মালদহের পুলিস সুপার প্রদীপ কুমার যাদব বলেন, পুলিস সবরকমভাবে সতর্ক আছে। আমরা নিয়মিত বিএসএফের সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করছি। টহলদারি বাড়ানো হয়েছে। নাকা চেকিং পয়েন্টের সংখ্যাও বৃদ্ধি করা হয়েছে।
পুলিসি প্রহরার পাশাপাশি সক্রিয়তা বাড়িয়েছেন রাজ্য পুলিসের গোয়েন্দারাও। তদন্তে তাঁরা ইতিমধ্যে বাংলায় এবিটি জঙ্গিদের স্লিপার সেলের হদিশ পেয়েছেন বলে খবর। গোয়েন্দাদের অনুমান, মালদহে স্লিপার সেলকে সক্রিয় করে তুলেছে জঙ্গিরা। তাদের উদ্দেশ্য এলাকায় অস্থিরতা তৈরি করা।
এসবের মাঝেই শনিবার সীমান্তবর্তী হবিবপুর থানার কলাইবাড়ি থেকে একটি বাড়িতে হানা দিয়ে প্রায় ৫২টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করেছে বিএসএফ। কেন একটি বাড়িতে এতো মোবাইল রাখা ছিল, তা নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের স্পর্শকাতর জেলাগুলোর মধ্যে মালদহ অন্যতম। এই জেলার দু’দিকে রয়েছে উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা। আরেকদিকে গঙ্গা এবং বিহার ঝাড়খণ্ডের সীমানা। জেলার পশ্চিম দিকে ১৫০ কিলোমিটার লম্বা বাংলাদেশ সীমান্ত।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মালদহ জেলায় ১৫৮.৫ কিলোমিটার অংশে বাংলাদেশের সীমান্ত। যার মধ্যে ৩১.৫৫ কিলোমিটার অংশ উন্মুক্ত। সেখানে কোনও কাঁটাতারের বেড়া নেই। এরমধ্যে কিছুটা নদী সীমান্তও রয়েছে।
বাংলাদেশের সঙ্গে উন্মুক্ত সীমান্তের অধিকাংশই মালদহের হবিবপুর ব্লকের অধীনে। সামান্য কিছু উন্মুক্ত সীমান্ত কালিয়াচক-৩ ব্লকে। এই ১৫৮.৫ কিলোমিটার সীমান্তের মধ্যে কালিয়াচক-৩ ব্লকে ২.২৫ ও হবিবপুর ব্লকে ২৯.৩০ কিলোমিটার উন্মুক্ত সীমান্ত।
তবে কি মালদহ জঙ্গিদের ঘাঁটি হয়ে দাঁড়িয়েছে? গোয়েন্দাদের একাংশের দাবি, বাংলাদেশি জঙ্গি সংগঠন এবিটির তৎপরতা বেড়েছে এখানে। একটা সময় জালনোট কারবারের হাব হয়ে উঠেছিল মালদহের কালিয়াচক। সেভাবে অন্য অপরাধেও হাত পাকাচ্ছে যুবরা।
নোটবন্দির পর থেকে কয়েক বছর জালনোটের কারবার প্রায় বন্ধ ছিল। সম্প্রতি সেই কারবার বেড়ে গিয়েছে। সম্প্রতি কালিয়াচক থেকে পুলিস এবং এসটিএফের সক্রিয়তায় কয়েক কোটি টাকার ভারতীয় জালনোট উদ্ধার হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রত্যেকটি পাঁচশো টাকার জালনোট ছিল ‘এ’ গ্রেডের। এমনকি এখান থেকে কোটি কোটি টাকার ব্রাউন সুগারও উদ্ধার করেছে পুলিস এবং এসটিএফ। কাজেই এসবের নেপথ্যে এবিটি জঙ্গিদের হাত রয়েছে বলেই মনে করছেন গোয়েন্দাদের একাংশ।
কারণ ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের অস্থিরতাকে কাজে লাগিয়েই ওপার থেকে লক্ষ লক্ষ টাকার জালনোট এপারে পাচার হচ্ছে। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, ওপার থেকে টর্চ জ্বালিয়ে সিগন্যাল দিয়ে কাঁটাতারের ওপর দিয়ে ঢিল ছুঁড়ে এপারে পাঠানো হচ্ছে জালনোটের প্যাকেট। এপারে তাদের এজেন্টরা সেই টাকা সংগ্রহ করছে। সুযোগ বুঝে তা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।