• বছর শেষে ঝাঁকিয়ে দিল জ়িনাত, ‘বাঘবন্দি’র এমন দীর্ঘ পর্ব শেষ কবে দেখেছে, মনে করতে পারছে না বনদপ্তরও
    এই সময় | ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪
  • বছর শেষে ভেলকি দেখাল বটে। ২০২৪-এর সালতামামিতে ঢুকে পড়ল বাঘিনি জ়িনাতও। প্রায় দু’সপ্তাহ সে নাকে দড়ি দিয়ে বনকর্মীদের ঘোরাল। বুঝিয়ে দিল, জাত বাঘিনি কাকে বলে। কখনও বনকর্মীদের পাতা জাল ছিঁড়ে পালিয়েছে, তখনও জাস্ট ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়েছে তার জন্য সাজানো ভেট। এমনকী ঘুমপাড়ানি ওষুধেও প্রথমবার কাবু করা যায়নি জ়িনাতকে। তাকে ধরতে কৌশল বদলাতে হয়েছে বনদপ্তরকেও। ঠিক কোন পথে এল সাফল্য? ‘বাঘবন্দি খেলা’র লাস্ট কয়েক ওভারের টানটান উত্তেজনার মুহূর্ত এইসময় অনলাইনের সঙ্গে শেয়ার করলেন পশ্চিমবঙ্গের প্রধান মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণ) দেবল রায়। ফোনের এপারে সাংবাদিক শিলাদিত্য সাহা।

    শনিবার থেকে শুরু হয় ট্রাঙ্কুলাইজ়েশন প্রক্রিয়া

    নাইলন ফেন্সিং নেট দিয়ে ঘেরা এলাকার মধ্যেই ছিল শনিবার থেকে। খুবই অ্যাজিটেটেড হয়ে ছিল জ়িনাত। শনিবার রাত ১টা ২০ নাগাদ প্রথম ডার্ট করা হয়। তার পরও আরও দু’টো ছোট্ট ডোজ় দেওয়া হয় ওষুধের। বাঘিনির যা বয়স ও ওজন, তাতে সেই মুহূর্তে এর থেকে বেশি ওষুধের ডোজ় দেওয়া যেত না। বনাধিকারিকরা ঠিক করেন, জ়িনাতকে বিশ্রাম নিতে দিতে হবে। রবিবার ভোর সাড়ে ৪টেয় ‘কল অফ’ করেন তাঁরা, ঘুমিয়ে পড়ে জ়িনাতও।

    বেলার দিকে ঘুম ভাঙলে একবগ্গা, জেদি ভাবটা কাটে জ়িনাতের। ঘুম থেকে উঠে নাইলন ফেন্সিং দিয়ে ঘেরা এলাকার ভিতরে থাকা ছোট্ট পুকুর থেকে ফুরফুরে জি়নাত জলও খায়। রবিবার দুপুর ৩টেয় নতুন করে আবার শুরু হয় তাকে বাগে আনার প্রক্রিয়া। বিকাল যখন ৪টে ৯। প্রথম ডার্টিংয়েই কাজ হয়। বাগে আসে বাঘিনি।

    কিন্তু ধরা পড়ার পরও তো নড়েচড়ে উঠছিল জি়নাত

    মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক্স হ্যান্ডলে জ়িনাতের খাঁচাবন্দি একটি ভিডিয়ো শেয়ার করেন। সেখানে হঠাৎই নড়ে উঠতে দেখা যায় বন্দিনী-বাঘিনিকে। পশ্চিমবঙ্গের প্রধান মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণ) দেবল রায় জানান, নড়লেও আচ্ছন্ন ও। আর ওর সঙ্গে তিনজন ভেটেরিনারি সার্জেনও আছেন। তাঁদের নজরদারিতেই আছে বাঘিনি।

    রাতেই কলকাতায় জ়িনাত

    এ বার জ়িনাতের ঠিকানা আলিপুর চিড়িয়াখানা। আপাতত ওর চিকিৎসা চলবে। কারণ, টানা ধকলের পর ওর শরীরে কোথাও কোনও সমস্যা হল কি না, সেটা দেখা হবে। এখনও অবধি স্বাস্থ্যকরই আছে, শরীরের সমস্ত প্যারামিটারই স্বাভাবিক। বাঘের পরিচর্যার জন্য আমাদের রাজ্যে দার্জিলিং ছাড়া সব থেকে ভালো জায়গা আলিপুর চিড়িয়াখানা। তাই কিছুদিন সেখানে থাকবে সে।

    আপাতত পর্দানশীন জ়িনাত

    আলিপুর চিড়িয়াখানায় আনার পর এখন লোকচক্ষুর আড়ালে থাকবে জ়িনাত। ভেটেরিনারি অফিসার ছাড়া আর কাউকে ও দেখবে না। কারণ খুব শিগগিরি ওকে ওর স্বাভাবিক জীবনে ফেরানো হবে। অর্থাৎ জঙ্গলে ফিরবে সে। সেটা মাথায় রেখেই সবার থেকে আড়াল করে রাখার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

    ফেরানো হবে সিমলিপালেই

    ওডিশার সিমলিপাল থেকে ‘উইন্টার ট্যুর’-এ বাংলায় ঢুকেছিল জ়িনাত। ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া ঘোরা শেষ। এ বার কলকাতায় কিছু দিন থেকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব জি়নাতকে ফেরানো হবে সিমলিপালে। এর জন্য অবশ্য কিছু পেপার ওয়ার্ক রয়েছে বনদপ্তরের।

    শেষ মুহূর্তে পুরুলিয়ার রাইকার জঙ্গলে জাল ছিঁড়ে বেরিয়ে গিয়েছিল

    বাঘ ধরতে শেষ কবে এমন টানটান উত্তেজনার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল মনে করতে পারছেন না পশ্চিমবঙ্গের প্রধান মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণ) দেবল রায়। তাঁর কাছে, ভীষণ স্পেশাল এই পর্ব। তিনি বলেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম হয়ত সহজ হবে। টোপ দিয়েই হয়ত বাগে আনা যাবে। কিন্তু সমস্যা হল, সাতদিন না খেয়ে থাকলেও টোপে পা দিচ্ছিল না ও। হতে পারে আগে কখনও ও খাঁচাবন্দি হয়েছে। এমনটা একবার হলেই ওরাও ভীষণ চালাক হয়ে যায়। তাই ধীরে ধীরে আমরাও কৌশল বদলাই। তিনদিন আগে শেষ মুহূর্তে পুরুলিয়ার রাইকার জঙ্গলে জাল ছিঁড়ে বেরিয়ে গিয়েছিল। তার পর রবিবারের সাফল্য। ভীষণ স্পেশাল এটা।’

  • Link to this news (এই সময়)