অভিজ্ঞতার মাপকাঠিতে আসন্ন মাদুরাই পার্টি কংগ্রেসে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন মহম্মদ সেলিম। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক নিজে দিল্লি যেতে গররাজি না হলে পার্টি কংগ্রেসে সেলিম দিল্লির গোপালন ভবনে প্রথম বাঙালি সাধারণ সম্পাদক হতে পারেন। সিপিএমের বয়সের মাপকাঠিতে প্রকাশ কারাট, বৃন্দা কারাট, মানিক সরকার, সুভাষিণী আলি–সহ বর্তমান পলিটব্যুরোর একাধিক নেতা আর দলের সাধারণ সম্পাদক হতে পারবেন না।
পিনারাই বিজয়ন কেরালার মুখ্যমন্ত্রীর পদে রয়েছেন। এই প্রেক্ষাপটে কেন্দ্রীয় কমিটি ও পলিটব্যুরোতে কাজ করার অভিজ্ঞতার নিরিখে সেলিম এগিয়ে। কেরালায় সিপিএমের ওজনদার নেতা এমএ বেবি–র সেই অভিজ্ঞতা নেই। জাতীয় রাজনীতিতেও সেলিমের যে অভিজ্ঞতা ও পরিচিতি রয়েছে তা এই মুহূর্তে তাঁর সমবয়সি কেন্দ্রীয় কমিটির কোনও সদস্যর নেই।
এই সমীকরণেই সীতারাম ইয়েচুরির শূন্য জায়গায় সেলিম সাধারণ সম্পাদক হওয়ার যোগ্যতম বলেই সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির একাধিক সদস্যর মূল্যায়ন। সেলিম যদি দিল্লির গোপালন ভবনে যান, সে ক্ষেত্রে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের ব্যাটন কার হাতে যাবে বঙ্গ সিপিএমের অন্দরে সেই অঙ্ক কষা শুরু হয়ে গিয়েছে। সুজন চক্রবর্তী, রামচন্দ্র ডোম, আভাস রায়চৌধুরী—এমন একাধিক নাম নিয়ে সিপিএমের জেলা ও রাজ্যস্তরের নেতাদের মধ্যে চর্চা চলছে।
সিপিএমের রাজ্য কমিটির একাধিক নেতার বক্তব্য, সেলিমের দিল্লি যাওয়ার প্রবল সম্ভবনা রয়েছে দেখেই আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের কর্তৃত্ব কার হাতে যাবে সেই অঙ্ক কষা শুরু হয়েছে। এই সমীকরণের–ই প্রতিফলন সিপিএমের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সম্মেলনে দেখা গিয়েছে বলে এই নেতাদের বক্তব্য।
সিপিএমের রাজ্য কমিটির এক সদস্যের কথায়, ‘দক্ষিণ ২৪ পরগনার নতুন জেলা কমিটি থেকে ১৬ জন নাম প্রত্যাহার করলেও নিজের জেলায় সুজন চক্রবর্তী দলের মধ্যে সংখ্যালঘু এটা স্পষ্ট হয়েছে। দলের মধ্যে এটা একটা বার্তা গেল।’ রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য হিসেবে সুজন এখন উত্তর ২৪ পরগনা জেলার দায়িত্বে রয়েছেন। একাধিক ইস্যুতে উত্তর ২৪ পরগনার জেলা সম্মেলন উত্তপ্ত হওয়ার প্রবল সম্ভবনা রয়েছে। সুজন সেই পরিস্থিতি কী ভাবে সামাল দেন সেই দিকে সিপিএমের অনেক নেতা তাকিয়ে রয়েছেন।
আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের অন্য নেতাদের মধ্যে রামচন্দ্র ডোম পলিটব্যুরোর সদস্য হলেও দলীয় সংগঠন, গণসংগঠনে কাজ করার অভিজ্ঞতা, ভোট রাজনীতির অভিজ্ঞতার নিরিখে সুজন চক্রবর্তী, শমীক লাহিড়ি আবার রামচন্দ্র অথবা আভাসের থেকে এগিয়ে বলে সিপিএমের একাধিক নেতার পর্যবেক্ষণ। শ্রীদীপ ভট্টাচার্য আবার একেবারেই দলের তাত্ত্বিক নেতা।
আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের বৃত্তের বাইরে যাঁর কোনও পরিচিতি নেই বলে সিপিএমের নেতাদের পর্যবেক্ষণ। যদিও সিপিএমের একাধিক নেতার বক্তব্য, সিপিএমের আসন্ন রাজ্য সম্মেলনে–ই যে সেলিম রাজ্য সম্পাদক পদ থেকে সরে যাবেন কোনও কথা নেই। আগামী ২২–২৫ ফেব্রুয়ারি হুগলির ডানকুনিতে সিপিএমের রাজ্য সম্মেলনে সেলিম ফের সম্পাদক পদে নির্বাচিত হতে পারেন।
তবে পার্টি কংগ্রেসে তিনি সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হলে তাঁকে দ্রুত রাজ্য সম্পাদকের পদ ছাড়তে হবে। তখন ডানকুনি সম্মেলন থেকে যে নতুন রাজ্য কমিটি নির্বাচিত হবে সেই কমিটিতে যে শিবিরের পাল্লা ভারী থাকবে, সেই শিবিরের নেতার হাতে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের ব্যাটন যেতে পারে।
সেই দিকে তাকিয়ে সিপিএমের অভ্যন্তরীণ সমীকরণ তৈরি হচ্ছে বলে দলের একাংশের বক্তব্য। তাই দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সম্মেলনের কোন্দল বিচ্ছিন্ন কোনও ঘটনা নয়, সিপিএমের অভ্যন্তরীণ ঘুঁটি সাজানোর প্রতিফলন বলেই দলের একাধিক নেতার পর্যবেক্ষণ।