প্রবীর কুণ্ডু, কোচবিহার
হাসপাতাল আছে। মুমূর্ষু রোগী আছে। রক্তের প্রয়োজন আছে। নেই শুধু ব্লাড ব্যাঙ্ক! জরুরি প্রয়োজনে রক্ত না-পেয়ে নিরুপায় রোগীর আত্মীয়দের ছুটতে হচ্ছে অন্য হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কে। আর এই সুযোগ নিয়ে রমরমা বেড়েছে দালাল-চক্রেরও। এ সমস্যা কবে নাগাদ মিটবে, জানেন না রোগী বা তাঁদের আত্মীয়-পরিজনেরা। কোচবিহারের তুফানগঞ্জ ও মেখলিগঞ্জ হাসপাতালে ব্লাড ব্যাঙ্ক না-থাকায় ভোগান্তিই রোজনামচা ওই দুই এলাকার মানুষের। রক্তের জন্য তাঁদের ভরসা কোচবিহার মেডিক্যাল কলেজ কিংবা আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতাল।
তুফানগঞ্জ হাসপাতালে ব্লাড ব্যাঙ্কের জন্য জায়গা চিহ্নিত হলেও এখনও অর্থ বরাদ্দ হয়নি। এই হাসপাতালে ২০ ইউনিট রক্ত মজুত রাখার পরিকাঠামো আছে। কিন্তু সেখান থেকেও রোগীরা প্রয়োজন মতো রক্ত পান না বলে অভিযোগ। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ব্লাড ব্যাঙ্ক তৈরির ব্যাপারে বহুদিন থেকে আলোচনা চলছে। পুরুষ বিভাগের উপরের বিল্ডিংয়ে ব্লাড ব্যাঙ্ক তৈরির কথা। ঘরও চিহ্নিত করা হয়েছে। কিন্তু ওই পর্যন্তই!
তুফানগঞ্জের বাসিন্দা সৈকত রক্ষিত বলেন, ‘২০০ শয্যার এই হাসপাতালের উপরে নির্ভর করেন তুফানগঞ্জ, আলিপুরদুয়ার এমনকী পড়শি রাজ্য অসমের রোগীরাও। অথচ, ব্লাড ব্যাঙ্ক না থাকায় চরম বিপাকে পড়েছেন রোগী এবং তাঁদের আত্মীয়েরা। রক্তদান শিবির করে হাসপাতালে রক্ত দিতে চাইলেও তা নেওয়ার পরিকাঠামো নেই।’ তুফানগঞ্জ হাসপাতালের সুপার মৃণালকান্তি অধিকারী বলেন, ‘দফায় দফায় ইঞ্জিনিয়াররা হাসপাতাল পরিদর্শন করেছেন। দ্রুত ব্লাড ব্যাঙ্ক তৈরি হবে।’
ছবিটা একইরকম মেখলিগঞ্জ হাসপাতালেও। সেখানেও ব্লাড ব্যাঙ্ক নেই। বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া এই হাসপাতালের উপরেও বহু মানুষ নির্ভর করেন। রক্তের প্রয়োজনে ধূপগুড়ি, ময়নাগুড়ি কিংবা কোচবিহার ও জলপাইগুড়ি হাসপাতালের উপরে ভরসা করতে হয়। এই হাসপাতালটি ১২০ বেডের।
প্রতিদিন প্রায় তিনশো রোগী আউটডোরে আসেন। তবে রক্ত না-মেলায় চরম বিপাকে পড়তে হচ্ছে রোগীর পরিবারের সদস্যদের। মেখলিগঞ্জ হাসপাতাল থেকে কোচবিহার মেডিক্যাল কলেজের দূরত্ব প্রায় ৯০ কিলোমিটার। মুমূর্ষু রোগীকে রেফার করলেও ঝুঁকি নিয়ে ওই দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয়। মেখলিগঞ্জ হাসপাতালের সুপার তাপসকুমার দাস বলেন, ‘ব্লাড ব্যাঙ্ক তৈরির জন্য একাধিকবার রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।’ মেখলিগঞ্জের বিধায়ক তথা হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান পরেশচন্দ্র অধিকারী বলেন, ‘হাসপাতালে ব্লাড ব্যাঙ্কের খুবই প্রয়োজন। এ ব্যাপারে রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের কাছে আবেদনও জানানো হয়েছে।’
স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, হাসপাতালে প্রসূতির জন্য, কোনও বড় দুর্ঘটনা ঘটলে বা জটিল কোনও অস্ত্রোপচারের জন্য রক্তের প্রয়োজন হয়। কিন্তু ব্লাড ব্যাঙ্ক না-থাকায় সমস্যায় পড়তে হচ্ছে জেলার প্রান্তিক দুই সরকারি হাসপাতালের অসংখ্য রোগীকে। রক্তের প্রয়োজনে ডোনার মিললেও দূরত্বের কারণে তাঁদের অনেকেই হাসপাতালে আসতে রাজি হচ্ছেন না।
আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সক্রিয় হয়ে উঠেছে দালাল-চক্র। কোচবিহার জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুকান্ত বিশ্বাস বলেন, ‘মেখলিগঞ্জ ও তুফানগঞ্জ হাসপাতালে ব্লাড ব্যাঙ্ক নেই। ১০ থেকে ২০ ইউনিট রক্ত মজুত করে কোনও রকমে কাজ চলছে। তবে দু’টি হাসপাতালেই ব্লাড ব্যাঙ্ক তৈরির জন্য রাজ্যের কাছে প্রয়োজনীয় তথ্য পাঠানো হয়েছে।’