কে নাওয়া খাওয়া ভুলেছেন।
গ্রামের বাসিন্দা বাসন্তী কোড়া বলেন, এদিন ভোরে সবে ঘুম থেকে উঠেছি। হঠাৎ দেখি গ্রামের ভিতর দু’টি গাড়ি প্রবেশ করেছে। তাঁরা আমাদের জানান যে গ্রামে বাঘ এসেছে। সাবধানে থাকতে এবং বাড়ির বাইরে বেরতে নিষেধ করে। সকাল হতেই গ্রামে একের পর এক গাড়ি প্রবেশ করতে থাকে। পুলিস ও বনকর্মীরা মিলে আমাদের ঘিরে রাখে। রান্নার জন্য যে মাঠে শাকপাতা তুলতে যাব, সে উপায়ও ছিল না। দুর্গামণি টুডু বলেন, আমাদের পাড়ায় অধিকাংশ মানুষের বসবাস। কিন্তু, গ্রামে জলের কোনও ব্যবস্থাই নেই। জল আনতে ওই পাড়ায় যাই। এদিন সকাল থেকে সেখানেও যেতে দিচ্ছে না। সকাল থেকে জল আনতে যেতে পারিনি। তেষ্টায় ছাতি ফেটে যাচ্ছে।
ফুলটুসি হাঁসদা বলেন, আমাদের পাড়ায় মাত্র পাঁচটি পরিবার থাকে। সকালে সবাইকে বাড়িছাড়া করেছে। রান্না করতে পারিনি। বাড়িতে বাচ্চা বাচ্চা ছেলে মেয়ে আছে। আমরা না হয় একবেলা খিদে সহ্য করে নেব। কিন্তু, বাচ্চারা খাবে কী? অর্পিতা হাঁসদা বলেন, সকাল থেকেই গবাদি পশুগুলি গোয়ালে আছে। কী অবস্থা কে জানে! বাসিন্দারা বনদপ্তরের উপর ক্ষোভে ফেটে পড়েন। পরবর্তীতে বনদপ্তরের তরফে বাসিন্দাদের আশ্বস্ত করা হয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই বাসিন্দাদের জন্য মুড়ি চনাচুরের ব্যবস্থা করেন বনকর্মীরা। যদিও, বাসিন্দাদের একাংশের ক্ষোভ, খাবার পেয়েছে কয়েকটি পরিবার। বাকিদের ভাগ্যে কিছুই জোটেনি। গোঁসাইডির বাসিন্দাদের দাবি, গ্রামে প্রবল জলের সমস্যা রয়েছে। তার অন্তত সমাধান করুক প্রসাশন।
১. বাঘিনীর আতঙ্কে অন্যত্র রাত্রি যাপনের জন্য কাঁথা কম্বল নিয়ে গ্রাম ছাড়ছেন মহিলারা। শনিবার পুরুলিয়া বাঁকুড়া সীমানায় গোসাইডি গ্রামের কাছে তোলা ছবি। ২. পুরুলিয়া বাঁকুড়া সীমানায় রানিবাঁধ ব্লকের পুড্ডি গ্রাম পঞ্চায়েতের গোপালপুর গ্রাম লাগোয়া ঝোপে বাঘিনী জিনাতের অবস্থান। বাঘের দেখা পেতে ভিড় গ্রামবাসীদের। ছবি: বাপ্পা রায়