৫ নয় ৪টি আঙুল! নতুন বছরে তরুণীকে ‘ভিনগ্রহের প্রাণীর হাত’ গিফ্ট ডাক্তারদের
বর্তমান | ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪
বিশ্বজিৎ দাস, কলকাতা: জেমস ক্যামেরুনের ‘অবতার’ এবং তার সিক্যুয়েল ‘অবতার: দ্য ওয়ে অব ওয়াটার’ সিনেমার আশ্চর্য চেহারার কুশীলবদের কথা মনে আছে? শরীরের অদ্ভুত নীল রঙে আটকে না গিয়ে কেউ কি লক্ষ্য করেছিলেন তাঁদের হাতের দিকে? মানুষের মতো পাঁচ আঙুলবিশিষ্ট নয়, তাঁদের প্রত্যেকের হাতে আঙুলের সংখ্যা চার! তা নিয়েই আশ্চর্য সব অ্যাডভেঞ্চার করে বেড়াচ্ছিলেন ভিনগ্রহের নায়ক-নায়িকা ও সেই জগতসংসারের বিচিত্রদর্শন প্রাণীরা।
চিকিৎসাশাস্ত্রে স্নায়ুরোগবিদ্যায় আছে ‘এলিয়েন হ্যান্ড সিনড্রোম’। আবার অর্থোপেডিকস শাস্ত্রেও রয়েছে ‘এলিয়েন হ্যান্ড’। যখন হাতে আর পাঁচজন মানুষের মতো পাঁচটি আঙুল থাকে না, হাতের মতো দেখতে হলেও থাকে চারটি বা কম সংখ্যক আঙুল, তখন বলা হয় এলিয়েন হ্যান্ড।
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি বছর পঁয়ত্রিশের এক গৃহবধূর ডান হাতের তর্জনীতে হয়েছিল বিশাল জায়েন্ট সেল টিউমার। ড্রেসিং করা সত্ত্বেও অনর্গল রক্তপাত হয়ে যাচ্ছিল সেখান থেকে। স্বাভাবিক কাজকর্ম দূর অস্ত, গোটা ডান হাতই বিড়ম্বনা এবং মারাত্মক বিপদের কারণ হয়ে উঠেছিল বসিরহাটের সুমিত্রা বাছার (নাম পরিবর্তিত) নামে ওই মহিলার। সকলেই হাল ছেড়ে দিয়েছিলেন। চিকিৎসকরা পর্যন্ত বলা শুরু করেছিলেন, ডান হাতের তর্জনীর মেটাকারপাল হাড়ের ওই টিউমার থেকে রক্ষা পাওয়ার পথ একটাই—নষ্টের গোড়া আঙুলসুদ্ধ হাতটাই বাদ দেওয়া।
ঠিক তখনই শনিবার এক আশ্চর্য অপারেশনে টিউমার আক্রান্ত তর্জনী বাদ দিয়ে পুনর্গঠন করে সুমিত্রাদেবীকে ‘চার আঙুলের হাত’ উপহার দিলেন মেডিক্যালের চিকিৎসকরা। যেখানে ডান হাত ছাড়াই কাটত তাঁর বাকি জীবন। সেখানে চার আঙুলের এই ‘নতুন’ হাত নববর্ষের রোগিণীকে দেওয়া তাঁদের তরফের সেরা উপহার, এমনটাই জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
মেডিক্যালের তিন বিভাগ—অর্থোপেডিকস, প্লাস্টিক এবং অ্যানাসথেসিওলজি সম্মিলিতভাবে করল এই জয়েন্ট অ্যাডভেঞ্চার অপারেশন। চমৎকার বিষয় হল, তর্জনী বাদ দিলেও সেটির চামড়া কিন্তু সচেতনভাবে রেখে দিয়েছিলেন চিকিৎসকরা। বাদ পরা শূন্যস্থান সেই চামড়া দিয়ে নিখুঁতভাবে ঢেকে দেন প্লাস্টিক সার্জেন ডাঃ প্রবীরকুমার যশ, ডাঃ দীপঙ্কর মুখোপাধ্যায়রা।
এখন একটি বড় প্রশ্ন হল, টিউমার আক্রান্ত হাড় ও তর্জনী বাদ গেলেও সেখানে থাকা সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম শিরা-উপশিরাগুলি কীভাবে সামলাল অস্ত্রোপচারকারী অর্থো-প্লাস্টিক সার্জারি টিম? চিকিৎসকমহল সূত্রে জানা গিয়েছে, এমন প্রায় ১৫-২০টি শিরা-উপশিরাকে দামি এক ধরনের ক্লিপ দিয়ে আটকে দিয়েছিলেন তাঁরা। সেই এক-একটি ক্লিপেরই দাম প্রায় পাঁচ হাজার টাকা। সরকারি হাসপাতাল বলে মেডিক্যালে তা মিলেছে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে।
অর্থোপেডিকস বিভাগের অধ্যাপক ডাঃ কৌশিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে মূল অপারেশনে ছিলেন সহকারী অধ্যাপক ডাঃ সৈকত সাউ। তিনি বলেন, ‘জীবনের অন্যতম চ্যালেঞ্জিং অপারেশন। আমরা একে বলি ‘লিম্ব স্যালভেজ সার্জারি’। অন্য কোথাও এটি করতে শুধু সার্জেনের টিমেরই ফিজ হত আনুমানিক ১২-১৫ লক্ষ টাকা। আশা করছি, শীঘ্রই সুমিত্রাদেবী ডান হাতটি আর পাঁচজনের মতো ব্যবহার করতে পারবেন।’ নিজস্ব চিত্র