এই সময়, রায়গঞ্জ: চড়ুইভাতি মানেই দেদার হুল্লোড়। তার সঙ্গে ডিজে বক্সের উৎপাত। ক্রমশ ট্রেন্ড হয়ে ওঠা এই প্রবণতায় লাগাম টেনেছে বন দপ্তর। উত্তর দিনাজপুরের কুলিক পক্ষিনিবাসের পাখি–সহ আশপাশের মানুষদের শান্তি বিঘ্নিত হচ্ছে না পিকনিকে নিষেধাজ্ঞায়। বিকল্প স্থানেও অনেকটা নীরবেই জনতা পিকনিকের সারাবেলা কাটাচ্ছে।
এক সময়ে শীতের মরশুমে প্রচুর মানুষ পিকনিক স্পট হিসেবে কুলিক বনাঞ্চলে আসত। রান্না-খাওয়া থেকে শুরু করে ডিজে বাজিয়ে হই-হুল্লোড় চলত। থার্মোকল-প্লাস্টিকের থালা-গ্লাস থেকে শুরু করে নানা আবর্জনায় ভরে উঠত এলাকা।
ডিজে-র শব্দে পক্ষিনিবাসে থাকা পরিযায়ী পাখি থেকে অন্যান্য প্রাণীর সমস্যা হতো। প্রায় ১০ বছর আগে বন দপ্তর এ বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। পক্ষিনিবাসের পিছনে অবস্থিত মণিপাড়ায় একটি ‘পিকনিক স্পট’ চিহ্নিত করা হয়েছিল। এখন অবশ্য মণিপাড়া, আব্দুলঘাটা, শেয়ালমণি থেকে শুরু করে কুলিক বনাঞ্চলের সব জায়গাতেই পিকনিকে নিষেধাজ্ঞা জারি করা রয়েছে।
এ বারেও নোটিস লটকে পিকনিক রুখতে পাহারায় রয়েছেন বনকর্মীরা। বিকল্প হিসেবে বছর তিনেক ধরে কুলিক নদীর বাঁধের ধারে চড়ুইভাতি হচ্ছে। এটা কুলিক নদী ও বনাঞ্চল থেকে কিছুটা দূরে অবস্থিত। সেখানেও বনকর্মীদের আনাগোনা থাকে বলে নিয়ন্ত্রিত থাকে উচ্ছ্বাস। ডিজে বক্স বাজিয়ে হুল্লোড় নৈব নৈব চ।
এটাই এখন রায়গঞ্জের মূল পিকনিক স্পট। স্থানীয় বাসিন্দা রাজু ঘোষ বলেন, ‘আগে এখানে পিকনিকে এসে মানুষজন আবর্জনা ফেলে রেখে যেত। ডিজে-র আওয়াজে অতিষ্ঠ হয়ে পড়তাম। এখন সেই উৎপাত থেকে রেহাই মিলেছে।’
পরিবেশবিদ তথা পশুপ্রেমী গৌতম তান্তিয়া বলেন, ‘বহু বছর ধরে পিকনিকে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে ঠিকই। তবে যে সময়ে পরিযায়ী পাখি চলে যায়, সেই সময়ে নন–ফরেস্ট এলাকায় শর্তসাপেক্ষে ও বনকর্মীদের নজরদারিতে অনুমতি দেওয়া যেতেই পারে।’
যদিও এ বিষয়ে বিভাগীয় বন আধিকারিক ভূপেন বিশ্বকর্মার বক্তব্য, ‘সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী কুলিক পক্ষিনিবাস ও তার বনাঞ্চল গুলিতে পিকনিকে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। বনাঞ্চলের ভারসাম্য যাতে বজায় থাকে, সেটা চিন্তা করেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে মাইকিং করা হয়েছে, বিভিন্ন জায়গায় নোটিস বোর্ড লাগানো আছে। এর পাশাপাশি আমরা নজরদারি চালাচ্ছি।’