কাটোয়ায় জ্যোতিষীর বাড়িতে গুলি চালিয়ে ডাকাতি, আটক ২
বর্তমান | ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪
সংবাদদাতা, কাটোয়া: শুক্রবার রাতে কাটোয়ার পুইনি গ্রামে এক জ্যোতিষীর বাড়িতে দুঃসাহসিক ডাকাতির ঘটনায় আতঙ্ক ছড়ায়। ছ’-সাতজনের ডাকাত দল বাড়িতে ঢুকে পরিবারের সদস্যদের গান পয়েন্টে রেখে লুটপাট চালায়। বাধা দিতে গেলে তারা জ্যোতিষীর ছেলেকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। হাঁসুয়া দিয়ে কোপায়। তাঁর হাতে আঘাত লাগে। এরপর দুষ্কৃতীরা বিনা বাধায় লুটপাট চালিয়ে বাইরে থেকে দরজা এঁটে চম্পট দেয়। খবর পেয়ে ঘটনার তদন্তে নামে পুলিস। ইতিমধ্যেই পুলিস দু’জনকে আটক করেছে। পূর্ব বর্ধমানের পুলিস সুপার সায়ক দাস বলেন, ঘটনার তদন্ত চলছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কাটোয়া-১ ব্লকের সরগ্রাম অঞ্চলের পুইনি গ্রামে ঢোকার মুখেই বাড়ি জ্যোতিষী নিবাস দাসের। স্ত্রী চায়না দাস, শাশুড়ি খুকু দাস ছেলে রাকেশ ও মেয়ে প্রতিমা দাসকে নিয়ে তিনি থাকেন। শুক্রবার নিবাসবাবু তাঁর স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে হুগলির কামারপুকুর এলাকায় বেড়াতে গিয়েছিলেন। বাড়িতে নিবাসবাবুর ছেলে, তাঁর বৃদ্ধা শাশুড়ি খুকুদেবী এবং খুকুদেবীর দিদি মিনা দাস ছিলেন। রাত ১০টা নাগাদ রাকেশ তাঁদের পোষ্যটিকে বাইরে নিয়ে যাওয়ার জন্য দরজা খোলেন। সঙ্গে সঙ্গে হুড়মুড়িয়ে ছ’জন তাঁদের বাড়িতে ঢুকে পড়ে। তারা রাকেশকে আগ্নেয়াস্ত্র, ভোজালি দেখিয়ে আলমারির চাবি চায়। রাকেশ ডাকাতিতে বাধা দিতে গেলে তাঁকে বাঁশ দিয়ে বেধড়ক পেটানো হয়। শেষে একজন তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। কিন্তু, সেটি তাঁর পিঠ ছুঁয়ে বেরিয়ে যায়। দুষ্কৃতীদের মধ্যে দু’জন রাকেশকে বসিয়ে মারধর করতে থাকে। বাকিরা দু’টি দলে ভাগ হয়ে দু’টি ঘরে লুটপাট চালায়। সেই সময় বাথরুমে ছিলেন বৃদ্ধা খুকুদেবী। তিনি বেরিয়ে আসতেই তাঁর দিকেও আগ্নেয়াস্ত্র তাক করা হয়।
রাকেশ বলেন, দুষ্কৃতীরা বাংলা ভাষাতেই কথা বলছিল। ওরা বলে, খবর রয়েছে তোদের প্রচুর টাকা পয়সা আছে। সব বের করে দে। তা না হলে তোদের মেরে বাড়ি জ্বালিয়ে দেব। তারপর আমাদের ৪০ ভরি রুপো, ৭ ভরি সোনার গয়না ও ৫০ হাজার নগদ টাকা নিয়ে ওরা বেরিয়ে যায়।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, বাড়িতে ঢোকার সময় পোষ্য কুকুরটিকে দুষ্কৃতীদের কয়েকজন মাঠের দিকে নিয়ে চলে যায়। সেখানে তারা কুকুরটিকে ছেড়ে দেয়। শনিবার সকালে কুকুরটি বাড়ি ফিরে আসে। পরিবারের সদস্যদের অনুমান, দুষ্কৃতীরা সব কিছু জেনে শুনেই তাঁদের বাড়িতে ডাকাতি করতে এসেছিল। বাড়িতে যে কুকুর রয়েছে, সেটাও তারা জানত। তাই প্রথমেই কুকুরটিকে বাইরে ছেড়ে দেয়। ওইদিন দুষ্কৃতীরা বেরিয়ে যাওয়ার সময় বাইরে থেকে দরজা এঁটে দিয়ে যায়। রাকেশের মোবাইল ফোন ভেঙে দেয়। পরে অন্য একটি ফোন থেকে রাকেশ প্রতিবেশীদের ডাকেন। দরজা খুললে বেরিয়ে আসেন। তারপর থানায় খবর দেওয়া হয়।
কাটোয়ার এসডিপিও কাশীনাথ মিস্ত্রি, আইসি তীর্থেন্দু গঙ্গোপাধ্যায় সহ বিশাল পুলিস বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। একটি গুলির খোল উদ্ধার করা হয়। দুষ্কৃতী দলের একটি ব্যাগও উদ্ধার হয়। তাতে হাতের গ্লাভসও ছিল।
খবর পেয়ে রাতেই নিবাসবাবু স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে ফিরে আসেন। তিনি বলেন, আমার বাড়ির মধ্যেই কৃষ্ণকালীর মন্দির রয়েছে। প্রতিমার জন্য ভক্তদের দেওয়া গয়নার পাশাপাশি আমার স্ত্রীরও গয়না নিয়ে গিয়েছে। শনিবার এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, চোখে মুখে আতঙ্কের রেশ কাটেনি বৃদ্ধা খুকুদেবীর। তিনি বলেন, এমনভাবে ওরা এসেছিল ভাবলেই আমার হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। আমাকে ওরা মেরে ফেলার হুমকিও দিচ্ছিল।