• ‘মমতা’র স্পর্শে ঘর ভেঙেছেন মোমেনা বিবি, আগামী শীতে ঠাঁই পাকা বাড়িতে
    বর্তমান | ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪
  • অগ্নিভ ভৌমিক, কালীগঞ্জ (হাতগাছা): ‘এই নিয়েই খুশি থাকো। আমার যতটুকু সামর্থ্য, সেখান থেকেই দিলাম।’—মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথাটা বেশ মনে ধরেছিল মোমেনা বিবির। বড্ড খুশিও হয়েছিলেন তিনি। সেই খুশিতে বাঁশ-পাটকাঠির ঘরটাই ভেঙে ফেলেছেন। এবার মোমেনা বিবির পাকা বাড়ি হবে। ভিত খোঁড়ার কাজ চলছে। খুঁড়ছেন স্বামী ও ছেলে। দাঁড়িয়ে থেকে তদারকি করছেন মোমেনা। ক’দিনের মধ্যেই ইট গাঁথবেন রাজমিস্ত্রি। 


    বাংলা আবাস প্রকল্পে যোগ্য উপভোক্তাদের অ্যাকাউন্টে টাকার পাঠানোর আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়েছিল নবান্নের সভাঘরে। সেখানে যেসব উপভোক্তারা  ডাক পেয়েছিলেন তাঁদের একজনকালীগঞ্জ ব্লকের হাতগাছার বাসিন্দা মোমেনা বিবি। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী তাঁর হতে পাকাবাড়ি তৈরির অনুমোদনপত্র তুলে দিয়েছিলেন। জীবনে এই প্রথম বাংলার জননেত্রীকে একেবারে সামনাসামনি দেখার সুযোগ পেয়েছিলেন। ‘মমতা’র স্পর্শ পেয়ে বাকরুদ্ধ অবস্থা হয়েছিল তাঁর। ঘুমের ঘোরে চোখ বন্ধ করলে এখনও সেই স্পর্শ অনুভব করেন। ‘আমার কাছে এর চেয়ে আনন্দ আর কিসেই বা থাকতে পারে! মুখ্যমন্ত্রীর ঋণ এ জীবনে শোধ করতে পারব না।’ ঝুপড়ি ঘরের ধ্বংসাবশেষে দাঁড়িয়ে অশ্রুসজল হাতগাছার আটপৌরে বধূ। 


    হাতগাছা পঞ্চায়েতের প্রত্যন্ত এলাকায় সর্ষেখেতের পাশেই মোমেনা বিবির দরমার সেই আস্থানা এখন অতীত। বাংলা আবাস প্রকল্পের প্রথম কিস্তির টাকা ঢুকে গিয়েছে তাঁর অ্যাকাউন্টে। তাতেই শুরু করে দিয়েছেন প্রাথমিক কাজকর্ম। পুরনো ঘরের ধ্বংসস্তূপের পাশেই ভিত গাঁথার খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। বর্তমানে শীতের রাত কাটান ত্রিপলের ছাউনিতে। স্বামী-ছেলেকে নিয়ে সংসার। বড় মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। স্বামী জামাল শেখ মাঠে কাজ করে কোনওরকমে সংসার চালান। ছেলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। তাকে নিয়েই জামাল মাটি খুঁড়ছেন। টাকার অভাবে শ্রমিক ডাকেননি। মোমেনা বিবিও বাপ-বেটার কাজে সাহয্য করছেন। মুখ তুলে ঠোঁটের কোনে সামান্য হাসির রেখা ফুটিয়ে বললেন, ‘আর তো মাত্র ক’টা দিন। সামনের শীতে আমরা পাকা বাড়িতে।’ হাতগাছা পঞ্চায়েতের অরুণ সর্দারও নবান্নে ডাক পেয়েছিলেন।  মুখ্যমন্ত্রীর হাত থেকে বাড়ির তৈরির অনুমোদন পত্র পেয়েছেন। তাঁর পরিবারও বেজায় খুশি। 


    তবে, মোমেনা বিবির বাড়ি পাওয়ার কাহিনিটা একটু অন্যরকম। ২০১৪ সালে কেন্দ্র-রাজ্য যৌথ আবাস প্রকল্পে আবেদন করেছিলেন জামাল শেখ। কিন্তু সমীক্ষার পাকচক্রে সেই আবেদন হারিয়ে যায়। তার পর আবাসে দীর্ঘ বঞ্চনা কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের। শেষে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজ উদ্যোগে বাংলা আবাস প্রকল্প চালু করেন। সেখানেই বাড়ি পাওয়া নিয়ে অনশ্চিয়তা তৈরি হয়েছিল। জামাল বলছিলেন, ‘দু’মাস আগে দিদিকে বলোতে ফোন করে বাড়ির জন্য আবেদন করেছিলাম। এত তাড়াতাড়ি ঘর পাবো ভাবিনি।’ 


    কালীগঞ্জের বিডিও অঞ্জন চৌধুরী বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রীর হাত থেকে আমাদের ব্লকের দু’জন বাড়ি তৈরির শংসাপত্র পেয়েছেন। তাঁদের অ্যাকাউন্টে বাড়ি বানানোর টাকা পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।’কালীগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শেফালী খাতুন বলেন, ‘কেন্দ্র সরকার বাংলার সঙ্গে বঞ্চনা করেছে। সেখানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে মাথার উপর ছাদ পেয়েছেন আমাদের ব্লকের অনেক উপভোক্তা। মোমেনা বিবিও সেই তালিকায়।’ বাড়ি পাওয়া অরুণ সর্দারের কথায়, ‘আমফানে আমাদের মাটির বাড়ি ভেঙে পড়েছিল। দিদিকে বলোতে ফোন করে ঘরের আবেদন করেছিলাম। কাজ হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীকে কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না।’ হাতগাছা পঞ্চায়েতের উপপ্রধান রুমি বিবি মির বলছিলেন, ‘ওঁরা খুব গরীব। ওঁদের ঘরের দরকার ছিল।’ ঘর পেতে মোমেনা বিবি চাঁদের আলো দেখা ঘর ভেঙেছেন। ইটের বাড়িতে গিয়েও হয়তো মমতার স্পর্শ অনুভব করবেন!
  • Link to this news (বর্তমান)