• বাল্বের আলোয় ড্রাগন ‘পুষে’ কোটিপতি ইউটিউবার কৃষক
    এই সময় | ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪
  • প্রশান্ত ঘোষ

    কথায় বলে, ‘বুদ্ধি থাকলে রাতকেও দিন করা যায়’। অনেকেই কথাটা বলেন ঠিকই। তবে চলতি সে কথাকেই সত্যি প্রমাণ করেছেন নদিয়ার এক কৃষক। হাজার খানেক বাল্ব লাগিয়েছেন নিজের আট বিঘা জমিতে। রাতে বাল্বের রোশনাইয়ে শীতের মরসুমেও কুয়াশার মধ্যে ফুটছে ড্রাগন ফুল। হচ্ছে ফলও। যা তিনি পুরোটাই শিখেছেন ইউটিউব দেখে! এ ভাবেই গাছকে ‘বোকা’ বানিয়ে কুইন্টাল কুইন্টাল ড্রাগন ফল ফলাচ্ছেন ওই কৃষক।

    অসময়ে এই ফল বিক্রি করে মিলছে মোটা অঙ্কের টাকা। কৃষক জামশেদ মোল্লার উৎপাদিত রসালো, সুস্বাদু ড্রাগন ফল শুধু কল্যাণী নয়, ছড়িয়েছে ভিন রাজ্যে। উচ্ছ্বসিত রাজ্য সরকারের আধিকারিকরাও। কল্যাণীর ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট সৌগত পাত্র বলেন, ‘ওই চাষের খেত পরিদর্শন করি। বিষয়টি অভাবনীয়। শুধুমাত্র বুদ্ধির জেরে ইলেকট্রিক বিলের খরচা দিয়ে অসময়ে কুইন্টাল কুইন্টাল ফল উৎপাদন করে কোটি টাকার ব্যবসা করছেন।’

    কয়েক দিন আগে পর্যন্ত চিন, মালেশিয়া, জাভা, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনামে রমরমা ছিল ড্রাগন ফলের। দেশ কালের বেড়াজল ভেঙে সেই ফল এখন চাষ হচ্ছে বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গের বেশ কিছু জায়গায়। শুধু নামের অভিনবত্ব নয়, স্বাদে-গুণে অতুলনীয় এই ফল। চাহিদা বাড়ছে উত্তরোত্তর। কলকাতার খুব নিকটে নদীয়ার কল্যাণীতে কয়েক বিঘা জমি জুড়ে চাষ হচ্ছে। আম, আপেল, ন্যাসপাতি, বেদানা, লিচু যে কোনও নামজাদা ফলের থেকে ড্রাগনের স্বাদ অনেকটাই বিস্বাদ। কিন্তু খাদ্যগুণে এই ফলকে ‘রাজা’ বলে অভিহিত করছেন বিশেষজ্ঞরা।

    নদিয়ার হরিণঘাটা ব্লকের বামনবেড়িয়া গ্রামে নিজেদের জমিতে ড্রাগন ফল লাগিয়েছেন জামশেদ ও তাঁর বন্ধু অলি উল্লাহ। জামশেদের কথায়, ‘জমি তৈরি করতে বেশ কিছুটা সময় লাগে এবং ড্রাগন গাছ বেড়ে ওঠার জন্য যে কংক্রিটের পিলার, তারের জাল লাগে। মোটা টাকা খরচা হয়। একবার বিনিয়োগ করলেই দু-আড়াই বছর পর থেকে কম করে কুড়ি বছর ফল পাওয়া যায়।’

    গত বছর কমপক্ষে দেড় কোটি টাকার ব্যবসা করেছেন জামশেদরা। এ বছর লাভের অঙ্ক বাড়াতে জামশেদ বাগানে এক হাজার ইলেকট্রিক বাল্ব লাগিয়েছেন, যাতে রাতেও বিজলি বাতির আলোতে গাছে ফুল ফোটে, ফল ধরে। জামশেদের কথায়, ‘এ ভাবে গাছকে বোকা বানানো যায় জানতাম না। ইউটিউব দেখে শিখেছি। বিদ্যুতের আলোয় দিব্যি গাছের ফুল ফুটছে, ফল ধরছে। শীতের সময়ে অনায়াসেই ৩০০-৪০০ টাকা কেজি দরে এই ফল বিক্রি করে মুনাফা তুলছি।’ জামশেদ জানান, এই চাষ অত্যন্ত লাভদায়ক। তাই ব্যবসায়িক লাভ দেখেই এই ফলের চাষ শুরু করেছেন তিনি।

    হরিণঘাটাতে বিপুল পরিমাণ ড্রাগন চাষ নিয়ে খুশি হরিণঘাটা ব্লকের সমষ্ঠি উন্নয়ন আধিকারিক মহাশ্বেতা বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘হরিণঘাটা, নগরউখড়াতে দিন দিন ড্রাগন ফল চাষের প্রবণতা বাড়ছে। কি ভাবে বহুজাতিক সংস্থার মাধ্যমে এই ফল বাইরে রপ্তানি করা যায় তা নিয়ে বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে কথাবার্তা চলছে।’

  • Link to this news (এই সময়)