তারক চক্রবর্তী, শিলিগুড়ি: উত্তরবঙ্গ ও উত্তর-পূর্ব ভারতে মাদক কারবারিরা জাল বিস্তার করেছে। পুলিস সহ একাধিক নিরাপত্তা বাহিনীর লাগাতার অভিযানে একের পর এক পাচারকারী ধরা পড়ছে। উদ্ধার হচ্ছে কোটি কোটি টাকার মাদকদ্রব্য। তালিকায় রয়েছে ইয়াবা, ব্রাউন সুগার থেকে শুরু করে গাঁজা। অন্যদিকে, বর্তমানে উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে ফের মাথাচাড়া দিয়েছে একাধিক জঙ্গি সংগঠন। গোয়েন্দাদের দাবি, জঙ্গি সংগঠনগুলি আচমকা তাদের গতিবিধি বাড়িয়েছে। কেএলও সুপ্রিমো জীবন সিংহ অজ্ঞাতবাসে থাকলেও গোপন ডেরা থেকে সংগঠন চালিয়ে যাচ্ছে তাঁর দলবল। একাধিক সময়ে ভিডিও বার্তা দিয়েছেন জীবন সিংহ। একসময় কেএলও সহ একাধিক জঙ্গি সংগঠনের কোমর ভেঙে দিয়েছিল পুলিস ও সেনাবাহিনী। টাকা আসার সমস্ত উৎস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।
তাহলে ফের এই সংগঠনের টাকার উৎস কী? গোয়েন্দাদের দাবি, করোনা পরবর্তীতে উত্তর-পূর্ব ভারত ও উত্তরবঙ্গে মাদক পাচার ব্যাপক বেড়েছে। গত একবছরে রেকর্ড পরিমাণে মাদক উদ্ধার হয়েছে। তাহলে কী এই মাদক পাচারের টাকায় ঝিমিয়ে পড়া সংগঠনকেই ঢেলে সাজাচ্ছে জঙ্গিরা? যদিও রাজ্য পুলিসের শীর্ষ কর্তারা এই তত্ত্বের কোনও প্রমাণ পাননি বলে জানিয়েছেন। কিন্তু মাদকের অর্থে জঙ্গি সংগঠনের শক্তি যে বৃদ্ধি হচ্ছে না, তা হলফ করে তাঁরা বলতে পারছেন না।
উত্তরবঙ্গের আইজি রাজেশ যাদব বলেন, মাদক পাচারের অর্থ জঙ্গিরা ব্যবহার করতে পারে। এমন সম্ভাবনা মোটেই উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তবে সাধারণত আমাদের হাতে যারা গ্রেপ্তার হয় তারা শুধুমাত্রই পাচারকারী। আমরা তাদের গতিবিধি সক্রিয়ভাবে নজরদারির মধ্যেই রাখি। মণিপুর, মিজোরাম সহ উত্তর-পূর্ব ভারত থেকে যে মাদকদ্রব্য পাচার হয়, সেদিকেও আমাদের বাড়তি নজরদারি রয়েছে।
গোয়েন্দাদের একাংশের দাবি, মণিপুর, অসম, নাগাল্যান্ড থেকে মাদক পাচার হয়। শিলিগুড়িকে করিডর করে সেই মাদক উত্তরবঙ্গ সহ রাজ্যের নানা অংশে ছড়িয়ে পড়ে। মালদহ, উত্তর দিনাজপুর, মুর্শিদাবাদ জেলাকে কার্যত গোডাউন হিসেবেই ব্যবহার করা হয়। শিলিগুড়ি পুলিসের অভিযানে চলতি বছরেই প্রায় ১০০ কোটি টাকার মাদক উদ্ধার হয়েছে। একইভাবে ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বরে উদ্ধার হওয়া মাদকের আনুমানিক বাজারমূল্য ১০০কোটি টাকা। উত্তর দিনাজপুরে চলতি ডিসেম্বরেই এক কোটি টাকার মাদক উদ্ধার হয়েছে। মালদহেও গত অক্টোবর পর্যন্ত ৫০ কোটি টাকার মাদক মিলেছে। পুলিসের একটি সূত্রের দাবি, বাস্তবে এর থেকেও অনেক বেশি মাদক পাচার হয়। এই পাচারের টাকা মূলত কালোবাজারে ব্যবহৃত হয়। স্বাভাবিকভাবেই সেই টাকায় অস্ত্র কেনা খুবই সহজ। এই ধারণা যে একেবারে অমূলক নয় তা একাধিক জঙ্গি সংগঠনের গতিবিধি দেখেই বেশ বোঝা যাচ্ছে।