গৌতম ধোনি, কৃষ্ণনগর
এক সময়ে বাজার থেকে পাইকারি সবজি নিয়ে নিয়মিত শিয়ালদা যেতেন ব্যবসার জন্য। করোনা কালে চলে যায় সেই কাজ। বাধ্য হয়ে ধারদেনা করে পেট চালানোর দায়ে কিনলেন টোটো। নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জ ব্লকের শিবনিবাস পঞ্চায়েতের বিকাশ দাস (৫৫) তার পর থেকে নিয়মিত টোটোই চালাচ্ছেন। রাজনীতির গণ্ডি স্পর্শ না করা বিকাশের প্রথমবার ভোট ময়দানে আগমন ২০২৩-র পঞ্চায়েত নির্বাচনে। গ্রামের লোকজনের কথাতেই ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন। শুরুতেই বাজিমাত।
নিজের খুড়তুতো ভাই ও তৃণমূল প্রার্থী সমীর দাসকে পরাজিত করে নামের সঙ্গে জুড়লেন পঞ্চায়েত উপপ্রধানের তকমা। বাড়ল দায়িত্ব। অফিস টাইমে পঞ্চায়েতে উপপ্রধান হিসেবে। আর দিনের মতো সেই ভূমিকা শেষ হলেই বেরিয়ে পড়েন টোটো নিয়ে। একেবারে ভিন্ন ভূমিকায়।
শিবনিবাস গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান বিকাশ দাসের এই পরিশ্রমী জীবিন-যাপন দেখে খুশি পঞ্চায়েতের মানুষ। আর বিরোধী দল থেকেও তাঁর বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ নেই। বিকাশের বাড়ি শিবনিবাস শিব মন্দিরের কাছে দাসপাড়ায়। দু’রকম ভূমিকা প্রসঙ্গে বিকাশ বলেন, ‘আগে কাঁচামালের ব্যবসা করতাম। খুড়তুতো ভাইকে হারিয়ে পঞ্চায়েতের উপপ্রধান নির্বাচিত হয়েছি প্রায় দেড় বছর আগে। কিন্তু পেশা ও অভ্যাস ছাড়তে পারিনি।
পঞ্চায়েত থেকে যে ভাতা পাই, তা দিয়ে সংসার চলে না। বড় ছেলে বিয়ে করে আলাদা থাকলেও, কলেজ পড়ুয়া ছোট ছেলের পড়ার খরচ টানতে হয়। তা ছাড়া বাড়িতে স্ত্রী, বৃদ্ধ বাবা মা-ও আছেন। তাঁরা কোনওদিনই আমাকে চুরির শিক্ষা দেননি।’ সৎ পথের রোজগার বলে টোটো চালানোর পেশাও তাঁর কাছে সমান গর্বের। লজ্জাবোধ করেন না। মানুষ তাঁকে যেমন সম্মান দেয়, ঠিক তেমনই যথাযথ সম্মান দেন তিনি।
টোটো চালাতে চালাতে স্থানীয় যাত্রীরা পঞ্চায়েত কাজের কথাও বলেন বিকাশকে। তাঁর কথায়, ‘এগুলো শুনতেই হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের সার্টিফিকেট ইত্যাদির দেওয়ার জন্য প্যাড, সিল ইত্যাদিও টোটোতে রাখতে হয়। টোটো চালিয়ে দিনে চার-পাঁচশো টাকা রোজগার হয়।’ তাঁর দাবি, দলমত নির্বিশেষে অসুস্থ অবস্থায় কাউকে দেখলেই রোগীকে বিনা ভাড়ায় শুধু কৃষ্ণগঞ্জই নয়, পৌঁছে দেন কৃষ্ণনগরের জেলা হাসপাতালেও।
বিজেপির টিকিটে জিতলেও অন্য দলের লোকজনের সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত সম্পর্ক ভালো বলেই জানিয়েছেন। শিবনিবাস পঞ্চায়েত বিজেপি পরিচালিত বোর্ড। সেই পঞ্চায়েতের বিরোধী দলনেতা তৃণমূলের জয়ন্ত ঘোষ বলেন, ‘আমার সঙ্গে ওঁর রাজনৈতিক মতপার্থক্য আছে। কিন্তু উপপ্রধান বিকাশ বেশ ভাল মানুষ। আগের পেশাকে আঁকড়ে রেখেছেন বলে আরও ভালো লাগে। নিপাট ভদ্রলোক।’