নিখোঁজ হওয়ার চার দিনের মাথায় খোঁজ মেলে শিলিগুড়ির মেডিক্যাল রিপ্রেজ়েন্টেটিভ বা এমআর জয় অধিকারীর। রবিবার ফিরলেন শিলিগুড়িতে। বিমানে বাগডোগরা নামেন। সেখান থেকে প্রথমে নিউ জলপাইগুড়ি জিআরপিতে আনা হয় তাঁকে। এর পর সেখানে তাঁর বয়ান নেওয়ার পর দুপুরে সমস্ত ফর্মালিটি শেষ করে বাড়ির পথে রওনা হন।
কিন্তু এ দিন সাংবাদিকদের একটি প্রশ্নেরও জবাব দেননি জয়। তাঁর সহকর্মীরা কার্যত ব্যারিকেড তৈরি করে তাঁকে গাড়িতে তোলেন। কেন সহকর্মীদের এই অতি সক্রিয়তা, অনেকেই তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
অন্যদিকে এনজেপি স্টেশনে জিআরপির আইসি প্রেমাশিস চট্টরাজ, শিলিগুড়ি জিআরপি ডিএসপি অরিজিৎ পাল চৌধুরী একযোগে জয়কে জিজ্ঞাসাবাদ করেন বলে খবর। প্রায় ৩ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পাশাপাশি বয়ান রেকর্ড করা হয়। পরে ডিএসপি অরিজিৎ পাল চৌধুরী বলেন, ‘জয় আমাদের প্রাথমিক ভাবে বলেছেন, কেউ তাঁকে জোর করে ভয় দেখিয়ে নিয়ে গিয়েছে। সেই মতো আমরা ওনার থেকে একটি লিখিত অভিযোগ নিয়েছি। তবে অপহরণ কিংবা চুরির কোনও ঘটনা ঘটেনি।’
শিলিগুড়ির হাকিমপাড়ার বাসিন্দা জয় অধিকারী গত ২৪ ডিসেম্বর কাজের জন্য মালদায় গিয়েছিলেন। একটি ওষুধ কোম্পানির এরিয়া সেলস ম্যানেজার তিনি। সরাইঘাট এক্সপ্রেসে শিলিগুড়ি ফেরার কথা থাকলেও রাত ১২টা নাগাদ স্ত্রীকে মেসেজ করে জানান, তিনি ফাঁদে পড়েছেন। এর বেশি কিছু এখন আর বলতে পারছেন না।
এর পরই পরিবারের তরফে শিলিগুড়ি জিআরপি ও পানিট্যাঙ্কি ফাঁড়িতে অভিযোগ জানানো হয়। ২৭ তারিখ রাতে মুম্বই জিআরপি থেকে জয়ের বাড়িতে ফোন আসে বলে খবর। দাদার স্টেশন থেকে তাঁকে অচৈতন্য অবস্থায় পাওয়া যায় বলে জানানো হয়।
রবিবার জয় বাড়ি ফিরেছেন। তবে ইতিমধ্যেই একাধিক বিষয় সামনে আসছে বলে সূত্র মারফত খবর। জিআরপি সূত্রে খবর, স্ত্রীকে ট্রেনে ওঠার কথা জানালেও জয় ২৪ তারিখ রাতে সরাইঘাট এক্সপ্রেসে ওঠেননি। সিসিটিভি ফুটেজ বলছে, মালদা থেকে অন্য ট্রেন ধরেন এবং হাওড়ায় যান। হাওড়া স্টেশনে তার ফুটেজ পাওয়া গিয়েছে বলে খবর। সেখান থেকেই মুম্বইয়ের ট্রেন ধরেন।
মুম্বই থেকে জিআরপির মাধ্যমে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন জয়। সূত্রের খবর, তাঁর বক্তব্যে অসঙ্গতি পাওয়া যাচ্ছে। ঘন ঘন বক্তব্য বদলাচ্ছেন। যেমন, একবার বলেছেন, দু’জন তাঁকে নিয়ে যাচ্ছিল। পরে বলেছেন, তিনজন। একবার বলেছেন, দুই যুবক ছিলেন, পরে বলেছেন, বয়স্ক লোক। ঘটনা আদৌ অপহরণ কি না তা নিয়েও ধন্দ রয়েছে। জয়ের সঙ্গে থাকা কোনও জিনিসই খোয়া যায়নি। ফলে চুরির কোনও ধারাও তদন্তে যোগ হচ্ছে না এখনই। মুম্বই জিআরপির কাছে সিসিক্যামেরার ফুটেজ চেয়ে পাঠিয়েছে শিলিগুড়ি জিআরপি।
আরেক সূত্র মারফত জানা যাচ্ছে, ঘনিষ্ঠমহলে জয় নাকি জানিয়েছেন, সে দিন রাতে সরাইঘাটে ফেরার কথা থাকলেও ভিড়ের জন্য উঠতে পারেননি। পরে তিস্তা তোর্সার জন্য অপেক্ষা ছিলেন। এ দিকে তিস্তা তোর্সা যখন স্টেশনে ঢোকে, হাওড়াগামী কামরূপ এক্সপ্রেসও সে সময়ই স্টেশনে আসে। হঠাৎ জয়ের মাথা ঘুরে যাওয়ায় ভুল করে কামরূপ এক্সপ্রেসে উঠে পড়েন তিনি। সেখানেই নাকি দুই যাত্রীর সঙ্গে পরিচয়, তাঁদের কাছ থেকে খাবার খাওয়া এবং পরবর্তীতে শরীরে অস্বস্তি হতে থাকায় টয়লেটে গিয়ে স্ত্রীকে মেসেজ করেন।
সিটে ফেরার পর সেই ব্যক্তিরা নাকি মোবাইল ফোন নিয়ে সিম কার্ড খুলে নেয় এবং হাওড়া পর্যন্ত নিয়ে যায় জয়কে। সেখান থেকে মুম্বইগামী ট্রেনে উঠতে বলা হয়। না হলে মাদক কেস দিয়ে দেবে বলে ভয় দেখানো হয়। সেই ভয়ে নাকি জয় মুম্বইগামী ট্রেনে ওঠেন বলে ঘনিষ্ঠমহলে জানিয়েছেন, খবর সূত্রের। মুম্বইয়ে নামার পর তাঁর নেশা কাটে এবং মুম্বই জিআরপির কাছে সাহায্য চান।
শুধু তাই নয়, এর পর ব্যাগ হাতিয়ে ফোন, সিম কার্ডও খুঁজে পান। ফোন অন করে প্রথমে নিজের অফিসের সিনিয়র ম্যানেজারকে জানান। কিছু টাকাও চান। সেই টাকায় চাউমিন খেয়ে বাড়িতে ফোন করেন। এই সমস্ত কথার বাস্তব ভিত্তি কতটা, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।