অভিষেক পাল, বহরমপুর: হরিহরপাড়ার বারুইপাড়া হাটমোড়ে ঘর ভাড়া নিয়ে মাদ্রাসা খুলেছিল এবিটি জঙ্গি আব্বাস আলি। এলাকার কিশোরদের নিয়ে আসত সেখানে। উদ্দেশ্য ছিল আত্মঘাতী বাহিনী তৈরির। সাত বছর থেকে ১৩ বছরের নাবালকদের মগজধোলাই চলত সেখানে। আরবি পড়ানোর নামে সেখানে পড়ুয়াদের ভারত বিরোধী মনোভাব বিস্তারের কাজ চালাত। রীতিমতো জঙ্গি তৈরির প্রশিক্ষণ চলত ওই খারিজি মাদ্রাসায়। হরিহরপাড়া থানা থেকে মাত্র তিন কিলোমিটারের মধ্যে এমন জঙ্গি ডেরা থাকলেও টের পায়নি পুলিস।
গত ১৭ ডিসেম্বর ভোররাতে হরিহরপাড়া থেকে আব্বাস ও তার সহযোগী মিনারুল শেখকে গ্রেপ্তার করে অসম রাইফেলস ও এসটিএফ। হরিহরপাড়া থেকে দু’জন জঙ্গী গ্রেপ্তার হওয়ার পরই জেলাজুড়ে শোরগোল শুরু হয়েছে। আব্বাস মাদ্রাসা সংলগ্ন এলাকার বাড়িতে থাকত। সেখানে তার স্ত্রী ও মা আছে। তার বাড়ি ও মাদ্রাসায় আনসারুল্লা বাংলা টিম তথা এবিটির শীর্ষ জঙ্গি নেতাদেরও আনাগোনা ছিল। এবিটি প্রধান জসিমুদ্দিন রহমানির অত্যন্ত বিশ্বস্ত শাদ রবি ওরফে সাব শেখের সঙ্গে আব্বাসের পারিবারিক সম্পর্ক ছিল। তার বাড়ি এবং মাদ্রাসায় অবাধ যাতায়াত ছিল শাদের। কয়েকদিনের মধ্যেই সেখানে অস্ত্র প্রশিক্ষণের পরিকল্পনা ছিল। কার্যত পুলিসের নাকের ডগায় জঙ্গি কার্যকলাপ হলেও কোনও তথ্য ছিল না পুলিসের কাছে।
অপরদিকে, হরিহরপাড়ার বহড়ান এলাকার আজমতপুরের মিনারুল শেখের বাড়ি ছিল জঙ্গিদের ‘সেফ হাউস’। বাড়ির দুটি ঘরে স্ত্রী ও দুই ছেলেকে নিয়ে থাকত মিনারুল। মাঝেমধ্যে বাংলাদেশ এবং অসম থেকে বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠীর লোকজন এসে উঠত তার বাড়িতে। বাড়িতে আসা জঙ্গিদের আত্মীয় বলে এলাকাবাসীকে জানাত। এবিটির শীর্ষ জঙ্গি নেতাদের নিরাপদ আশ্রয়ে রেখে তাদের কাছে বিশ্বস্ত গিয়ে উঠেছিল সে। গ্রামের সাদাসিধা মিনারুলের বাড়িতে কারা আসছে সে ব্যাপারে খুব একটা মাথা ঘামাত না গ্রামবাসীরা। থানা থেকে তার বাড়ির দূরত্বও বেশি নয়। তা সত্ত্বেও হরিহরপাড়া থানার পুলিস গত কয়েক বছর ধরে এই এলাকায় জঙ্গিদের আনাগোনার ব্যাপারে কোনও হদিশ না পাওয়ায় বিরোধীরা প্রশ্ন তুলছে।
বিজেপির বহরমপুর সাংগঠনিক জেলার সাধারণ সম্পাদক লাল্টু দাস বলেন, দেশের নিরাপত্তা সবার আগে। এখানকার পুলিস বাংলাদেশের জঙ্গিদের কীজন্য সহযোগিতা করছে তা জানা নেই। দিনের পর দিন হরিহরপাড়ায় থানার এত কাছে তারা ডেরা বেঁধেছিল। অথচ পুলিস কিছুই জানত না। এইসব দেশদ্রোহীদের জন্য কোনও রাজনৈতিক দলের সহানুভূতি থাকা উচিত নয়।
বহরমপুরের কংগ্রেস নেতা মাহফুজ আলম ডালিম বলেন, এই জেলা থেকে যে সমস্ত জঙ্গিরা ধরা পড়েছে তাদের উপযুক্ত শাস্তি চাই। আর যদি কোথাও কেউ লুকিয়ে দেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে তাদেরকেও খুঁজে বের করা হোক। রেজিনগরের তৃণমূল বিধায়ক তথা বহরমপুর-মুর্শিদাবাদ সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান রবিউল আলম চৌধুরী বলেন, অসম এসটিএফের সঙ্গে রাজ্য পুলিস যৌথ অপারেশন চালিয়ে ওই জঙ্গিদের ধরেছে। জেলায় যেখানেই জঙ্গিরা লুকিয়ে থাকবে তাদের অবশ্যই ধরা হবে। তাদের শাস্তি দেওয়া দরকার।